পুরুষের মতো পোশাক পরে অফিসে ঢোকা যাবে না। সম্প্রতি এক সংস্থার মহিলা কর্মীদের জন্য এমনই নিয়ম জারি করা হয়েছে। এমনকি অফিসের অন্যান্য কর্মীদেরও তাঁদের লিঙ্গ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পোশাক পরেই কাজে আসতে হবে। অন্যথায় চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হতে পারে। কেন এমন নিয়ম জারি করল ওই সংস্থা? আসুন শুনে নিই।
প্রাকৃতিক ভাবে যিনি যে লিঙ্গের মানুষ, তাঁকে ঠিক সেই লিঙ্গের জন্য নির্ধারিত পোশাকই পরতে হবে। অর্থাৎ সমাজের প্রচলিত ছক অনুযায়ী মহিলাদের পোশাকই পরতে হবে মহিলাদের, আর পুরুষের পোশাক পরতে বাধ্য থাকবেন পুরুষেরাও। চলবে না কোনোরকম ক্রস ড্রেসিং-এর ভাবনা। আর সেই পোশাকবিধি না মানলেই বরখাস্ত করা হবে চাকরি থেকে। সম্প্রতি এমনই নির্দেশিকা জারি করেছে এক পেশাদার সংস্থা।
আরও শুনুন: তিন তালাক নিষিদ্ধ হতে হিতে বিপরীত! বাড়ছে মুসলিম মহিলাদের উপর অত্যাচারের প্রবণতা
ঘটনাটি মার্কিন মুলুকের। টেক্সাসের এক সংস্থাতেই কর্মীদের জন্য এমন অভিনব নিয়ম জারি হয়েছে। একটি নির্দেশিকা পেশ করে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, কোন কর্মী কী ধরনের পোশাক পরে অফিসে আসবেন। যার মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করা হয়ছে কোনও মহিলা পুরুষের মতো পোশাক পরে অফিস আসতে পারবেন না। এমনকি কোনও পুরুষেরও নিজের ইচ্ছামতো পোশাক পরার অধিকার নেই। নির্দিষ্ট একটি জুতো, যা সে দেশের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়, তা সবার আগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মীরা সেই জুতো পরে যতই স্বচ্ছন্দ বোধ করুন না কেন, অফিসে তা পরে আসা যাবে না মোটেই। মহিলা পুরুষ সকলের জন্যই নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে কিছু পোশাক। পুরুষদের ক্ষেত্রে অফিসে আসার সময় পরতে হবে প্যান্ট শার্ট। তবে তা অবশ্যই ফুলস্লিভ হওয়া বাঞ্ছনীয়। সেইসঙ্গে ওভারকোট বা ব্লেজার পরা যেতে পারে। কিন্তু জুতো হিসেবে কেবলমাত্র বুট পরেই অফিসে আসতে হবে। অন্যদিকে মহিলাদের ক্ষেত্রে এহেন পুরুষালি পোশাক পরায় ঘোর আপত্তি রয়েছে সংস্থার। অন্যদিকে মহিলাদের স্কার্টের দৈর্ঘ্যও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তার থেকে ছোট মাপের স্কার্ট পরে ঢোকা যাবে না অফিসে। একইসঙ্গে যে পোশাকে স্পষ্টভাবে বক্ষবিভাজিকা বোঝা যায়, তাতেও রয়েছে ঘোর আপত্তি।
আরও শুনুন: হিজাব পরার অধিকার চেয়ে ছাড়তে চেয়েছিলেন পড়াশোনা, দ্বাদশের পরীক্ষায় প্রথম সেই ছাত্রী
তবে এই নিয়মের জেরে যথেষ্ট সমস্যায় পড়েছেন ওই সংস্থার কর্মীরা। এমনিতেই প্রথম বিশ্বের মানুষজন পোশাক বিষয়ে কোনোরকম বাধার সম্মুখীন হতে একেবারেই অভ্যস্ত নন। তাঁরা নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যকেই সবার আগে গুরুত্ব দেন। তা ছাড়া আধুনিক যুগে পোশাক পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে পুরুষ নারীর আলাদা করে বিভাজন থাকবে, ইদানীং কালে এমন ভাবনার বিরোধিতা করছেন অনেকেই। একসময় পুরুষের পোশাক পরার কারণেই কারাবাস করতে হয়েছিল জোন অফ আর্ক-কে। কিন্তু সময় সেখান থেকে অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছে, এগিয়ে গিয়েছে মানুষের ভাবনাও। লিঙ্গভিত্তিক পোশাকের বেড়া ভেঙে ক্রস ড্রেসিংয়ের পথে হেঁটেছেন অনেকেই। বিশেষ করে যাঁরা সমকামী, তাঁরা এই ভাবনাতেই বিশ্বাসী। সেখানে এহেন পোশাকবিধি চাপিয়ে দেওয়ার ঘটনায় হতবাক অনেকেই। তবে ইতিমধ্যেই সমকামিতা আন্দোলন নিয়ে বেশ কিছু দমনমূলক পদক্ষেপ করেছে টেক্সাস-সহ মার্কিন মুলুকের একাধিক রাজ্য। এই সংস্থার জারি করা নিয়মও সেই নীতিরই অংশ কি না, তা নিয়েই জল্পনা উসকে উঠেছে কর্মীদের মধ্যে।