বারমুডা ট্যায়াঙ্গেলের কথা তো সকলেই শুনেছেন। আজও সমস্ত বিজ্ঞানী, গবেষকদের কাছে এ যেন রহস্য। আটলান্টিক মহাসাগরের ওই রহস্যজনক জায়গায় কত জাহাজ ও উড়োজাহাজ যে হারিয়ে গিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। অনেকেই একে ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেলও বলে থাকে এই কারণে। তবে এই শয়তানের ত্রিভুজ দেখতে অত দূরে না গেলেও হবে। ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া যেতে হবে অরুণাচল প্রদেশে। কী রয়েছে সেখানে, আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অত বিশাল না হলেও এ দেশেও রয়েছে ছোটখাটো একটি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। যেখানে একবার গেলে কেউ ফেরে না। হারিয়ে যায় বিমান। অরুণাচল প্রদেশের কাছে মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া ছাংলাংয়ে রয়েছে তেমনই একটি হ্রদ।
আদতে নাম নাওয়াং হ্রদ। তবে স্থানীয়রা বলে থাকেন, ‘দ্য লেক অব নো রিটার্ন’। আজ অবধি এই হ্রদ থেকে বেঁচে ফেরেননি যে কেউ! তার থেকেই ওই নাম। অরুণাচল প্রদেশের পানাসু পাস, অনেকে আবার একে ‘দ্য হেল পাস’ ও বলে থাকেন। সেই পানাসু পাস সংলগ্ন সিটওয়েস রোডের কাছেই রয়েছে ১.৪ কিলোমিটার বিস্তৃত এই হ্রদ। যেখানে বসবাস তাংসা নামে এক আদিবাসী উপজাতির।
আশপাশের অসম্ভব সৌন্দর্য, সবকিছুকে উপেক্ষা করে এ দ্বীপকে ঘিরে থাকে রহস্যের গন্ধটা। হবে না-ই বা কেন? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে কম রহস্যজনক ঘটনা ঘটেছে এই দ্বীপকে কেন্দ্র করে। নানা ধরেনর ভৌতিক ঘটনা লেগেই থাকে যেন।
আরও শুনুন: রাত্রিযাপনে খরচ নেই এক পয়সা, তবু কেউ থাকতে নারাজ এই হোটেলে! কেন জানেন?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেশ কিছু যুদ্ধবিমান এই হ্রদের জলে জরুরি অবতরণের চেষ্টা করে। কিন্তু ফল হয় ভয়াবহ। সেই সব বিমানগুলোর আর খোঁজ মেলেনি। আরও একটা গল্প রয়েছে এই হ্রদকে ঘিরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েই একদল জাপানি সেনা পথ হারিয়ে এই হ্রদ সংলগ্ন এলাকায় চলে এসেছিল। তবে ফেরা হয়নি তাঁদেরও। শোনা যায়, মারণ ম্যালেরিয়ায় ধরে তাঁদের। ওখানেই মারা যান তাঁরা। ১৯৪২-৪৩ নাগাদ এক দল সৈন্য নাকি এখানে এসে চোরাবালিতে পড়ে হারিয়ে যায়। একের পর এক ঘটনায় ক্রমে সন্দেহটা পাল্টাতে থাকে বিশ্বাসে। এ হ্রদ যে কেবল রহস্যজনকই নয়, অভিশপ্তও বিশ্বাস করতে শুরু করে স্থানীয়রা।
আরও শুনুন: ভারতের দীর্ঘতম ট্রেন-রুট, ডিব্রুগড় থেকে কন্যাকুমারী- সফর হবে এক ট্রেনেই
কথিত আছে, অনেক অনেক বছর আগে একবার নাকি এই হ্রদ থেকে একটা বিশাল আকারের মাছ শিকার করেন গ্রামবাসীরা। সেই মাছ খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় গ্রামের সকলকে। শুধু বাদ পড়েন এক বৃদ্ধা ও তাঁর নাতনি। এই ঘটনায় ওই হ্রদের দেবতা বেজায় অখুশি হন। গোটা গ্রাম ডুবে যায় হ্রদের জলে। বেঁচে যান শুধু বৃদ্ধা আর তাঁর নাতনি। সে রাতে নাকি খোদ হ্রদের দেবতা এসে তাঁদের গ্রাম ছেড়ে পালানোর নির্দেশ দেন। সেই থেকেই এই দ্বীপকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের ভয়ের গল্প বাতাসে ছড়িয়ে আছে।
তবে সেই রহস্য আর ভয়ই আজ এই জায়গার ইউএসপি। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় পর্যটনস্থল হয়ে উঠেছে এই ‘দ্যা লেক অব নো রিটার্ন’। ভারত এবং মায়ানমার থেকে তো বটেই, দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকেরা ছুটে আসেন ভারতের একখণ্ড বারমুডা ট্রায়েঙ্গল দেখবেন বলে। পর্যটন বাড়লেও আজও এর কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি বিশেষজ্ঞেরা। সব মিলিয়ে আজও অপার রহস্য এই আশ্চর্য হ্রদ।