খুদেদের দুনিয়ায় হাজার প্রশ্নের মেলা। সব উত্তর না পেলে শান্তি নেই। সামনে যেই থাকুক, প্রশ্ন করার আগে দুবার ভাবে না বাচ্চারা। আর সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রায়শই হাঁফিয়ে ওঠেন বড়রা। কিন্তু বাবা-মাকে কোন প্রশ্নটা সবথেকে বেশি করে খুদেরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভিড়ে ঠাসা ট্রেন। ভাগ্যক্রমে জানলার ধারে বসার সৌভাগ্য হয়েছে। সামনে থিকথিক করছে ভিড়। হঠাত কোথা থেকে এক খুদের উদয়। বয়স খুব বেশি হলে ৫ বা ৬। ভিড়ের দিকে এতটুকু নজর দেওয়ার সময় নেই তার। লক্ষ্য জানলার শিক। সবাইকে পেরিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়ল। যথাসময়ে ট্রেন ছাড়ল। সে যেন এই মুহূর্তের অপেক্ষাতেই ছিল। জানলার ওপারে একের পর এক দৃশ্য মিলিয়ে যাচ্ছে, আর সেদিকে তাকিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে খুদে।
:আরও শুনুন:
লেখাপড়া শিখবেন লাড্ডু গোপাল! আরাধ্যকে স্কুলে ভর্তি করালেন মহিলা
ট্রেনে বাসে এমন দৃশ্য অস্বাভাবিক নয়। মনে প্রশ্ন এলে, কিছু না ভেবেই সেটা করে ফেলে ছোটরা। কে উত্তর না দিলে রেহাই নেই। সামনে থাকা বড় কারও জামা ধরে টানার আগেও দুবার ভাববে না তারা। এমনই সহজ সরল সাধারণ মনের মালিক এই খুদেদের দুনিয়ায় হাজার হাজার প্রশ্ন ভিড় করে সবসময়। দুনিয়ায় কী হচ্ছে কেন হচ্ছে সেই সবকিছু তাদের জানা চাই। সবসময় রাস্তায় ঘোরার সুযোগ নেই, স্কুলেও বেশীক্ষণ থাকতে হয় না। তাই বাড়িতেই যাবতীয় প্রশ্নের ডালি সাজিয়ে বসে খুদের দল। নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগে উত্তর দেওয়ার প্রধান দায়িত্ব এসে বর্তায় বাবা-মায়ের উপর। অনেকেই ধৈর্য ধরে উত্তর দেন। কেউ কেউ উত্তর দিতে ব্যর্থও হন। কখনও প্রশ্নের বহর এমনই মাত্রা ছাড়ায়, রীতিমতো হাঁফিয়ে ওঠেন বাবা-মা। খুদেদের এই প্রশ্নের জবাব কীভাবে দেন অভিভাবকরা তা জানতেই সমীক্ষার আয়োজন করেছিল বহুজাতিক সংস্থা। প্রায় ৭৫০-রও বেশি অভিভাবক অংশ নেন সমীক্ষায়। আর সেখানেই জানা গিয়েছে, সবথেকে বেশি কোন প্রশ্ন করে খুদেরা।
:আরও শুনুন:
নগরজীবন ছবির মতন নয় তো! প্রকৃতির কাছে ফিরতে ১৮ দেশের ৯০ জন মিলে বানালেন ঘর
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৫৪ শতাংশ অভিভাবকই সন্তানের প্রশ্নের জবাব সঙ্গে সঙ্গে দিতে পারেন না। ৫২ শতাংশ এর উত্তর খুঁজতে ইন্টারনেটের সাহায্য নেন। কেবল ৪৪ শতাংশ অভিভাবক খুদের সব প্রশ্নের চটজলদি উত্তর দিতে সক্ষম হন। কেউ কেউ প্রশ্ন এড়িয়েও যান। তবে সেই সংখ্যাটা মাত্র ৩ শতাংশ। প্রশ্নের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, অভিভাবকের পেশা! বাবা-মা কেন অফিস যান, সেই খোঁজ করতেই সবসময় ব্যস্ত থাকে খুদের দল। সেইসসঙ্গে যোগ হয়, বাবা-মা কী কাজ করেন? কোথায় অফিস? সেখানে আর কে আছে? এইসবও। এখানেই শেষ নয়, পরিবেশ নিয়েও খুদের মনে প্রশ্নের শেষ নেই। জলের তলায় কীভাবে শ্বাস নেয় মাছ, তা নিয়ে আগ্রহ থাকে মোটামুটি সবারই। এছাড়া, গাছপালা, পশুপাখি নিয়েও প্রশ্ন করে খুদেরা। বর্তমানে অবশ্য প্রশ্নের তালিকায় যোগ হয়েছে কার্টুন। প্রায় ৬৪ শতাংশ অভিভাবকের দাবি, খুদেরা সবথেকে বেশি প্রশ্ন করে টিভিতে দেখা অনুষ্ঠান নিয়েই। তা সে খেলা হোক বা কার্টুন, কোন জিনিসটা কেন হল, সে প্রশ্নই সবসময় করে থাকে খুদেরা। অনেকে আবার প্রশ্নের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেন। বাড়ির খুদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দেয় AI। জনপ্রিয় AI ট্যুল অ্যালেক্সার দাবি, প্রতি মাসে প্রায় আড়াই কোটি প্রশ্ন আসে স্রেফ খুদেদের থেকেই। তবে প্রশ্ন করায় কোনও ভুল নেই। তাই বেশিরভাগই খুদেকে প্রশ্ন করতে বাধা দেন না। বরং সমীক্ষায় ধরা পড়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ অভিভাবক খুদেকে প্রশ্ন করার উৎসাহ জোগান। আর খুদের দলও সেইমতো নিজেদের প্রশ্নের খিদে মিটিয়ে নেয় যে কোনও প্রকারে।