বিকাশ রায়ের পরিচালনায়, উত্তমকুমার অভিনীত চলচ্চিত্র মরুতীর্থ হিংলাজ মনে পড়ে! চূড়ান্ত কষ্টসাধ্য পথ অতিক্রম করে সেখানে পৌঁছাতে হয়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-এর কণ্ঠে লিপ দিয়েছিলেন উত্তমকুমার। সেই কালজয়ী গান আমাদের স্মৃতিতে গেঁথে রয়েছে, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহভরা কূলে তব/ মা গো বলো কবে শীতল হব’। মরুতীর্থ হিংলাজ আদতে পাকিস্তানে অবস্থিত। হিংলাজ ছাড়াও পাকিস্তানে রয়েছে আরও বেশ কিছু হিন্দু তীর্থস্থান।
দুর্গম জায়গা। অবস্থান বালুচিস্তান প্রদেশের পার্বত্য অঞ্চলে। নাম ল্যায়রি তেহসিল। পাকিস্তানের করাচি থেকে উত্তর পশ্চিমে অন্তত আড়াইশ কিলোমিটার। এই ল্যায়রি পার্বত্য অঞ্চলের কোল ঘেঁষেই রয়েছে প্রাচীন কোট্টারী দেবীর মন্দির। তিনিই পরিচিত হিংলাজ মাতা নামে।
আরও শুনুন: হিন্দু হয়েও ৪০০-র বেশি মসজিদ বানিয়েছেন দেশের এই Mosque Man
দেশভাগ এবং স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানে বাস ছিল, প্রচুর হিন্দু এবং শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষের। শিখদের অত্যন্ত পবিত্র তীর্থ কর্তারপুর। সেও অবস্থিত পাকিস্তানে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ শিখ ভক্ত সেখানে তীর্থের উদ্দেশ্যে যান। দেশভাগের পর প্রচুর মানুষ চলে আসেন ভারতে। তবে সিন্ধ প্রদেশের থরপরকার জেলায় বাস করেন, বহু মানুষ, যাঁরা হিন্দু।
এঁরাই বছরের একটি বিশেষ উৎসবে নিয়ম করে যেতেন মরুতীর্থ হিংলাজে। তাঁদের প্রধান দেবী হিসেবে তাঁরা পূজা করতেন কোট্টারী দেবীর। তবে হিন্দু দেবী হলেও নানা ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণীর মানুষ আসেন হিংলাজ মাতার পুজো দিতে। হিন্দুদের একান্ন পীঠ অনুযায়ী, এই তীর্থ অন্যতম। হিন্দু পুরাণ মতে, শিবের তাণ্ডব নৃত্যের সময়ে, এখানে পতিত হয়েছিল, সতীর ব্রহ্মরন্ধ্র। এখানে দেবীর সঙ্গে ভৈরব পূজিত হন, ভীমলোচন রূপে।
সংস্কৃত হিঙ্গুলা শব্দ থেকে হিংলাজ শব্দের উৎপত্তি। এখানে মন্দিরের মধ্যে রয়েছে এক পবিত্র অগ্নিকুণ্ড। সেই অগ্নিকুণ্ডকে তীর্থযাত্রীরা দেবীর অনির্বাণ অগ্নিশিখা হিসেবে পূজিত করেন। এই মন্দির সন্নিহিত গ্রামের নামও হিংলাজ। হিংলাজ মন্দির নিয়ে নানা কিংবদন্তির সন্ধান পাওয়া যায়।
আরও শুনুন: Lucknow-এর রামায়ণ যোগ, লক্ষ্মণের নাম থেকেই কি হয়েছে নামকরণ?
পরশুরাম তখন পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয় নিধনে মেতেছেন। তখন সিন্ধের রাজা রত্নসেনা তাঁর সন্তানদের নিয়ে ঋষি দধীচির আশ্রমে আশ্রয় ভিক্ষা চাইলেন। কিন্তু আশ্রমের চৌহদ্দির মধ্যেই, গোপন আশ্রয়ে থেকেও প্রাণ গেল রত্নসেনার। শিশুপুত্রটি কোনওমতে প্রাণে বাঁচল। পরশুরাম রত্নসেনার শিশুপুত্রের খোঁজে এলেন ঋষি দধীচির আশ্রমে। কিন্তু সেখানে কোনও ক্ষত্রিয় শিশুকে তিনি খুঁজে পেলেন না। দেখলেন, আশ্রমে সবাই ব্রাহ্মণ। এই হিংলাজ মাতার মন্দিরেই ক্ষত্রিয় সন্তানকে ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে প্রতিপালন এবং গোপন করে রাখা হয়েছিল। তখন থেকেই এঁদেরকে ব্রহ্মক্ষত্রিয় বা ব্রাহ্মণ-যোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয়। রত্নসেনার পুত্রদের মধ্যে জয়সেনা বড় হয়ে সিন্ধ প্রদেশে ফিরে গিয়ে আবার রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঋষি দধীচি তাঁকে বিপদ থেকে রক্ষার দিয়েছিলেন হিংলাজ মাতার আরাধনার মহামন্ত্র।
বাকি গল্প শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।