শুনশান কবরস্থান। সেখানে দিনের বেলা যেতেই ভয় লাগে। অথচ এখানেই সিনেমার দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাও আবার মাঝরাতে। এই সময় কবরস্থানে সিনেমা দেখতে কে যাবেন? মানুষ নয়, ভূতের জন্যই এই বিনোদনের ব্যবস্থা। ব্যাপারটা ঠিক কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মৃত্যুর পর আত্মার কী হয়? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর মেলা দায়। তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন আত্মা চির অবিনশ্বর। অর্থাৎ তা কোনওভাবে ধ্বংস বা নষ্ট হতে পারে না। ঠিকমতো মুক্তি না পেলে মৃতদেহের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে আত্মা। বলা হয়, আত্মার খিদে-তেষ্টা বলে কিছু নেই। হাওয়া ভেসে যেখানে খুশি যেতে পারে তারা। তাই বলে আত্মার শখ-আহ্লাদও থাকবে না! এই ভাবনা থেকেই মৃতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে থাইল্যান্ডের এক কবরস্থান কর্তৃপক্ষ। আত্মাদের বিনোদনের জন্য কবরস্থানেই সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: বসকে পছন্দ নয়? বিক্রি করে ফেলুন, পথ দেখাচ্ছে চিন
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। থাইল্যান্ডের ওই কবরস্থান অন্তত হাজার তিনেক মৃত মানুষের শেষ ঠিকানা। কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস, এঁদের অনেকের আত্মাই এখনও মুক্তি পায়নি। এবং কবরস্থানেই সেইসব আত্মারা ঘুরে বেড়ায়। তাঁদের জন্যই বিনোদনের ব্যবস্থা। এর নেপথ্যে কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। স্রেফ বিশ্বাসে ভর করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা সিনেমা চালু করে দেওয়া হয়। তার আগে সার দিয়ে বসানো হয় ফাঁকা চেয়ার। সিনেমা চলে মাঝরাত অবধি। এইসময় কেউ যেন কবরস্থানে ঢুকে আত্মাদের বিরক্ত না করে, তার জন্যও বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। সিনেমা চলাকালীন ৪ জন কড়া পাহারায় মজুত থাকে। ভিতরে ঢোকার অনুমতি তাঁদেরও নেই। অবশ্য অনুমতি পেলেই যে তাঁরা ভিতরে ঢুকতেন তা বলা যায় না। হাজার হোক, আত্মার শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটানোর ইচ্ছা বা সাহস খুব কম লোকেরই রয়েছে। স্রেফ সিনেমা নয়, মৃতদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও করেছে কর্তৃপক্ষ। সিনেমা শুরুর আগেই বিভিন্ন পদ সাজিয়ে রাখা হবে কবরস্থানে। এছাড়া আরও একাধিক বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে।
আরও শুনুন: গঙ্গাবক্ষে বিকিনি সুন্দরী! পুণ্য হারানোর ভয়ে মাথায় হাত ভক্তদের
প্রাথমিক ভাবে এই কাণ্ড দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু এমনটা যে নতুন কিছু নয় তা বলাই বাহুল্য। প্রাচীন মিশরে মৃতদেহ সংরক্ষণের চল ছিল। মৃতব্যক্তির দেহ ওষুধ মাখানো কাপড়ে জড়িয়ে রাখা হত। সেই মমিও আজও অক্ষত রয়েছে বিভিন্ন মিউজিয়ামে। এইসব মমির সঙ্গেই রাখা হত একাধিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। মৃতব্যক্তির পছন্দের প্রায় সবকিছুই দেওয়া হত কফিনে। বিশ্বাস ছিল, ওইসব জিনিস ব্যবহার করবেন মৃত ব্যক্তি। সেখানেও মৃতদের বিনোদনের ভাবনা জড়িয়ে ছিল। তাই থাইল্যাণ্ডের কবরস্থানের এই উদ্যোগ একেবারে স্বাভাবিক নজরেই দেখছেন কেউ কেউ।