নামে সমাধিসৌধ। কিন্তু সত্যিই কি তাজমহলে রয়েছে বেগম মমতাজ মহলের সেই সমাধিটি? এই সমাধিমন্দিরে কি সত্যিই শায়িত রয়েছেন সম্রাট শাহজাহানের প্রিয়তমা সম্রাজ্ঞী? নাকি তাজমহল তো দূর অস্ত, আসলে আগ্রার কোনওখানেই নেই তাঁর সমাধি? এমন বিতর্কের প্রেক্ষিতে কী বলছে ইতিহাস? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিতর্ক যেন তাজমহলের নাছোড় সঙ্গী। তাজমহলের নিচে কোনও কালে হিন্দু মন্দির ছিল কি না, এই নিয়ে তরজা চলছেই। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। তাজমহলের নিচে আদৌ সমাধিও আছে কি না, বিতর্ক রয়েছে তা নিয়েও। ভাবছেন, সে আবার কী কথা? সকলেই তো জানেন, নিজের প্রিয়তমা বেগম মমতাজ মহলের স্মৃতিতে এই অপরূপ সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান। হ্যাঁ, সে কথার পাথুরে প্রমাণ রয়েছে বইকি। কিন্তু সেই সৌধের নিচে বেগমকে আদতে সমাধিস্থ করা হয়েছিল কি না, প্রশ্ন তা নিয়েই। আসুন, তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: শাহজাহান একা নন, ‘তাজমহল’ বানিয়েছিলেন আরও অনেকেই! কোথায় কোথায় রয়েছে সেগুলি?
আর্জুমন্দ বানু তথা মমতাজ মহল-ই ছিলেন শাহজাহানের সবসময়ের সঙ্গী। কেবল রাজপ্রাসাদ নয়, যুদ্ধশিবিরেও সম্রাটের হাত ছাড়েননি তাঁর এই প্রিয়তমা বেগম। কিন্তু শাহজাহান দিল্লির মসনদে বসার মাত্র তিন বছর পর, ১৬৩১ সালে ছিঁড়ে যায় সে বাঁধন। চতুর্দশ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে অকালে মৃত্যু হয় মমতাজের। ইতিহাস জানায়, দিল্লি কিংবা আগ্রা নয়, বেগম মমতাজ মহলের মৃত্যু হয়েছিল আগ্রার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত বুরহানপুরে। শত্রুদের আক্রমণ ঠেকাতে সম্রাটের তখন আস্তানা বুরহানপুরে তাপ্তি নদীর তীরে অবস্থিত শাহি কেল্লা। আর মধ্যপ্রদেশের এই শান্ত শহরটিতেই মমতাজের সমাধি রয়েছে বলে দাবি করে থাকেন অনেকে।
আরও শুনুন: শত্রুদের চোখে ধুলো দিতে লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল আস্ত তাজমহল, কীভাবে জানেন?
কিন্তু কী কারণ রয়েছে এহেন দাবির পিছনে? আসলে সেই সময়ে বুরহানপুরের শাহি কেল্লা থেকে কিছু দূরে জায়নাবাদের আহুখানার বরাদরিতে মমতাজকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। কেউ কেউ বলেন, নানারকম ভেষজ উপাদান দিয়ে মৃতদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, যাতে বেগমের দেহ রাজধানীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। অনেকের মতে, এখানে মাস ছয়েক ছিল বেগমের সমাধি। কিন্তু আগ্রায় ফিরে তাজমহল নির্মাণের পরিকল্পনা করেন সম্রাট শাহজাহান। তাই মৃতদেহ বুরহানপুর থেকে আগ্রায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলেই জানিয়েছেন একাধিক ঐতিহাসিক। তাঁদের মতে, তাজমহল চত্বরে ফের কবর খুঁড়ে সেখানেই রাখা হয়েছিল বেগমকে। আর তাজমহলের নির্মাণকার্য শেষ হলে প্রায় বারো বছর পর তাঁকে অন্তিম সমাধি দেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
আর গোল বেধেছে এখানেই। বুরহানপুর থেকে একটি শোভাযাত্রা যে আগ্রায় ফিরেছিল, সে কথায় তেমন দ্বিমত নেই কারও। কিন্তু তার সঙ্গে কি আদৌ ফিরেছিল মমতাজের দেহাবশেষ? কারও কারও মতে, বেগমের শবদেহ রয়ে গিয়েছিল ওই সমাধিতেই। আগ্রায় যা নিয়ে আসা হয়েছিল, তা কেবল প্রতীকী শবাধার। আবার কোনও কোনও ইতিহাসবিদের মতে, দীর্ঘদিন সমাধিস্থ থাকার ফলে প্রাকৃতিক নিয়মেই পচন ধরে মাটিতে মিশে গিয়েছিল দেহ, যা আর তুলে আনা সম্ভব ছিল না। তবে বেগমের কঙ্কাল কিংবা হাড় আগ্রায় নিয়ে আসা হয়েছিল, এমন কথাও বলে থাকেন অনেকে।
আগ্রায় নিয়ে আসা শবাধারটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করা ছিল বলে সেকালেও এই দ্বন্দ্ব জারি ছিলই। যে রহস্য আর কাটবে না কোনও দিনই। কেবল তাজমহলের সৌন্দর্যের মতোই, তাকে ঘিরে রয়ে যাবে এই ধোঁয়াশাও।