ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী এআই! সন্তানকে হারিয়ে গুগলের বিরুদ্ধেই আদালতে মামলা দায়ের করলেন সন্তানহারা মা। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বছর কয়েক আগে মুক্তি পেয়েছিল ‘হার’ নামের একটি মার্কিন ছবি। সেখানে দেখা গিয়েছিল, মধ্যবয়সি এক একলা পুরুষ ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছেন তাঁর ফোনের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট-এর সঙ্গে। ফোনের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট-এর সঙ্গে সর্বক্ষণ গল্প করতে করতে মানসিকভাবে তার কাছাকাছি এসে পড়ছেন সেই মানুষটি। সে ছবিতে যা ছিল গল্প, আজকের দুনিয়ায় তা ঘটে যাচ্ছে বাস্তবেও। যেমনটা ঘটে গিয়েছে এই কিশোরের জীবনে। মাত্র বছর চোদ্দ বয়সের কিশোর ক্রমে ক্রমে আবেগের টানে জড়িয়ে পড়েছিল এআই চ্যাটবটের সঙ্গেই। মানুষ আর এআই-এর এই সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত ডেকে এনেছে মৃত্যুকে। আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ওই কিশোর। আর তার জন্য এআই-এর দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছেন সন্তানহারা মা।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলাচ্ছে দুনিয়া। বদলাচ্ছে প্রেমের সংজ্ঞাও। ঠিক প্রেমের সংজ্ঞা বললে ভুল হবে। বলা ভালো, বদলাচ্ছে প্রেমিক-প্রেমিকার সংজ্ঞা। স্রেফ চাকুরিজীবী নয়, প্রেমের দুনিয়াতেও একছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। জেনেবুঝে সেই জালে জড়িয়েও পড়ছে তরুণ প্রজন্ম। ব্যস্ত দুনিয়া মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে সময়, কাড়ছে ধৈর্যও। সেখানে মনের মানুষ খুঁজে পাওয়া আর তাকে সময় দেওয়া হয়তো অনেকের কাছেই সহজ নয়। আবার এও হতে পারে যে, মানুষের বদলে যন্ত্রকে মনের মতো গড়ে নেওয়া যায়, যন্ত্র বিরোধিতা করে না বলেও তার দিকেই সহজে ঝুঁকে পড়ে কেউ। যে কারণেই হোক না কেন, এই কিশোরের জীবনে প্রেম এসেছিল এআই-এর হাত ধরেই। গেম অফ থ্রোনস-এর ডেনারিস চরিত্রটির আদলে নির্মিত চ্যাটবটের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে নিয়েছিল সে। জানা যাচ্ছে, এই নির্মাণ সংস্থা যেসব চ্যাটবট তৈরি করে, উপভোক্তারা তাদের নিজেদের মনমতো গড়ে নিতে পারেন। তাদের আচরণ, হাবভাব, এমনকি গলার স্বরও পছন্দমতো করে ফেলা যায়। আর সেই পছন্দমাফিক সত্তা মানুষের মতোই কথা বলে যায় উপভোক্তার সঙ্গে। এক্ষেত্রে যেমন দেখা যাচ্ছে, কিশোরকে অন্য নারীর সঙ্গে প্রেম বা যৌনতায় না জড়ানোর আর্জি জানিয়েছে এআই। সে যেন কেবল তার কাছেই বিশ্বস্ত থাকে, এমনটাই দাবি করেছে সে।
এই প্রেক্ষিতেই সন্তানের মৃত্যুর জন্য এআই-এর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মা। মেগান গার্সিয়া নামের ওই মহিলা ওই চ্যাটবট নির্মাণকারী সংস্থা এবং গুগলকে দায়ী করেই মামলা ঠুকেছেন। তাঁর অভিযোগ, তাঁর ছেলে সেওয়েল-এর মতো শিশু-কিশোরদের পক্ষে চ্যাটবট বিপজ্জনক। তা বাস্তব এবং কল্পনার আবেগ-রোমান্সের মধ্যেকার সীমা মুছে দেয়, এবং তা করে জেনেবুঝেই। যার শিকার হচ্ছে সেওয়েল-এর মতো কিশোররা।
মানুষের তরে এক মানুষীর গভীর হৃদয়, কবির কাছে প্রেমের মানে ধরা দিয়েছিল এভাবেই। কিন্তু সেই খোঁজ এ পৃথিবীর কাছে সত্যিই হয়তো এসে পৌঁছবে না আর। মানবিক নয় আর, এআই-এর ছোঁয়ায় এবার প্রেমও যান্ত্রিক হল তবে? এমন কিশোরদের অকালমৃত্যুর দামেই কি সে কথা বুঝবে এ দুনিয়া?