মহাকাশ অভিযানে গিয়ে আটকে পড়েছেন সুনীতা উইলিয়ামস। তাঁদের সুস্থতা নিয়ে চিন্তিত সকলেই। কিন্তু নারী পুরুষ নির্বিশেষে মহাকাশচারীদের শারীরিক সমস্যার ধরন এক হলেও, নারীদের একটি বাড়তি অসুবিধা রয়েছে। তা আর কিছুই নয়, পিরিয়ডস। মহাকাশে আটক থাকার সময়ে শারীরিকভাবে কেমন সমস্যায় পড়তে পারেন সুনীতা?
শরীরের জননতন্ত্র যতদিন কাজ করছে, ততদিন পিরিয়ডস থেকে ছুটি নেই মেয়েদের। প্রকৃতি না কাজ বোঝে, না ছুটি। সে তার নিয়মমাফিক আসে যায়। পিরিয়ডসের এহেন খামখেয়ালিতে মেয়েরা যদি অসুবিধাতেও পড়ে, তাতেও তার কুছ পরোয়া নেই। আর সেই সমস্যার কথাই মনে আসছে সুনীতা উইলিয়ামস-এর মহাকাশে আটকে পড়া প্রসঙ্গে। সুনীতা উইলিয়ামস আর বুল উইলমোর-এর পৃথিবীতে ফেরা যে মুহূর্তে থমকে গেল, তখন থেকেই তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কথা খরচ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের প্রাণে বাঁচার সম্ভাবনা কতখানি, পৃথিবীতে ফেরার সম্ভাবনা আর আশঙ্কার তুল্যমূল্য বিচার- এসব নিয়ে বিজ্ঞানী থেকে সংবাদমাধ্যম থেকে সাধারণ মানুষ, নানাজন নানাভাবে চিন্তা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু মহাকাশচারীর সামগ্রিক শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও, নারী হিসেবে একজন নভশ্চরের আরও একটি সমস্যা হতে পারে। সুনীতাকে নিয়ে যে কথা হয়তো অনেক মেয়েরাই ইতিমধ্যে ভেবেছেন। তা হল, পিরিয়ডস জনিত সমস্যা।
তরল থেকে শুরু করে কঠিন, মহাকাশে সব কিছুই প্রায় ভাসমান। এই অবস্থায় ঋতুরক্তের কী হবে, দীর্ঘদিন এ নিয়ে সংশয়ে ছিলেন গবেষকেরা। মহাকাশ গবেষণার গোড়ার দিকে অনেকদিনই মেয়েদের পিছিয়ে রাখা হয়েছিল, সেখানে পিরিয়ডস আরও একটি বাড়তি যুক্তি দিয়েছিল বইকি। তবে বর্তমানে আমরা জানি, ঋতুর স্বাভাবিক ধরনে কোনওরকম বদল ঘটে না মহাকাশেও। এমনিতেই বেশির ভাগ সময়েই মহাকাশচারীদের ডায়াপার পরে কাটাতে হয়। ইদানীং মহাকাশযানে একটি বর্জ্য সংগ্রাহক প্রক্রিয়া রাখা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত বর্জ্য মহাকাশে ছুড়ে ফেলা হয় বিশেষভাবে। তা ছাড়া অভিযানের সময় ঋতুকাল এলে নারীরা তা স্বাভাবিকভাবেই হতে দেবেন, নাকি ওষুধের সাহায্যে তাকে স্থগিত করবেন, সেই সিদ্ধান্তও নিতে পারেন তাঁরা। LARC বা লং অ্যাক্টিং রিভার্সিবল কন্ট্রাসেপ্টিভ ব্যবহার করার চল রয়েছে। ইস্ট্রোজেন-নির্ভর গর্ভনিরোধক ওষুধ মাইক্রোগ্র্যাভিটির পরিস্থিতিতে বোন ডেনসিটিকে যথাযথ রাখতেও সাহায্য করে, যা দীর্ঘ মহাকাশ অভিযানে জরুরি। তবে যদি কেউ পিরিয়ডসকে স্থগিত রাখতে না চান, সেক্ষেত্রে অভিযানের সময় ট্যাম্পন বা ন্যাপকিনের সংখ্যা ও ওজনও স্থির করে নিতে হয়। মহাকাশ অভিযানে সামান্য ওজনের হেরফেরেই প্রাণসংশয় হতে পারে, সুতরাং এই জৈবিক প্রয়োজনের ক্ষেত্রেও হিসেব মানা জরুরি। অবশ্য দু’ক্ষেত্রেই, অভিযান সেরে বাঁধাধরা সময়ে ফিরতে না পারলে ন্যাপকিন বা ওষুধের ঘাটতি হতে পারে।
পিরিয়ডস হোক বা না হোক, ইউটিআই কিন্তু নভশ্চরদের মধ্যে বহুল পরিমাণে ঘটে থাকে। এক্ষেত্রেও তার বড় শিকার মেয়েরাই। পুরুষের তুলনায় নারীদের ক্ষেত্রে প্লাজমাও কমে বেশি পরিমাণে। যদি কোনও মহিলা মহাকাশচারী মেনোপজের বয়সে পৌঁছান, অথবা ওষুধ বা যান্ত্রিক উপায়ে ঋতুকে থামিয়েও রাখেন সাময়িকভাবে, তাহলেও কিন্তু এইসব শারীরিক সমস্যার হাত থেকে রেহাই নেই তাঁর। আর মহাকাশে থাকার মেয়াদ যত বাড়বে, এইসব সমস্যার জেরও বাড়বে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই।