ছোট্ট একটা আইডিয়াই আনতে পারে বড় বদল। যে কোনও সাফল্যের গল্প যখন আমরা শুনি, নেপথ্যে থাকে এই আইডিয়ারই স্ফূলিঙ্গ। সেরকমই এক আইডিয়া বদলে দিয়েছে দুই বোনের জীবন। হাতের কাছে পুজোর ফুল পৌঁছে দিয়েই তাঁরা এখন কোটিপতি। আসুন শুনে নিই তাঁদের গল্প।
ফুল কি শুধু ফুলদানিতে রেখে ঘর সাজানোর কাজে লাগে! কিংবা সভা-সমিতিতে বা উৎসব-অনুষ্ঠানের তোড়া বা মালাতেই ফুলের ব্যবহার! একদিক থেকে দেখতে গেলে, ফুলের বহুল ব্যবহার এই ক্ষেত্রগুলিতেই। তবে তা বাদ দিলে, আরও একটা বড় জায়গা পড়ে থাকে, যেখানে ফুল লাগে প্রায় প্রতিদিন। তা হল, পুজোয় ফুলের ব্যবহার। মন্দিরে তো বটেই, হিন্দুদের ঘরে ঘরে পুজোর জন্য ফুল লাগে। সেই সঙ্গে বেলপাতা এবং তুলসী পাতা। এক একটা বাড়ির হিসাব ধরলে, এই রকম ফুল ব্যবহারের পরিমাণ স্বল্পই। কিন্তু সামগ্রিক হিসাব ধরলে এই ফুলের বাজার বেশ বড়। ঠিক সেই দিকটাতেই চোখ রেখেছিলেন দুই বোন যশোদা এবং রেহা কারিতুরি। ঠিক করেছিলেন, সকলের হাতে কাছে পৌঁছে দেবেন পুজোর ফুল। যেমন ভাবা, তেমন শুরু কাজ। আর তাতেই বাজিমাত। দুই বোন এই মুহূর্তে কোটিপতি, লক্ষ্মীলাভ হয়েছে তাঁদের ব্যবসায়।
আরও শুনুন: ঠিক যেন ‘মোগলি’! কুকুরের হাতেই ‘মানুষ’ এই মহিলা, স্বভাবেও রয়েছে মিল
ফুলের ব্যবসার সঙ্গে তাঁরা অবশ্য অপরিচিত ছিলেন না। কেননা তাঁদের বাবাও যুক্ত ফুল-ব্যবসার সঙ্গে। কিন্তু সে হল ফুলের বড় বাজার। দুই বোনের লক্ষ্য ছিল, কুচো ফুলের চাহিদাকে কাজে লাগানো। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আধুনিক ধ্যানধারণা। বর্তমানে সার্ভিস সেক্টরের যে গুরুত্ব, তাঁকেই কুচো ফুলের বাজারে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন তাঁরা। সাধারণত, কুচো ফুলের বাজার হল অসংগঠিত ক্ষেত্র। এবং তা স্থানিক ব্যবসায়ীর উপরেই নির্ভর করে। ফুলের অন্যান্য বাজারের থেকে এই ক্ষেত্র বেশ আলাদা। দুই বোন চেয়েছিলেন, এই ক্ষেত্রটিকেই একটু সংগঠিত করতে। চেয়েছিলেন, কুচো ফুলের জন্য যেন আর বাজারে ভিড় করতে বা অপেক্ষা করতে না হয়। অন্যান্য জিনিস যেমন চাইলেই হাতের কাছে পৌঁছে যায়, প্রতিদিনের পুজোর ফুলও সেভাবে সকলের ঘরে ঘরে হাতে হাতে পৌঁছাক, এই ছিল তাঁদের লক্ষ্য। আর তা পূরণে পুরোপুরি ভাবে সফল হয়েছেন তাঁরা।
লক্ষ্যপূরণে প্রাথমিক ভাবে তাঁরা চালু করেন নিজেদের ছোট্ট একটি সংস্থা। যোগাযোগ করেন ফুলচাষীদের সঙ্গে। পুজোর জন্য কুচো ফুলের সঙ্গে যা যা লাগে, তা চাষীদের থেকেই তাঁরা কিনে নেন। তারপর ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে, প্যাকেটে পুরে তা পাঠিয়ে দেন মানুষের কাছে। দেখতে দেখতে তাঁদের কাছে ফুলের চাহিদা বাড়তেই থাকে। এখন বিভিন্ন শহর থেকে তাঁদের কাছে অর্ডার আসে। বছরে প্রায় ৮ কোটি টাকার ব্যবসা হয় তাঁদের সংস্থায়। কুচো ফুলের পাশাপাশি এখন তাঁরা ধূপও বিক্রি করতে শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে ঐতিহ্যের অনুসারী হয়েই খুঁজে নিয়েছেন লক্ষ্মীলাভের পথ। দুই বোনের এই কীর্তি প্রেরণা জোগাচ্ছে বহু মানুষকে। কুচো ফুল সেই অর্থে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নয় ঠিকই, তবে ঘরে ঘরে তার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। ছোট্ট অথচ গুরুত্বপূর্ণ জায়গার দিকে চোখ রেখে যে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো যায়, যশোদা আর রেহা যেন হাতে-কলমেই তাই-ই প্রমাণ করে দিয়েছেন।