ব্রিটিশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর শাশুড়ি, তাঁর পোশাক এমন সাদামাটা! কথাটা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়নি বিমানবন্দরের আধিকারিকের। সম্প্রতি সেই অভিজ্ঞতার কথা ফাঁস করলেন বিখ্যাত লেখিকা সুধা মূর্তি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
এক অদ্ভুত মুশকিলে পড়েছেন সুধা মূর্তি। তিনি যে খোদ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর শাশুড়ি, সে কথা নাকি বিশ্বাস করছেন না অনেকেই। তাঁদের কাছে নিজের এই পরিচয়টি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে এই নামী লেখিকাকে। সম্প্রতি কপিল শর্মার শো-তে এসে সেই অভিজ্ঞতার কথাই ফাঁস করলেন সুধা মূর্তি।
আরও শুনুন: ১৫ বছর ধরে সিক লিভে, তবু বেতন বাড়েনি বলে সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা ব্যক্তির
একদিকে তিনি ‘ইনফোসিস’ কর্তা নারায়ণ মূর্তির সহধর্মিণী, অন্য দিকে ব্রিটেনের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ এবং কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের শাশুড়ি। তবে শুধু এটুকুই তাঁর পরিচয় নয়। তিনি নিজেও একজন বিখ্যাত লেখিকা। কন্নড় এবং ইংরেজি সাহিত্যে বড় অবদান রয়েছে তাঁর। সমাজসেবী হিসেবেও রীতিমতো পরিচিত সুধা মূর্তি। এমনকি তার জন্য ২০০৬ সালে ভারত সরকারের থেকে পদ্মশ্রী সম্মানও পেয়েছেন তিনি। কিন্তু এইসব প্রাপ্তি তাঁকে কোনোরকম অহংকার দেয়নি। এত কিছু সত্ত্বেও এখনও সাধারণ জীবনযাপনেই অভ্যস্ত সুধা মূর্তি। কিন্তু সমস্যা হল, অনেক মানুষই যে এখনও মানুষকে বিচার করেন কেবল তার বাইরেটা দেখেই। আর সেই দেখা যদি ঝাঁ চকচকে না হয়, তবেই সেই মানুষের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেলেন তাঁরা। তাঁর সঙ্গেও ঠিক তেমনটাই ঘটেছে একাধিকবার, জানালেন সুধা মূর্তি।
ঋষি সুনক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরেই একবার লন্ডনে যেতে গিয়ে এহেন সমস্যায় পড়েছিলেন লেখিকা। সেবার তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর বড় বোনও। লন্ডনের ইমিগ্রেশন দপ্তরে তাঁদের প্রশ্ন করা হয়েছিল যে কোথায় থাকবেন তাঁরা। এমনিতে সুধা মূর্তির ছেলেও ব্রিটেনের বাসিন্দা, কিন্তু তাঁর পুরো ঠিকানা সেই সময়ে মনে পড়েনি। তাই নির্দিষ্ট ফর্মে মেয়ে-জামাইয়ের ঠিকানাই লেখেন তিনি। ১০, ডাউনিং স্ট্রিট- ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের এই ঠিকানা সকলেরই জানা। সুধা মূর্তিকে সেই ঠিকানা লিখতে দেখে আধিকারিক রীতিমতো বিরক্ত হয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি মজা করছেন? এই অভিজ্ঞতার কথা বলে সুধা মূর্তি মন্তব্য করেন, আসলে ৭২ বছর বয়সের একজন সাদামাটা মহিলা যে প্রধানমন্ত্রীর শাশুড়ি হতে পারেন, সে কথাই ওঁরা ভাবতে পারেননি।
আরও শুনুন: পুরুষের প্রবেশ নিষেধ, শুধু মহিলাদের জন্যই দেশে তৈরি হচ্ছে ২৫০টি ‘পিঙ্ক পার্ক’
আসলে এমন অভিজ্ঞতা তো নতুন নয় তাঁর কাছে। একবার লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে সালোয়ার কামিজ পরা সুধাকে দেখে বিমানবন্দরের কর্মীরা তাঁকে ‘ইকনমি ক্লাস’-এর লাইনে দাঁড়াতে বলেন। আবার দেশেই স্বামী নারায়ণ মূর্তির সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর সুধা মূর্তিকে দেখে অনেকে ভেবেছিলেন, এই সাদামাটা মহিলা নিশ্চয়ই ইংরেজি বোঝেন না। কিন্তু এইসব ভাবনার জেরে নিজের জীবনযাপন বদলে ফেলার কথা একেবারেই ভাবেন না সুধা মূর্তি। নিজের জন্য নয়, সমাজের জন্য তিনি কী কাজ করলেন, সেই দিকটিতে নজর দেওয়াই জরুরি বলে মনে করেন ঋষি সুনকের শাশুড়ি।