দীপাবলিতে বাজি পোড়ানোর নিয়ম বহুকালের। শোনা যায়, এর সঙ্গে রামায়ণের যোগ রয়েছে। কেউ আবার বলেন, বাজি-বারুদের জন্ম চিনে। সত্যিটা ঠিক কী? কীভাবে শুরু হল দীপাবলিতে বাজি পোড়ানোর নিয়ম? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দীপাবলি। আলোর উৎসব। আতশবাজিরও বটে। সেখানে অবশ্য শুধু আলো নেই। রয়েছে শব্দও। সঙ্গে দোসর দূষণ। পরিবেশের কথা ভেবে অনেকেই বাজি পোড়ানোয় রাশ টানেন। কখনও প্রশাসনের তরফেও জারি হয় সে নিয়ম। কিন্তু এসবের ভিড়ে একটা তর্ক থেকেই যায়, কোথা থেকে এল এই বাজি আর বারুদ?
ভারতে দীপাবলি উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে রামায়ণের কাহিনি। মনে করা হয়, এই দিনেই রাবন বধের পর ঘরে ফিরেছিলেন রামচন্দ্র। আলোয় আলোয় সেজে উঠেছিল গোটা অযোধ্যা। অবশ্যই প্রদীপের আলো। তবে তার সংখ্যা ছিল এতটাই বেশি যে, রাতের অন্ধকারে দিনের সমান আলো হয়েছিল চারদিক। সেই রীতি বজায় রাখত এখনও মহা সমারোহে দীপাবলি পালন হয় গোটা দেশে। প্রধাণত উত্তরের রাজ্যগুলিতে এটিই প্রধান উৎসব। বাড়িতে আলো জ্বালানো রীতি রয়েছে সর্বত্র। তবে আলো জ্বালানোর থেকেও বেশি গুরুত্ব পায় বাজি পোড়ানো। এতেও রকমারি আলোর দেখা মেলে। তবে দূষণও নেহাতই কম হয় না। তার কারণ বাজির মধ্যে থাকা নানা রাসায়নিক। সেসবের বিক্রিয়ার ফলেই বাহারি আলো তৈরি হয়। শব্দও প্রায় সেই কারণে। কিন্তু এর থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া বাতাসে মিশে যায়। তাতেই ব্যাপক দূষণ ছড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে এতটাই যে মানুষ অসুস্থ অবধি হয়ে যায় অনায়াসে। এছাড়া বাজিতে থাকা বারুদ খাবারের সঙ্গে মিশলে পেটের সমস্যা হতে বাধ্য। এই বারুদ দেশলাই তেও থাকে। সেই হিসেবে অনেকেই ভেবে নেন বাজি এবং বারুদের জন্ম চিনে। কারণ গোটা বিশ্বও যে কয়েকটি বিশেষ জিনিস আবিস্কারের তকমা চিনকে দিতে যায়, বারুদ তার অন্যতম। এখানেই সমস্যা। আপাতভাবে বারুদকে চিনের আবিস্কার বললেও, এর সঙ্গে ভারতের যোগ নেহাতই কম নয়।
রামায়ণ প্রসঙ্গ বাদ রাখলেও দীপাবলি এবং বাজির সঙ্গে ভারতের একাধিক যোগ মেলে। প্রাচীন পুঁথিতেই সে হদিশ মেলে। চানক্যের শাস্ত্র হোক বা পুরনোপুঁথি, নানা ভাবে বারুদের উল্লেখ মিলেছে সেখানে। বিশেষ এক রাসায়নিকের কথা বলা হয়েছে বিভিন্ন গ্রন্থে। যা আসলে বারুদ হিসেবে বর্তমানে ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয়, গন্ধকের মতো একাধিক দাহ্য পদার্থের উল্লেখও মেলে প্রাচীন গ্রন্থে। এ প্রসঙ্গেই বিশেষজ্ঞদের দাবি, চিনে আবিস্কার হলেও বারুদ সম্পর্কে ধারণা তৈরি করেছিল ভারতই। বিখ্যাত এক ইতিহাসবিদও দাবি করেছেন, চিনের বারুদ আবিস্কারের অনুপ্রেরণা ভারত। কিন্তু এই বারুদই বাজিতে ব্যবহার করা হত কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তাহলে কি বাজি আবিস্কার করল চিন?
একেবারেই না। এক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে কথা বলছে, পুরনো কিছু ভারতীয় ছবি। প্রাচীন ভারতের সেইসব ছবিতে আতশবাজি দেখা গিয়েছে। সেযুগে কারা কীভাবে তৈরি করতেন বাজি তা জানা না গেলেও, বাজির ব্যবহার করতে মানুষ জানত একথা বলাই যায়। তারাবাতি, তুবড়ি সব একাধিক আলোর বাজি পুরনো ছবিতে দেখা যায়। মুঘল আমলেও এর চল ছিল রীতিমতো। সবই ধরা পড়েছে সে যুগের হাতে আঁকা ছবিতে। এছাড়া পুরনো রীতি রেওয়াজ তো রয়েছেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা লৌকিক উৎসবে বাজি পোড়ানোর চল রয়েছে। সেই সূত্র ধরেও অনায়াসে বলা যায় বাজির জন্ম এ দেশেই। এমনকি যুদ্ধে বাজির ব্যবহার হচ্ছে এমন উদাহরণও মিলেছে। সেখানে আবার দূষণ ঘটাচ্ছে এমন বাজির উল্লেখ রয়েছে। শত্রুকে ঘায়েল করতে কাজে লাগানো হত সেসব। বর্তমানে যে বাজি পোড়ানো হয়, তাতেও এই দূষণের মাত্রা ভয়াবহ। তবে যুদ্ধক্ষেত্রেও ঠিক এই বাজিই ব্যবহার হত কি না সে প্রমাণ মেলেনি।