জঙ্গল মানেই সবুজের সমারোহ। সেই গহিনে হরেক প্রাণীর বাস। সকালে ঘুম ভাঙবে পাখির ডাকে। রাত গড়াতেই কানে ঝালাপালা লাগাবে ঝিঁঝিঁ পোকা ডাক। জঙ্গল বলতেই এসব মনে পড়ে তো? তবে এমন জঙ্গলও রয়েছে, যেখানে প্রাণের স্পন্দন মাত্র নেই। তবু দিব্যি বেঁচে রয়েছে জঙ্গল। মৃত, শুষ্ক মরুভূমির মতো। কোথায় রয়েছে সেই আশ্চর্য মৃত জঙ্গল? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
যেন মৃত্যুর দেবতা এসে ছুঁয়ে দিয়ে গেছে সেই ভূমিকে। এতই রুক্ষ, শুষ্ক সেই মাটি। একটা ঘাস পর্যন্ত জন্মায় না সেখানে। অথচ দাঁড়িয়ে রয়েছে ন্যাড়া ন্যাড়া সব গাছের সারি। এককথায় বললে মরুভূমির ভয়ঙ্কর রূপ, যাকে বলে এ যেন ঠিক তাই। যেদিকে তাকানো যায়, ধবধবে সাদা মাটি, লাল লাল সব টিলা আর কাঠামো আঁকড়ে দাঁড়িয়ে থাকা কালো কালো সব গাছেদের জঙ্গল। কেউ বলেন মৃত জলাভূমি, তো কেউ উপত্যকা।
আরও শুনুন: কেবল মানুষ নয়, এখানে চাকরি করে হাজার হাজার হাঁসও
ব্রাজিলের নামিবিয়া মরুভূমি সংলগ্ন এই উপত্যকা যেন আশ্চর্য। পোশাকি নাম ডেডভ্লেই। আর সেই ডেডভ্লেইয়ের টানেই এখানে ছুটে আসেন অসংখ্য পর্যটক। সিনেমার শুটিংয়ের জন্যও কম জনপ্রিয় নয় এই জায়গা। কালো গাছ, লাল টিলা আর সাদা মাটি, এই জায়গাকে বিশেষ করে তুলেছে। ডেডভ্লেইয়ের এসব গাছের বয়স ৯০০ বছরের কাছাকাছি বলে মনে করা হয়। জলের অভাবে একদিন শুকিয়ে খাঁক হয়ে গিয়েছিল গাছগুলো। অন্তত ৬০০ থেকে ৭০০ বছর আগে মৃত্যু হয়েছে গাছগুলির। তবে সেসব আজও জেগে রয়েছে সাদা বালির এই উপত্যকায়। রোদে পুড়ে পুড়ে কালো রং ধারণ করেছে গাছগুলি। আসলে ওই টিলার কারণেই ওই এলাকায় পৌঁছতে পারেনি সওচাব নদীর জল। যার ফলে শুকিয়ে গিয়েছিল গাছপালাগুলি। তবে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে পচতে পারেনি গাছের কাঠামোগুলি। প্রাচীন দুর্গের মতো সেগুলো আজও সেগুলো পাহারা দেয় উপত্যকাকে।
আরও শুনুন: এ গ্রামের কুকুরেরা নাকি কোটি টাকার মালিক! ভারতের কোথায় রয়েছে এই গ্রাম?
নামিবিয়া মরুভূমি থেকে ৪৪ মাইল দূরে এই মৃত উপত্যকায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা নাকি এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। তারই টানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকেরা। হলিউড ও বলিউডের অসংখ্য ছবির শুটিংও হয়েছে সেখানে। বলিউডের সেই ‘গজনি’ সিনেমাটির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। তাঁরও একটি অংশের শুটিং হয়েছে এই ডেডভ্লেইতেই। এই মৃত উপত্যকায় প্রাণের চিহ্ন নেই বললে কিন্তু ভুল হবে। এই এলাকায় মেলে একধরণের সরিসৃপ, যার নাম বার্কিং গেকো। দেখা মেলে বাদুড়ের মতো কান বিশিষ্ট শিয়াল, স্প্রিংবক নামে এক আফ্রিকান হরিণ, ব্ল্যাক ব্যাকড শিয়ালের মতো বেশ কিছু বিরল প্রাণীর। পাখি অবং বিরল প্রকৃতির পোকামাকড় তো রয়েইছে। তবে জলের অভাবের কারণে এই ডেডভ্লেইতে টিকে থাকা বেশ কষ্টকর। শুধু দিনে নয়, রাতেও নাকি আশ্চর্য রকমের সুন্দর এই ডেডভ্লেই উপত্যকা। পৃথিবীর সবচেয়ে পরিষ্কার আকাশ নাকি দেখা যায় এখান থেকেই। তারার মালার নিচে এই রুক্ষতাকে যাঁরা একবার দেখেছেন, শুধু তাঁরাই জানবেন এই উপত্যকা ঠিক কতটা মোহময়।