নতুন বছরের শুরুতেই ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপাল। হতাহতের সংখ্যা শতাধিক। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও ভয়ংকর বিপর্যয় গ্রাস করেছে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা। তার মধ্যে সবথেকে ভয়ঙ্কর বোধহয় একটিই। তাতে প্রাণ গিয়েছিল প্রায় ৮৩০,০০০ মানুষের। কোন ভূমিকম্পের কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মৃতের সংখ্যা ৮ লক্ষ ৩০ হাজার। আহত আরও বেশি। নেপথ্যে স্রেফ একটা বিপর্যয়, ভূমিকম্প। একইসঙ্গে এত মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া এই দুর্যোগকে ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম বললে বোধহয় ভুল হয় না। অথচ এই বিপর্যয় এমন একটা সময়ের, যখন বিশ্বের মোট জনসংখ্যা বর্তমানের ৫%-ও ছিল না।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। কথা বলছি চিনের এক ভয়াবহ ভূমিকম্প সম্পর্কে। ১৫৫৬ সালে যে দুর্যোগ তছনছ করে দিয়েছিল গোটা বিশ্বের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি। সেকালে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার লেশমাত্র ছিল না। কাজেই ভূমিকম্পের খবর অন্যত্র পৌঁছানোর সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। বর্তমানে এই ধরনের পরিস্থিতি হলে এগিয়ে আসে প্রতিবেশী দেশগুলি, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় রাষ্ট্রসংঘও। সেইসময় এসব কোথায় কী! তাই বিপর্যয়ের মাত্রা ছিল অত্যাধিক। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল চিনের শানসি প্রদেশ। কম্পনের মাত্রা আনুমানিক ৮। এর থেকেই বোঝা যায় ঠিক কতটা তীব্র ছিল ভূমিকম্প। জানা যায়, সেবার জানুয়ারি মাসের শেষের দিকেই এমন ভয়াবহ এই দুর্যোগ আছড়ে পড়ে শানসি প্রদেশে। গভীর রাতে কম্পন হয়েছিল, তাই শহরবাসী কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। ঘুমের মধ্যেই চিরঘুমের দেশের পাড়ি দিতে হয় লক্ষাধিক নিরীহ প্রাণকে। মুহূর্তের মধ্যে ধুলোয় পরিণত হয় শহরের সমস্ত ঘরবাড়ি, স্থাপত্য, দেওয়াল, সবকিছু। এতটাই তীব্র ছিল ভূমিকম্পের মাত্রা, যে মাটি থেকে জল বেরিয়ে আসতে শুরু করে। সবমিলিয়ে মৃতের পাহাড়ে পরিণত হয় গোটা শহর।
এই দুর্যোগের মেঘ কাটতে সময় লেগেছিল আরও অনেকগুলো বছর। বিধ্বস্ত প্রদেশে খাবারের সংকট ত্রাসের আকার নেয়। যে কজন বেঁচে ছিলেন তাঁরাও অনাহারে মারা যান। কীভাবে সবকিছু সামলানো যাবে, তা ভেবে পায়নি সে-দেশের প্রশাসন। ধীরে ধীরে অন্যান্য দেশের সাহায্য নিয়ে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়ায় চিনের এই অংশ। তবে ইতিহাসে এই বিপর্যয়ের বিশেষ গুরুত্ব পাওয়ার আরও একটা কারণ রয়েছে। জানা যায়, এই ভূমিকম্পের সময় পৃথিবীর জনসংখ্যা বর্তমানের মাত্র ৫%। তাই ৮ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু সেই সময় কোনওভাবেই সাধারণ ব্যাপার ছিল না। স্রেফ চিন হয়, এর প্রভাব পড়েছিল গোটা বিশ্বে। প্রকৃতির সামনে মানুষ কতটা অসহায়, তা বোঝানোর জন্য এই একটি ঘটনাই যথেষ্ট। তখনকার দিনে তো বটেই, আজকের দিনে দাঁড়িয়েও এর থেকে শিক্ষা মিলতে পারে। বিশেষ করে বর্তমান পৃথিবী পরিবেশের সঙ্গে যে হারে স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছে, সেখানে প্রকৃতির রোষানল সম্পর্কে ধারণা হওয়াটা যে একান্ত জরুরি তা বলাই যায়।