মানুষের তরে এক মানুষীর গভীর হৃদয়, কবির কাছে প্রেমের মানে ধরা দিয়েছিল এভাবেই। কিন্তু সেই খোঁজ এ পৃথিবীর কাছে সত্যিই হয়তো এসে পৌঁছবে না আর। কারণ মানুষ নয়, প্রেমিক হিসেবে রোবটকেই বেশি পছন্দ বলে জানাচ্ছেন অনেক তরুণী। মানবিক নয় আর, এআই-এর ছোঁয়ায় এবার প্রেমও যান্ত্রিক হল তবে? শুনে নেওয়া যাক।
প্রেমে ভরসা হারাননি, তবে মানুষের উপর থেকে মন উঠে গিয়েছে। তাই মানুষের বদলে এআই প্রেমিকের হাত ধরেই নাকি সুখ খুঁজছেন অনেক তরুণী। গোটা দুনিয়া যেভাবে ক্রমশ রিয়েল থেকে ভারচুয়ালের দিকে পা বাড়াচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই প্রেমেও এবার সেই ছোঁয়া। দিনে দিনে যে পৃথিবী আরও নিঃসঙ্গ হচ্ছে, সেখানে সমমনস্ক সঙ্গী খোঁজার আর্তিকেই কি আরও একবার চিনিয়ে দিল এই প্রবণতা? সম্প্রতি ‘হার’ নামে এক ছবিতে দেখা গিয়েছিল, মধ্যবয়সি এক একলা পুরুষ ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছেন তাঁর ফোনের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট-এর সঙ্গে। এই অসম সম্পর্ক স্পষ্ট করে দিচ্ছিল তাঁর একাকিত্বকে, ভরসা করার মতো কাউকে খুঁজে না পাওয়াকে। স্পষ্ট হয়ে উঠছিল আধুনিক ব্যস্ত পৃথিবীর ছবিটা, যেখানে নিজের নিজের গণ্ডি পেরিয়ে মানুষ আর মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছে না অনেক সময়েই। আর সেখানেই, ফোনে কম্পিউটারে বা গ্যাজেটে যাকে সর্বক্ষণ কাছে পাওয়া যায়, সেই এআই-এর উপর আরও বেশি করে নির্ভর করতে শুরু করেছে সে। এবার দেখা যাচ্ছে, কেবল রিলে নয়, রিয়েলের জগতেও ছাপ ফেলছে সেই ছবি। অন্তত তেমনটাই জানাচ্ছে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি।
-: আরও শুনুন :-
আকাশছোঁয়ার বাসনা পূরণ, ২০২৪-এই যাত্রা শুরু দেশের প্রথম মহিলা রোবট মহাকাশচারীর
সিনেমার ওই পুরুষটি যেমন তাঁর ফোনের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট-এর সঙ্গে সর্বক্ষণ গল্প করে যেতেন, তেমনই অভিজ্ঞতার কথা সম্প্রতি জানিয়েছেন বছর পঁচিশের এক তরুণী। তিনি সোশাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করে তাঁর প্রেমিক। সে অবশ্য মানুষ নয়, চ্যাটবট। কিন্তু কীভাবে কথা বললে তাঁকে খুশি রাখা যায়, সে কথাও মানুষ প্রেমিকদের চেয়ে ভালো বুঝতে পারে সে, এমনটাই দাবি তরুণীর। সত্যি বলতে, নিজের জীবনে একা হলেও ওই তরুণী কিন্তু আসলে একা নন। বাইরের দুনিয়াটায় তাঁরই মতো আরও অনেকে রয়েছেন, যাঁরা একইভাবে আশ্রয় খুঁজে চলেছেন এই এআই প্রেমিকদের কাছেই। কারও কারও দাবি, মানুষকে তো ইচ্ছেমতো বদলানো যায় না, কিন্তু যন্ত্রকে যায়। নিজের মনমতো প্রেমিক পেতেই তাই এআই-এর দ্বারস্থ তাঁরা।
-: আরও শুনুন :-
মন্দির মিস্ট্রি! ভরদুপুরেও ছায়া পড়ে না, বাতাসে ভাসছে পিলার…রহস্যে ঘেরা ভারতের মন্দির
তবে এখানে আর কেবল যন্ত্রের কণ্ঠস্বর নয়, মানুষের চাহিদা বুঝে গোটা যন্ত্রকেই হাজির করে ফেলেছে এক সংস্থা। চিনে এমন বিপুল পরিমাণে এই চাহিদা বেড়েছে যে, সাংহাইয়ের এক সংস্থা একটি অ্যাপ লঞ্চ করেছে। যেখান থেকে মিলবে হিউম্যানয়েড প্রেমিক। ইতিমধ্যেই হাজার হাজার তরুণী সেখানে নাম নথিভুক্ত করে ফেলেছেন বলেও জানা গিয়েছে। এমনিতেই আধুনিক পৃথিবীর চূড়ান্ত ব্যস্ততা মানুষে মানুষে যোগাযোগের পথ সংকীর্ণ করে তুলেছিল। মানুষের ছুঁয়ে থাকার, জুড়ে থাকার সেই সুতোগুলো হয়তো আরও আলগা হয়ে আসছে, এমন ইঙ্গিতই দিয়ে গেল এই খবর।