ট্রেনের সফর আর চায়ের যাত্রা প্রায় সমার্থক। অনেকেরই মনে পড়বে উত্তমকুমার অভিনীত সত্যজিৎ রায় পরিচালিত নায়ক চলচ্চিত্রের কথা। নায়ক অরিন্দম, নেমেছিলেন একটি নির্জন স্টেশনে চা খেতে। ভারতীয়দের সঙ্গে চায়ের যে ওতপ্রোত সংযোগ, সে তৈরির নেপথ্যে কিন্তু রয়েছেন ব্রিটিশরা। কীভাবে বাঙালির জীবনে চা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেল, সেই গল্প শুনে নিই।
এক কাপ চা না হলে কি আর ভারতবাসীর ঘুম ভাঙে! আজ যা প্রতিদিনের অভ্যেস হয়ে উঠেছে, একদিন কিন্তু এমনটা ছিল না। ভারতবাসীকে চায়ের নেশা ধরিয়েছিল ব্রিটিশরা। তাও কিন্তু একদিনে সম্ভব হয়নি। শরবত, ডাবের জল ছেড়ে চায়ের কাপ মুখে তোলাতে বেশ ভালোই কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল ইংরেজ বাহাদুরকে।
টুক করে যদি ১৮৬১ সালে ফিরে যাই তো দেখব, কলকাতায় বন্দরে নামল চায়ের পেটি। বিক্রি বাট্টাও শুরু হল। কিন্তু আমদানির তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা নগণ্য। মূলত অ্যাংলো সমাজের কিছু মানুষ, ব্রিটিশ চাকুরে কিছু বাবু, আর কিছু অভিজাত পরিবার। এই ছিল সাকুল্যে ক্রেতা। সেই সময় চিনে পটে আলাদা করে, চা, দুধ, চিনি পরিবেশন হতো। দুধ, চিনি মিশিয়ে চা খাওয়ার চল ছিল বেশি।
আরও শুনুন: মাস্কে ঢাকা সবার মুখ, পরিচিতকে চিনবেন কী করে?
ভাইসরয় লর্ড কার্জন মাঝে চা খাওয়ার উৎসাহ তৈরির জন্য ভারতের নানা অঞ্চলে চা পানের বন্দোবস্ত করেছিলেন। কিন্তু তিন চার বছরের চেষ্টাতেও সেই উদ্যোগ বিশেষ সফল হয়নি। চায়ের থেকে শরবত খাওয়ার আগ্রহ ছিল অনেক বেশি।
কার্জন আনলেন, ‘চা চেস বিল’। যা হোক করে চা খাওয়ানর নেশা ধরাতে হবে, এই ছিল উদ্দেশ্য। সেই সময় রাস্তায় রাস্তায় দোকান করে শুরু হল ফ্রিতে চা খাওয়ানো। বিনে পয়সায় যত খুশি চা খান, কোনও অসুবিধে নেই। এই ছিল অফার। এরপর চা-পান ছড়িয়ে দেওয়া হল ভারতীয় রেলে। হাওড়া স্টেশনে বিনে পয়সায় খাওয়ানো হতো, কাপের পর কাপ চা। চা খেলে সেই সঙ্গে খুব যৎসামান্য দামে কেনাও যেত, এক প্যাকেট চা। শুধু ফ্রিতে চা খাওয়ানো নয়, কীভাবে ভালো চা তৈরি করতে হয়, তাও হাতে হাতে করে দেখিয়ে দেওয়া হত। চা পানের উপকারিতা বিষয়েও নানাবিধ প্রচার করা হতো। এইভাবে বেশ অনেকটা সময় কাটল, চায়ের প্রতি কিছু মানুষের ভালোবাসা তৈরি হলেও তখনও ভারতে উৎপাদিত চায়ের নব্বই শতাংশ বিদেশেই রপ্তানি হতো।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।