ভেসে আসছে গান। কিন্তু কেউ কোত্থাও নেই। না, রেকর্ড প্লেয়ার বা রেডিও চলছে, তেমনটাও নয়। এ যেন ভৌতিক কাণ্ড। কিন্তু এ দেশের একটি সেতুর সামনে দাঁড়ালেই মানুষের কানে ভেসে আসে সব অদ্ভুদ সুর। তবে কি মাঝেসাঝে গুনগুন করে ওঠে ৮৩ বছরের সেই বৃদ্ধ সেতুই? এ কেমন রহস্য? কোথায় ঘটে এমন ঘটনা রোজ রোজ? শুনে নিন।
কখনও মৃদু, কখনও বা জোরে জোরে। ভেসে আসে সুর। ব্রিজের পাশে কিংবা সমুদ্র উপকূলে দাঁড়িয়েও শোনা যায় সেই শব্দ। বাসিন্দারা কেউ কেউ ভয় পান শুনে, চমকে ওঠেন। কেউ আবার বেশ পছন্দ করেন ওই শব্দ। বিরক্ত হওয়ার মানুষও কম নেই ওই তল্লাটে। তবে গান থামে না। কে গায় ওই গান সময়ে অসময়ে?
সানফ্রান্সিসকো শহরের অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান গোল্ডেন গেট ব্রিজ। পর্যটকদের কাছে কম জনপ্রিয় নয় জায়গাখানা। কিন্তু সময়ে অসময়ে ওই অদ্ভুত সুর মাঝেমধ্যে ভয় পাইয়ে দেয় বইকি। ঠিকই ধরেছেন, এই গান ভাঁজে ৮৩ বছরের পুরনো ওই সেতুই।
অবাক হচ্ছেন? মানুষ গান গায়। পাখিও গান গায়, তাই বলে কংক্রিটের ব্রিজ! এ যেন অবিশ্বাস্য। তা কত অবিশ্বাস্য কিছুই তো ঘটে যায় আশপাশে প্রতিদিন। যার ব্যাখ্যা খোঁজা কঠিন হয়ে পড়ে আমাদের জন্য। এ-ও যেন তাই। ওই সুর পাল্টে পাল্টে যায় সময়ে সময়ে। কখনও তাতে বিষাদের ছোঁয়া, কখনও বা প্রার্থনার ঢং, অবাক হয়ে যান পর্যটকেরা। বহু দূর পর্যন্ত ভেসে যায় সেই সুর।
আরও শুনুন: মশলা নয়, বদলে মাটিই স্বাদ আনছে খাবারে! কী গুণ রয়েছে এই মাটিতে?
ঠিকই ধরেছেন, ওই মিউজিকাল স্বর ভেসে আসে ব্রিজ আর হাওয়ার যুগলবন্দিতেই। প্রচণ্ড বাতাসেও যাতে ব্রিজটি খুব বেশি না নড়ে, সে জন্য প্রথম থেকেই এরোডায়নামিক করে তৈরি করা হয়েছিল সেতুটিকে। পাশাপাশি সেতুটির হ্যান্ডরেল পাল্টে স্ল্যাট নামক একধরণের জিনিস ব্যবহার করেছেন তাঁরা। সরু এবং পাতলা পাত জুড়ে জুড়ে জানলার খড়খড়ি যেমন হয়, স্ল্যাট ব্যাপারটা অনেকটা ঠিক তেমনই। ওর মধ্যে দিয়ে বাতাস যাতে ভাল করে চলাফেরা করতে পারে তাই জন্যই এই ব্যবস্থা। আর সেই স্ল্যাটের মাধ্যমে বাতাস চলাফেরা করার সময়েই অদ্ভুত সুরে গান গেয়ে ওঠে ব্রিজ। বাতাসের গতির উপর ভিত্তি করে পাল্টে পাল্টে যায় সুরও। ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সেতুটিকে সুরক্ষিত করতেই এই নতুন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: রাজনীতির শুধু রং নয়, গন্ধও ছিল এককালে! পারফিউমের এমন ব্যবহার কোথায় হত জানেন?
স্থানীয় বাসিন্দারা তো এই শব্দে মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। তবে পর্যটকদের কাছে কিন্তু এই শব্দ আজও রহস্য। কোথা থেকে ভেসে আসে এই সুর, কে বাজায় ভেবে কুলকিনারা পান না তাঁরা। অস্ট্রেলিয়ায় ডিডগেরিডু নামে এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র রয়েছে। অনেকেই সেই বায়ু নিয়ন্ত্রিত বাদ্যযন্ত্রটির সঙ্গে মিল খুঁজে পান এই সেতু-সঙ্গীতের। নিঃস্তব্ধতা খান খান করে হঠাৎ করে বেজে ওঠে সেতুর গান। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা কিন্তু বেশ গায়ে কাঁটা দেওয়া, কী বলুন!