ডিজিটাল বিশ্বের একটি অন্যতম পরিচিত শব্দ ক্রেডিট কার্ড। মানিব্যাগ আলো করে থাকা এই কার্ডটি সঙ্গে থাকলে আপনি রাজা! কিনতে পারেন যা খুশি তাই। পরে অবশ্য সুদে-আসলে সেই টাকা ফেরৎ দেওয়ার হ্যাপাও থাকে। তবে বর্তমান পৃথিবীতে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে এই ক্রেডিট কার্ড যে অপরিহার্য একটা ব্যাপার, তা কিন্তু মানতেই হবে। তা এই ক্রেডিট কার্ডের গোড়ার কথা জানেন? আসুন, শুনে নিই।
ক্রমশ ক্যাশলেস বা নগদহীন অর্থনীতির দিকে এগোচ্ছে আমরা। এক ক্লিকেই টাকা পৌঁছে যাচ্ছে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। দোকান হোক বা বাজার, পকটে টাকার বান্ডিল নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না আর কোথাওই। পকেট ভর্তি নানান কার্ড, আর সেখানেই রয়েছে আলিবাবার গুপ্তধন। সেই কার্ড ছোঁয়ালেই হয়ে যায় ম্যাজিক।
আপনার টাকা থাকুক বা না থাকুক, আপনার মনোবাঞ্ছা পূরণে সব সময়েই আপনার পাশে রয়েছে আপনার ব্যাঙ্ক। কী ভাবে?
ওই যে আপনার পকেটের একরত্তি কার্ডখানা। ওটি পকেটে থাকলে আপনার হাতের মুঠোয় দুনিয়া। আপনার ক্যাশবাক্স খালি হলেও আপনার হাতের কাছে সবসময় টাকার জোগান দিতে হাজির এই ক্রেডিট কার্ড। না, এমনি এমনি নয়, ঋণ হিসেবে আপনাকে ওই টাকা সরবরাহ করবে ব্যাঙ্ক। যা পরে সুদ-সহ ব্যাঙ্ককে ফিরিয়ে দিলেই হল।
ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রমশ অতিপ্রয়োজনীয় জিনিস হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই ক্রেডিট কার্ট। জানেন, কীভাবে আবিষ্কার হয়েছিল এই কার্ডের। ভারতেই বা কবে প্রথম চালু হয়েছিল এই কার্ড। সেই সমস্ত গল্পই বলব আপনাদের।
আরও শুনুন: যত্রতত্র ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে নেট ব্যাঙ্কিং! কী কী বিপদ হতে পারে? সতর্ক করল SBI
এই ক্রেডিট কার্ডের পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯২৮ সালের দিকে। না, সেটা অবশ্য এখনকার ক্রেডিট কার্ডের মতো ছিল না। বরং ছিল দ্য চারগা প্লেট নামক এরধরনের আয়তকার ধাতব প্লেট। ১৯৩৬ সালে বাজারে আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে সেটি। বড় বড় ব্যবসায়ীরা তাঁদের বিশ্বস্ত খদ্দেরকে দিতেন ওই কার্ড।
তবে ১৯৫০ সালে লেনদেনের দুনিয়ায় ঘটে যায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ডাইনার্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের এই দুই প্রতিষ্ঠাতা রালফ স্নাইডার এবং ফ্রাঙ্ক ম্যাকনামারা বাজারে নিয়ে এলেন নতুন একটি কার্ড। যার নাম চার্জ কার্ড। যে কোনও জায়গাতেই অর্থ পরিশোধ করা যেত সেই কার্ডটির মাধ্যমে।
১৯৫৮ সালে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকা বাজারে নিয়ে এল আধুনিক ক্রেডিট কার্ড। ব্যাঙ্কআমেরিকার্ড নামে সেই কার্ডটি বিশ্বের সব জায়গায় কাজে লাগানো যেত। তখনও ব্যাঙ্কআমেরিকার্ডকে টেক্কা দেওয়ার মতো বাজারে দ্বিতীয় কেউ ছিল না। আর সেই জায়গাটাই ধরার চেষ্টা করল মাস্টার চার্জ নামে একটি কার্ড। বর্তমানে মাস্টার কার্ড শব্দটি কিন্তু বেশ পরিচিত। সেই মাস্টার চার্জ কার্ডই কিন্তু আজকের মাস্টার কার্ড। এরই মধ্যে আবার ব্যাঙ্ক অব আমেরিকা নিজেদের ক্রেডিট কার্ডটিকে আরও পরিমার্জন করে বাজারে নিয়ে এল। বদলে ফেলা হল নামও। ব্যাঙ্কআমেরিকার্ড আর নয়, নতুন কার্ডের নাম রাখা হল ‘ভিসা’। তার পর থেকে নিজেকে আরও উন্নত করতে করতে এগিয়েছে এই ক্রেডিট কার্ড। তার শরীরে লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। আশির দশকে তাতে সংযোজিত হল ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ। নব্বইয়ে আরও বদলে সেই কার্ডে ঢুকল ইএমভি চিপ টেকনোলজি। গ্রাহকদের চাহিদা ও প্রয়োজন বুঝে পরবর্তীকালে আরও বদল এসেছে ক্রেডিট কার্ডে। তার সঙ্গে মাথায় রাখা হয়েছে নিরাপত্তার ব্যাপারটিও।
আরও শুনুন: এই নম্বরগুলি থেকে ফোন এলে বিপজ্জনক, গ্রাহকদের সতর্ক করল SBI
এ তো গেল বিশ্বের কথা। ভারতে প্রথম ক্রেডিট কার্ড কিন্তু এসেছিল সিটি ব্যাঙ্কের হাত ধরে। ১৯৬৯ সালে সিটি ব্যাঙ্ক ভারতে আনল ডাইনার্স ক্লাব কার্ড। তবে তা জনপ্রিয় হয়েছিল আরও পরে, ১৯৮৫ সাল নাগাদ। সে বছর অন্ধ্র ব্যাঙ্ক শুরু করল ভারতে প্রথম নিজস্ব ক্রেডিট কার্ড । তাদের দেখানো পথে হেঁটেছিল সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, বিশ্বব্যাঙ্ক এবং ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াও। তারাও বাজারে নিয়ে আসে সেন্ট্রাল কার্ড। পিছিয়ে ছিল না ব্যাঙ্ক অব বরোদা ও এলাহাবাদ ব্যাঙ্কও। আর সেই থেকেই ভারতীয় বাজারে ডেবিট কার্ডের পাশাপাশি রমরমা শুরু হল ক্রেডিট কার্ডের। ২০১৭ সালের পর তো আকাশ ছোঁয় সেই চাহিদা।
বাজার ধরতে ও গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়াতে পরবর্তীকালে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে এই ক্রেডিট কার্ডের সুবিধাকে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রিওয়ার্ড পয়েন্ট অবং অন্যান্য সব আকর্ষণীয় অফার। ই-কমার্স সেক্টরগুলোও ক্রেডিট কার্ডের সঙ্গে জোট বেঁধে নিয়ে আসছে দারুণ দারুণ সব অফার এবং সুবিধা। সব মিলিয়ে বর্তমান ডিজিটাল বিশ্বে ক্রেডিট কার্ড যে ক্রমশই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে, তা তো বলাই বাহুল্য।