দীর্ঘদিন কোমায় ছিলেন। কেউ ভাবেনি তিনি আবার উঠে বসতে পারবেন। কিন্তু ওই যে কথায় আছে, মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক! এক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই হয়েছে। ওই ব্যক্তি কোমা থেকে স্রেফ উঠেই বসেননি, দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পেরিয় পৌঁছে গিয়েছেন অমরনাথ মন্দিরে। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। এতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে কিছু ক্ষেত্রে স্রেফ নিজের ইচ্ছা থাকলেই হয় না, দরকার হয় ভগবানের আশীর্বাদও। সম্প্রতি যা ঘটেছে, তার থেকে এমন ধারণা হওয়াটাই স্বাভাবিক। নাহলে যে ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে উঠে বসার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন, তিনি কিনা পায়ে হেঁটে অমরনাথ দর্শন করে এলেন!
আরও শুনুন: যত নষ্টের গোড়া মাংস খাওয়া! পশুহত্যার কারণেই হিমাচলে ধস, মন্তব্য আইআইটি কর্তার
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। কথা বলছি তেলেঙ্গানার বাসিন্দা শ্রীনিবাস রেড্ডি সম্পর্কে। বছর তিনেক আগে ভয়ানক এক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন শ্রীনিবাস। বাড়ি মেরামতির কাজের সময় সিমেন্টের বড় একটা চাঙড় ভেঙে পড়ে তাঁর উপর। গুরুতর জখম হন শ্রীনিবাস। সকলে এক প্রকার ধরেই নিয়েছিল তিনি মারা গিয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, চিকিৎসকেরা জানান তাঁর শরীরে এখনও প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। কালবিলম্ব না করে, শুরু হয় চিকিৎসা। তবে প্রাণে বাঁচলেও, কাজ করার ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলেন শ্রীনিবাস। জানা যায়, তিনি কোমায় চলে গিয়েছেন। এই বিশেষ শারীরিক অবস্থায়, রোগি প্রাণে বেঁচে থাকলেও তার শরীরের কোনও অনুভূতি কাজ করে না। তাই কার্যত বিছানায় শুয়ে শুয়েই দিন কাটতে থাকে শ্রীনিবাসের। নিজে থেকে উঠে বসারও ক্ষমতা ছিল না তাঁর। তবে এই ধরনের রোগীদের বরাবরই নিজের থেকে কাজ করার জন্য সাহস যুগিয়ে যান চিকিৎসকরা। যে কোনও মুহূর্তে এঁদের স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদিও দীর্ঘদিন কোমায় থাকলে বেশিরভাগেরই বাঁচার আশঙ্কা থাকে না। শ্রীনিবাসের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকদের একাংশ ভেবেছিলেন, তাঁর বাঁচার কোনও সম্ভাবনা নেই।
আরও শুনুন: জগন্নাথকে ছেড়ে যাওয়া বারণ, সোনার শিকলে বাঁধা পুরীর এই মন্দিরের হনুমান বিগ্রহ
তবে ওই যে, কথায় আছে আমাদের ভবিষ্যতের ঘটনার সবটাই ঈশ্বরের পূর্ব পরিকল্পিত। শ্রীনিবাসের জীবন কাহিনি শুনলেও ঠিক তেমনটাই মনে হতে পারে। কোমায় থাকলেও তাঁর মধ্যে অদ্ভুত এক জীবনশক্তি কাজ করত। চিকিৎসকদের কথায়, সেই জোরেই তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করেন। দীর্ঘদিন কোমায় কাটানোর পর একসময় তাঁর জ্ঞান ফেরে। কথা বলা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ নিজে থেকেই করা শুরু করেন শ্রীনিবাস। প্রথমদিকে প্রবল অসুবিধা হলেও মনের জোরে তিনি রোজ নিয়ম করে সাহায্য ছাড়াই হাঁটতেন। কোমা থেকে ফিরেই কারও পক্ষে আদৌ এমনটা করা সম্ভব নয়। তাই শ্রীনিবাসকে দেখে অবাক হতেন চিকিৎসকেরাও। তবে মনের জোরকে ভরসা করেই তিনি অন্যান্য রোগীদের তুলনায় অনেকটাই তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে থাকেন। আর তারপরই নিয়ে ফেলেন এক চরম সিদ্ধান্ত। যে তীর্থে যাওয়ার কথা অনেক সুস্থ মানুষই ভাবার সাহস পান না, সেই অমরনাথ যাওয়ার পরিকল্পনা করেন শ্রীনিবাস। আর শুধু পরিকল্পনাই নয়, সত্যি সত্যি সেই পবিত্র শিবক্ষেত্রে পায়ে হেঁটে পৌঁছে যান তিনি। এর জন্য অবশ্য বেশ কয়েকমাস হাঁটা ও সিঁড়িতে ওঠার অভ্যাস করেছেন তিনি। দিনে প্রায় ৮ কিলোমিটার হাঁটতে হত শ্রীনিবাসকে। কোমা থেকে সুস্থ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই এভাবে অমরনাথ দর্শণ অনেকের কাছেই কল্পনাতীত ব্যাপার। তবে শ্রীনিবাসের কথায়, ঈশ্বরের ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব। নিজের সুস্থতার পিছনে ভগবানের আশীর্বাদ রয়েছে বলেই দাবি তাঁর। তাই আগামী দিনে বিভিন্ন তীর্থস্থানে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে তাঁর জীবনের এই ঘটনায় অবাক হয়েছেন চিকিৎসক থেকে শুরু করে পরিচিত মহলের সকলেই।