রঙের গায়ে যেটুকু নামপরিচয় লেগে থাকে, তার সঙ্গে নিজের মতো অর্থ জুড়েই কালার প্যালেট বানায় মানুষ। যা কোথাও ছিল না, অর্থ জুড়ে জুড়ে তাকে সত্যি করে তোলে। আর এখানেই মানুষের রংবাজি।
‘পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন’… সেই রং নিভে যাওয়া অন্ধকারে জেগে থাকে কেবল এক মুখ। হাজার বছরের পথ পেরিয়ে সমস্ত না-পাওয়ার রং যাকে তুলে দেওয়া যায়। ধূসর নীলাভ তারার রঙে যে আসলে সেই পথ চাওয়ার রং লেগে আছে, সে কথা তো মানুষই জেনেছে, তারারা নয়। আর মানুষেরই তো সে কথা জানার কথা। নিজের চেতনার রঙেই সে চুনিকে লাল রঙে রাঙাতে পারে, আর পান্নাকে সবুজ। সেই যেমন সেই মেয়েটা একটা গোলাপি শাড়ির নাম রেখেছিল ‘অভিমান’, আর তেজপাতা রং শাড়িটার নাম ছিল বিষাদ। কিন্তু বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পাওয়া মেয়েটার জীবন থেকে যেদিন সব রং মুছে গিয়েছিল, সেদিন তার থানের সাদা রং ছিল না-পাওয়ারই অন্য নাম।
আসলে, রঙের গায়ে যেটুকু নামপরিচয় লেগে থাকে, তার সঙ্গে নিজের মতো অর্থ জুড়েই কালার প্যালেট বানায় মানুষ। যা কোথাও ছিল না, অর্থ জুড়ে জুড়ে তাকে সত্যি করে তোলে। আর এখানেই মানুষের রংবাজি।
আরও শুনুন:
যে বসন্ত আসার কথা, সচরাচর আর আসে না
চেতনায় নয়, আমাদের অচেতনে চেনা প্রথম রং হয়তো বলা চলে লাল-কেই। শিরায় শিরায় বয়ে চলা রক্তের রং। কখনও বিবাহিতা নারীর সিঁথির সিঁদুরে, কখনও ভক্তের তিলকে নজরকাড়া উপস্থিতি তার। লাল রং প্রেমের রং, আবার বিপ্লবেরও। আসলে তো দুয়েরই মূল কথা যৌথতাই, নয় কি?
আবার কেউ কেউ হয়তো বলে ওঠেন, ‘নীল রং ছিল ভীষণ প্রিয়…’। আকাশ আর সমুদ্র, দুয়েরই রং নীল। নীল রঙে তাই জুড়ে আছে অনন্তের ইশারা। শুদ্ধতার ইঙ্গিত। হয়তো সেই ইঙ্গিত টেনেই হিন্দু ধর্মের প্রাঙ্গণেও এ রঙের আনাগোনা। কখনও শিবের গাত্রবর্ণে, কখনও বা কৃষ্ণ বা রামের গায়ের রঙে, নীল রংই সগৌরবে উপস্থিত।
নীল আর সবুজ দুই রংই খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকে, কারণ মূলত এই দুই রঙেই নিজেকে গড়ে তুলেছে প্রকৃতি। সবুজ রং প্রাণের প্রতীক। আবার গাছের পাতায় যে সবুজ রং যৌবনেরও ইশারা বয়ে আনে, সেই পাতার হলুদ রঙেই শোনা যায় ঝরে পড়ার গান। তা বলে হলুদ কি কেবলই শেষের প্রতীক? তাও তো নয়। আসলে ঝরে পড়ার মধ্যেই যে নতুন শুরুর সুযোগ থাকে। তাই সবুজ আর হলুদে মিলেই লেখা হয় একটা গোটা যাত্রার কাহিনি।
আরও শুনুন:
বসন্ত কি কেবল পলাশের, সজনে ফুলেরও নয়!
রং আসলে মিলিয়ে দেয়। আবার রঙেই টানা হয় বিভাজনও। সে ভাগ টানে মানুষই। রঙের তো এত ভেদাভেদের জ্ঞান নেই। থাকবেই বা কী করে, সে থোড়াই জানে নিজের এতরকম অর্থ আর বৈচিত্র্য! সেসব তো মানুষই দিয়েছে তাকে। তবে এহেন রংবাজির উত্তরে রংও কিন্তু তাকে পালটা দিতে ভোলেনি। মানুষ জানে, কিছু কিছু রং বড্ড বাঁদুরে। স্মৃতির মতোই নাছোড়বান্দা, যা একবার লেগে গেলে আর পিছু ছাড়ে না কিছুতেই।