বেড়াতে যেতে কার না ভাল লাগে! ঠিকঠাক বেড়ানো ব্যপারটা কিন্তু কম খরচসাপেক্ষ নয়। যাতায়াত, খাওয়া-দাওয়ার খরচ তো রয়েইছে, তবে সবচেয়ে বড় হ্যাপা বোধহয় থাকার জায়গা পাওয়া। বাজেটের মধ্যে ঠিকঠাক হোটেল খুঁজে পাওয়া মাঝেমধ্যে কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে। এবার যদি শোনেন, কোনও হোটেল থাকতে দিচ্ছে বিলকুল বিনা খরচে, তাহলে তো একেবারে সোনায় সোহাগা। কিন্তু এখানেই টুইস্ট। এহেন ঘোষণার পরেও একটা হোটেলে কিছুতেই কেউ থাকতে চাইছেন না। না না, ভূতুড়ে কোনও ব্যাপার নয়, আসুন কারণটা শুনেই নেওয়া যাক।
সাজানো-গোছানো ঘর। নরম বিছানা-বালিশ থেকে শুরু করে আলো, পাখা- রয়েছে আধুনি জীবনযাপনের প্রায় সমস্ত বন্দোবস্তই। ঘরের সঙ্গেই লাগোয়া ছিমছাম, সুন্দর একটা বাথরুম। চাইলে এক ফোনে মিলবে রুম সার্ভিসও। এমন চমৎকার ব্যবস্থা যেখানে, সেই হোটেলে যদি বিনামূল্যে একটা রাত কাটানো যায়, তবে মন্দ কী! তা-ও আবার সুদূর স্পেনের বুকে। কিন্তু মন্দ ব্যাপার যে একখানা আছে, সে যাঁরা এ হোটেল দেখেছেন তাঁরাই জানেন।
আরও শুনুন: ঘরের ছাদ, দেওয়াল নেই… তবু হোটেল ভাড়া ২৬ হাজার টাকা, কেন জানেন?
সমস্যা হল, হোটেলটির এই বিশেষ ঘরগুলিতে থাকা মানে ‘প্রিভেসি’ বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার একেবারে দফারফা। কারণ এই আলিশান ঘরগুলির অবস্থান হোটেলের করিডোরে। তাতেও তেমন একটা সমস্যা হয়তো হত না। তবে একা রামে রক্ষে নেই সুগ্রীব দোসর; ঘরগুলির চারটে দেওয়াল-ই যে কাচের! অর্থাৎ দেওয়াল আছে বটে, কিন্তু বাইরে থেকে ঘরের সবকিছুই দিব্যি দেখা যায়। আশপাশ দিয়ে যাঁরা যাতায়াত করবেন, তাঁরা পরিষ্কার দেখতে পাবেন ঘরের ভিতরটা। ফলে এ-ঘরে শোওয়া-বসা-খাওয়া-ঘুম সবটাই একেবারে প্রকাশ্যে। এটাই নাকি ঘরগুলির ইউএসপি! স্পেনের ইবিজা দ্বীপের ‘প্যারাডাইসো আর্ট’ হোটেল কর্তৃপক্ষ এমন আশ্চর্য ব্যবস্থাই করেছেন তাঁদের রিসর্টে। এই ঘরগুলির তাঁরা নাম রেখেছেন ‘জিরো স্যুট’। বেশ ছকভাঙা চিন্তাভাবনাই করেছিল কর্তৃপক্ষ, কিন্তু এখন পুরোটাই ব্যুমেরাং হয়ে গিয়েছে! একফোঁটা গোপনীয়তা না মেলায়, বেশিরভাগ মানুষই ঘরগুলোয় থাকতে নারাজ।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এরকম আশ্চর্য ঘরে থাকার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছিলেন এক নেটিজেন। তিনি অবশ্য ব্যাপারটি বেশ উপভোগই করেছেন। কাচের ঘরে থাকার দৌলতে নাকি বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বন্ধুত্বও পাতিয়ে ফেলেছেন তিনি। সামগ্রিক ভাবে বেশ ভাল অভিজ্ঞতা তাঁর। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর পোস্টটি অবশ্য ভেসেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়ায়। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, ওই স্বচ্ছ কাচের ঘরে ভাল করে ঘুমই আসেনি তাঁদের। নেটিজেনদের কেউ কেউ ব্যপারটি দেখে অবাক হলেও, কয়েকজন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বিনামূল্যে হলেও অমন হাট-খোলা ঘরে কিছুতেই থাকতে পারবেন না তাঁরা। হোটেলটির নাম নিয়ে কেউ আবার মজা করে বলেছেন, একে এক কথায় বলে ‘প্যারাডাইস লস্ট’!
আরও শুনুন: মাটিতে দাঁড়িয়ে নেই, মেঘের মিনারে ভাসছে এই আশ্চর্য হোটেল
সস্তায় যাঁরা ভ্রমণ সারতে চান, তাঁদের জন্য এ-হোটেল হতেই পারে আদর্শ। বা যাঁরা একটু অন্যরকম যাপন পছন্দ করেন, তাঁরাও দিব্যি থাকতে পারেন কাচের দেওয়ালের এই আলিশান ঘরে। কিন্তু যদি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা খোঁজেন তাহলেই হয়ে গেল! বিনামূল্যে এই হোটেলে থাকা আপনার জন্য নয়। অধিকাংশ নেটিজেনদের যা মতামত, তাতে না-থাকার দলের পাল্লাই যে ভারী, হোটেল কর্তৃপক্ষ তা বেশ ভালই বুঝতে পারছে।