আসলে চোর। কিন্তু বসেছেন বিচারকের আসনে। নিজের অপরাধ নিজেই শুনেছেন। বেকসুর খালাসও করেছেন নিজেকে। অথচ সেসব টের পাননি কেউই। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এ হল এমন এক চোর, যার জীবনের ধ্যানজ্ঞান সবই লোক ঠকানো। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
চুরি করাই নেশা। চুরি করাই পেশা। তবে তাঁকে কোনওভাবেই সাধারণ চোরের তকমা দেওয়া যাবে না। কারণ একে তো তিনি রীতিমতো শিক্ষিত। তার ওপর তিনিই বোধহয় একমাত্র চোর, যিনি নিজের বিচার করেছিলেন।
আরও শুনুন: অনুরাগে যত রাগ! যেন সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া হারানোর কিছুই নেই
কথা বলছি, ধনীরাম মিত্তল সম্পর্কে। তাঁকে অনায়াসে ‘ভারতীয় চার্লস শোভরাজ’ বলা যেতে পারে। একসময় তাঁর নাম শুনলে ঘাবড়ে যেতেন পুলিশের তাবড় তাবড় কর্তারা। আর হবে নাই বা কেন! ধনীরাম একাই চুরি করেছিলেন ১০০০-রও বেশি গাড়ি। শুধু তাই নয়, লোক ঠকানোতেও তাঁর জুরি মেলা ভার। ছয়ের দশকে দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থানের বিভিন্ন এলাকায় তাঁর রাজত্ব ছিল। অনায়াসে চুরি করতে পারতেন যে কোনও গাড়ি। আর এমনভাবে করতেন যে কারও সাধ্যি ছিল না ধনীরামকে ধরে। ধরা পড়লেও অবশ্য সমস্যা নেই। ঠিক কোনও না কোনও উপায় বের করে তিনি মুক্ত হবেন। যা সাধারণ কোনও চোরের পক্ষে ভাবাও অসম্ভব। মিত্তলের পড়াশোনাও ছিল বিভিন্ন বিষয়ে। স্নাতক হয়েছিলেন আইন নিয়ে। তাই বিচারের ফাঁক ফোকর সবই জানা ছিল ধনীরামের। তার ওপর হাতের লেখা নিয়েও বিস্তর পড়াশোনা ছিল তাঁর। যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গা বাঁচাতে সাহয্য করেছে মিত্তলকে। তবু নানা অভিযোগে ধরা পড়েছেন বহুবার। কিন্তু চুরি থামাননি।
আরও শুনুন: কত চালে কত ভোট! দোসর কন্ডোমও, রাজনীতিতে যারা নতুন ‘মুখ’
এই মিত্তল অবশ্য বিশেষ এক কারণে পুলিশ মহলে এখনও পরিচিত। তিনি যা ঘটিয়েছিলেন তা সিনেমার গল্পকেও হার মানাতে পারে। তা ঠিক কী করেছিলেন মিত্তল? এক কথায় বলতে গেলে নিজের বিচার নিজেই করেছিলেন। আসলে, লোক ঠকানোতে সিদ্ধহস্ত মিত্তল যে কোনও কাগজ জালিয়াতি করতে পারতেন। হোক না সরকারি চিঠি, নকল তৈরি করতে বেশীক্ষণ সময় লাগত না মিত্তলের। এমনই এক নকল সরকারি চিঠি পাঠিয়ে নগর দায়রা আদালতের বিচারকরকে দু-মাসের ছুটিতে পাঠিয়েছিলে মিত্তল। সে জায়গায় বিচারক সেজে হাজির হয়েছিলেন নিজেই। তারপর নিজের অপরাধের সাজা মুকুব করেন অনায়াসে। সেইসঙ্গে আরও ২০০০ কারাবন্দিকে বেকসুর খালাস করে দেন। পড়ে অবশ্য সবটাই ধরা পড়ে। ওই অপরাধীদেরও জেলে ভরা হয়। কিন্তু পুলিশের রেকর্ডে এই অপরাধ মোটা হরফে ছাপা হয়ে যায়। এরপরও বহুবার চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন মিত্তল। তারপর ফেরার থেকেছেন দীর্ঘদিন। শেষমেশ পুরনো গাড়ি চুরির দায়ে পাকাপকিভাবেই মিত্তলকে জেলে ভরে পুলিশ।