কথায় বলে সাপের পাঁচ পা দেখেছ! মানে বড্ড বেশি বাড় বেড়েছে আপনার। তা সাপের আবার পা হয় নাকি! সে তো কল্পনার ফসল। তবে পুরোটা কিন্তু কল্পনা না-ও হতে পারে। অন্তত তেমনটাই বলছেন, ব্রাজিলের এক দল গবেষক। সম্প্রতি এমনই একটি সাপের ফসিল খুঁজে পেয়েছেন তারা, যেখানে মিলেছে চারটি পা থাকার প্রমাণ। শুনবেন নাকি এই চারপেয়ে সাপের গল্প?
সাপের পাঁচ পা! এ প্রবাদ যখন তখন শোনা গেলেও, সত্যিকারের সাপের পাঁচ পা দেখার সুযোগ আমাদের হয়নি। তবে এমন সুযোগ সম্প্রতি পেয়েছেন ব্রাজিলের এক দল গবেষক। পাঁচটা না হলেও, চারপেয়ে সাপের ফসিল খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা।
বিভিন্ন ফসিল ঘেঁটে জীবজগতের ইতিহাস নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাঁদের বলা হয় প্যালেন্টোলজিস্ট। এরকমই একদল প্যালেন্টোলজিস্ট ক্রিটেসিয়াস পাথরের উপরে যে ফসিলটি খুঁজে পেয়েছেন, তাতে দেখা গিয়েছে, সাপের শরীরে দিব্যি ছিল চার-চারটি পা। তবে সেই পা-কটি নিষ্ক্রিয় বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ওই যেমন মানুষের অ্যাপেনডিক্স, ঠিক তেমনই। তা এই সাপের নামটা কী? বেশ খটমটো কিন্তু। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর নাম টেট্রাপোডোফিস অ্যামপ্লেকটাস। যেমন অদ্ভুত প্রাণী, তেমনই অদ্ভুত যে নাম হবে সে তো বোঝা যাচ্ছে। এই টেট্রোপোডোফিস আসলে সাপ আর টিকটিকির মিসিংলিঙ্ক। আপাতত এমনটাই মনে করছেন গবেষকরা। অর্থাৎ, সেই মা যা ছিলেন আর মা যা হইয়াছেন – এর মাঝামাঝি যে রূপ থাকতে পারে, তারই একরকম খোঁজ দিচ্ছে এই ফসিল।গ্রীক শব্দ টেট্রাপোডোফিসের অর্থই হল চার পেয়ে সাপ। তবে একে পুরোপুরি সাপ বলা যাবে না বলেই জানাচ্ছেন এক দল গবেষক। প্রায় ১১ কোটি বছর আগে এক ধরনের সামুদ্রিক সরীসৃপ পাওয়া যেত বলে দাবি করেছেন তাঁরা, যা আজ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। এই ফসিলসটি সেই প্রাণীটির বলেই মনে করছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: বয়স প্রায় ৪০০০ বছর, এখনও অবিকৃত আছে মিশরের প্রাচীনতম মমি
অর্থাৎ, অনেকে সাপ বললেও এই ফসিলটি আদৌ সাপের কিনা তা নিয়ে সংশয় কিন্তু খানিকটা থাকছেই। পরীক্ষানিরিক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই প্রাণীটির দাঁতগুলি সাপের মতো নয়। মাথা এবং কঙ্কালও সাপের থেকে আলাদা। ২০১৫ সাল থেকেই এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। এখনও ঢের কাজ বাকি বলেই জানাচ্ছেন প্যালেন্টোলজিস্টদের দল। টেট্রাপোডোফিস অ্যামপ্লেকটাস, এই নামটি নিয়েও রয়েছে সংশয়। ইতিমধ্যেই জার্নাল অব সিস্টেমেটিক প্যালেন্টোলজিতে এই সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে।
আরও শুনুন: এককালে লম্বা নাকের ডায়নোসর বেড়াত ঘুরে, সম্প্রতি তার খোঁজ পেল মানুষ
তবে এই সাপ প্রাণীটি যে বরাবর এমন হাত-পা ,অঙ্গ-প্রত্যঙ্গহীন ছিল, তা কিন্তু নয়। প্রায় দশ কোটি বছর আগে এক ধরনের সাপের হদিশ মিলেছে, যার পিছনের দিকে দুটি পা ছিল। ২০০৬ সালে মিলেছিল সেই সাপের ফসিল। আর এতদিনে মিলেছে চার পা যুক্ত সাপের ফসিলের সন্ধান। যা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। তাই এই প্রাণীটি সাপ হোক বা না হোক, এই মিসিংলিঙ্ক বিবর্তনের ইতিহাসে বড়সড় রসদ জোগাবে বলেই মনে করছেন গবেষকেরা। আর এই যে কথায় কথায় আমরা বলে ফেলি, ‘সাপের পাঁচ পা দেখেছ!’, এককালে যে সত্যিই সেরকম কিছু দেখা যেত, এতদিনে যেন তা ধীরে ধীরে স্পষ্টই হচ্ছে।