শীত তো পাতা ঝরার সময়। বিবর্ণ রুক্ষ দিন বলেই তাকে চিনি আমরা। যখন সবুজ রং মুছে ফেলে ধূসর হয়ে যায় সব গাছ। কিন্তু সেলফিশ জায়ান্টের সেই রংহীন বাগানকেই যেন নিজের হাতে বদলে দিয়েছে মানুষ। রঙে রঙে ভরিয়ে তুলে গাছের গায়ে বুনে দিয়েছে জীবনের ওম।
এল যে শীতের বেলা। তা শীত কি কেবল আপনারই লাগে? পৃথিবীর, প্রকৃতির যা কিছু অনুভূতি- সব বুঝি কেবল মানুষেরই? উঁহু, তেমনটা মনে করেন না সকলে। অনেক মানুষ তাঁদের মানবিক অনুভূতির দলে শামিল করে নেন অন্যদেরও, যাদের সহজ কথায় আমরা অপ্রাণী বলেই জানি। সেই দলেই পড়ে গাছও। আর সেই গাছের জন্যই শীতকালে সোয়েটার বোনেন দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষেরা।
কল্পনায় নয়, বাস্তবেই গাছেদের সোয়েটার পরান এই দেশের মানুষেরা। রংবেরঙের সোয়েটার। সেই যে রবীন্দ্রনাথ কবিতায় বলেছিলেন- কে রং লাগালে বনে বনে, এই গাছগুলিকে দেখলে মনে হয়, সে কথা যেন আক্ষরিক ভাবেই সত্যি হয়ে গিয়েছে। লাল নীল হলুদ সবুজ গোলাপি কমলা- রঙে রঙে যেন বর্ণালি খেলে গিয়েছে তাদের গায়ে। শীত তো পাতা ঝরার সময়। বিবর্ণ রুক্ষ দিন বলেই তাকে চিনি আমরা। যখন সবুজ রং মুছে ফেলে ধূসর হয়ে যায় সব গাছ। কিন্তু সেলফিশ জায়ান্টের সেই রংহীন বাগানকেই যেন নিজের হাতে বদলে দিয়েছে মানুষ। রঙে রঙে ভরিয়ে তুলে গাছের গায়ে বুনে দিয়েছে জীবনের ওম।
সোয়েটার তো আসলে একরকম ওম-ই। শীতপোশাকে যে উষ্ণতা ভরা থাকে, সেই উষ্ণতাকে মানবিক সম্পর্কের নিরিখেও তো দেখা যায়। গাছকে সোয়েটার পরানোও সেই উষ্ণতা হয়ে আসে, কেন-না গাছকে পোশাক পরানো তাকে একরকম সুরক্ষা দেওয়াও। কেননা অনেক পোকামাকড়ই গাছের কাণ্ডে আশ্রয় নেয়। তারা সবাই যে গাছের জন্য উপকারী, তেমনটা তো নয়। সোয়েটার খুলে ফেলে যেমন সেখানে আটকে থাকা জিনিস ঝেড়ে ফেলা যায়, গাছের সোয়েটার ঝেড়েও সেইভাবেই এইসব পোকা তাড়ানো সহজ। তাতে গাছেরই আয়ু বাড়ে।
একটি অভিনব শিল্পের প্রয়াস হিসেবেই এ কাজ শুরু হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়াতে। গাছগুলিকে নানা রঙে, নানা ধরনের সোয়েটার পরিয়ে বিভিন্ন চরিত্রের আদলও দেওয়া হয় সেখানে। সে উদ্যোগ যেমন মানুষের চোখকে আরাম দেয়, তেমনই ভালো রাখে গাছকেও। আর দুয়ে মিলেই আসলে বেড়ে ওঠে প্রকৃতি-মানুষের সম্পর্কের ওম।