জন্মকালে নারী, অথচ বয়স বাড়লেই পুরুষ। অর্থাৎ স্ত্রী লিঙ্গের প্রাণী বিবর্তিত হচ্ছে পুং লিঙ্গের প্রাণীতে। জীবজগতে এ এক আশ্চর্য ঘটনা। সম্প্রতি তারই হদিশ পেলেন বিজ্ঞানীরা।
আকারে ছোটখাটো। দেহের মধ্যেই যেন ধরা পড়েছে রামধনু। সারা শরীর থেকে ঠিকরে পড়ছে উজ্জ্বল রং। পাখনাতেও রয়েছে নানান রঙের বাহার। সবমিলিয়ে মাছটিকে দেখলে মনে হবে যেন রূপকথার কোনও গল্প থেকেই উঠে এসেছে। তবে রূপকথার জগতে নয়, বাস্তবেই এমন একটি মাছের সন্ধান পেয়ছেন বিজ্ঞানীরা। আর শুধুমাত্র রঙচঙে বাহ্যিক গঠনই নয়, এই মাছের বিশেষ এক বৈশিষ্ট্যও চমকে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের। তাঁরা খেয়াল করে দেখেছেন, বয়স যত বাড়তে থাকে নারী থেকে পুরুষ হয়ে উঠতে থাকে মাছটি।
আরও শুনুন: পৃথিবীর ‘সবচেয়ে দুঃখী’ গরিলা, ৩২ বছর ধরেই একচিলতে নোংরা খাঁচায় বন্দি বুয়া নোই
বছর তিনেক আগে তাঞ্জানিয়ার জাঞ্জিবার অঞ্চলের মেসোফোটিক রিফে প্রথম সন্ধান মিলেছিল এই বিশেষ মাছের। নাম রাখা হয়েছিল ‘ভাইব্রেনিয়াম ফেয়ারি রাসে’।
সম্প্রতি সেই গোত্রেরই আরও একটি নতুন প্রজাতির খোঁজ মিলেছে মালদ্বীপে। মালদ্বীপের জাতীয় ফুলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার নাম রাখা হয়েছে ‘রোস-ভেইল্ড ফেয়ারি রাসে’। আর এই ‘ফেয়ারি রাসে’ যে ফেয়ারি ল্যান্ডের বাসিন্দা নয়, তা নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত কেউ বিশ্বাসই করতে চাইবেন না। সাধারণ ভাবে এই মাছগুলির গায়ের রং বেগুনি হলেও, মালদ্বীপে খুঁজে পাওয়া মাছটি গোলাপি রঙের। আবিষ্কারের পর থেকেই সেখানকার মেরিন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সেটিকে নিয়ে নানা গবেষণা শুরু করেছেন। আর সেই গবেষণাতেই উঠে এল চমকপ্রদ তথ্য। গবেষকরা বুঝতে পারেন, এই প্রাণীটির বাহ্যিক রূপের পাশাপাশি আরও একটি দারুণ বৈশিষ্ট্য আছে। জীবজগতের অন্য কোনও প্রাণীর মধ্যে তেমনটা খুঁজে পাওয়া যায় না। বিজ্ঞানীদের দাবি, জন্মানোর সময় এই মাছ স্ত্রীলিঙ্গের হলেও, বয়স বাড়লে এটির দেহে লিঙ্গ পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ একটি স্ত্রী মাছ প্রাপ্তবয়স্ক হলেই পরিণত হয় পুরুষ মাছে। অন্তত এই মাছের ডিএনএ পরীক্ষা করে তেমনটা জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কী কারণে এমনটা হয়, সে বিষয়ে এখনও চলছে গবেষণা।
আরও শুনুন: পরিচয় গোপন করে হিন্দু মেয়ের সঙ্গে প্রেম, লাভ জিহাদের অভিযোগে গ্রেপ্তার মুসলিম যুবক
কিন্তু এমন আশ্চর্য প্রজাতির উপস্থিতি কীভাবে এতদিন মানুষের চোখের আড়ালে ছিল? সেই প্রশ্নেরও উত্তর রয়েছে গবেষকদের কাছে। সাধারণত এই মাছ নাকি সমুদ্রের প্রায় ১৫০ ফুট গভীরে বাস করে। ফলত সাধারণভাবে সমুদ্রের উপরিতলে নাগাল পাওয়া যায় না এদের। এমনকি সাবমেরিনের সাহায্যেও এই মাছেদের দেখা যায় না, তেমনই এরা যেখানে ঘোরাফেরা করে সেখানে পৌঁছাতে পারেন না স্কুবা ডাইভাররাও। ফলত এতদিন মানুষের কাছে অধরাই থেকে গিয়েছে এর উপস্থিতি। গবেষকদের মতে, সমুদ্রের গভীরে এমনই আরও বহু অজানা প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে, যা সামনে এলে মানুষ বিস্মিতই হবে।