হোক ম্যানিকিন, তবু মহিলাদের মতোই তো গড়ন! পোশাক-আশাকও সেরকম। অতএব তালিবানি ফতোয়া ছুটেছে ম্যানিকিনদের দিকেও। নতুন তালিবানি ফতোয়ার জেরে কাপড়ের দোকানে থাকা মহিলা-পতুল বা ম্যানকিনের মুখও এবার তাই ঢেকে রাখছেন দোকানিরা। সেই মুখ ঢাকা পুতুলের ছবি নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে কী বলছেন সে-দেশের নারীরা? আসুন, শুনে নিই।
শুধু রক্তমাংসের শরীর থাকলেই নয়। দেখতে নারীর মতো হলেও তার উপর জারি হবে ফতোয়া। মানুষ ছেড়ে এবার তালিবানের লক্ষ্য মানুষের মতো দেখতে পুতুল! আফগানভূমে প্রকাশিত এই নতুন ফতোয়ায় জানানো হয়েছে, সেখানকার পোশাকের দোকানে থাকা মেয়ে পুতুলগুলির মুখও কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
আরও শুনুন: টেলিভিশনের পর্দায় এলে ঢাকতেই হবে মুখ, আফগান মেয়েদের ‘চূড়ান্ত’ নির্দেশ দিল তালিবান
কিছুদিন আগেই বিজ্ঞাপনে মেয়েদের মুখ না দেখানোর ফতোয়া জারি করেছিল তালিবান গোষ্ঠী। এবার আরও এক তালিবানি ফতোয়ার মুখোমুখি হলেন আফগানভূমের নারীজাতিকে। তবে এই নতুন ফতোয়া কোনও রক্তমাংসের নারীর জন্য নয়। বলা বাহুল্য, তাঁদের ইতিমধ্যেই হাজারো ফতোয়ার বাঁধনে বেঁধে ফেলা হয়েছে। তাই তালিবানদের এই নতুন ফতোয়া, মেয়েদের মতো দেখতে পুতুলগুলির জন্য। আফগানিস্তানের বিভিন্ন কাপড়ের দোকানে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মহিলাদের পোশাক পরা কোনও পুতুল বা ম্যানিকিনের মুখ না ঢেকে রাখা যাবে না। অন্য কোনও কাপড় বা কাগজ দিয়ে সেগুলির মুখ ঢেকে রাখতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে বেশ কিছু দোকান সেই আদেশ পালনও করেছে। পোশাক প্রদর্শনের জন্য রাখা ম্যানিকিনগুলির মুখ তাঁরা ঢেকে দিয়েছেন কাপড় দিয়ে। আর সেই মুখ ঢাকা ম্যানিকিনের ছবিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আরও শুনুন: মেয়ের চোখ খুবলে নিয়েছে তালিবান, সব জেনেও মুখে কুলুপ বাবার
ফতোয়ার পর ফতোয়ায় দুঃস্বপ্ন যেন শেষ হচ্ছে না আফগান মেয়েদের জীবনে। নিত্যনতুন নির্দেশ আর নিষেধাজ্ঞা ক্রমশই তাঁদের পায়ে আঁট হয়ে বসছে। তালিবানের হাতে শাসনভার যাওয়ার পর থেকেই আমূল বদলে গিয়েছে আফগানিস্তানের রাস্তাঘাটের ছবি। কড়া নিয়মের বেড়াজালে আর কোনও মহিলাই সে দেশে বোরখা ছাড়া রাস্তায় বেরনোর কথা ভাবতে পারেন না। একইভাবে না তাঁরা গান গাইতে পারেন, না তাঁরা হিল তোলা জুতো পরতে পারেন। হাজার ফতোয়ার শৃঙ্খলে জর্জরিত হয়ে তাঁরা যেন কোনওক্রমে দিনযাপন করছেন। আর এই সব কিছু মিলিয়েই শঙ্কিত সারা বিশ্ব। গত কুড়ি বছরে যেটুকু অধিকার অর্জন করেছিলেন মেয়েরা, তালিবান শাসনে তা জলাঞ্জলি দিতে হবে বলেই মনে করছেন সকলে। স্বাভাবিক ভাবেই মুখ ঢাকা পুতুলের ছবি দেখেও ফের ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন নেটিজেনরা। সকলেরই মিলিত দাবি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী একজোট হয়ে লড়াই করুক। এ বিষয়ে জনৈক সারা ওয়েহেদি নামে এক মহিলা বলেই ফেলেছেন, ‘এই অবিশ্বাস্য ছবিগুলি থেকে স্পষ্ট, বাকি দুনিয়ার সমর্থন না পেলে, আফগান মহিলাদের জীবন ঠিক কতখানি দুর্বিষহ হয়ে উঠতে চলেছে।’ বলাই বাহুল্য, তাঁর এই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন নেটিজেনরা। তবে এই ডিসটোপিয়া থেকে সে-দেশের নারীরা যে কবে বেরোতে পারবেন, তার উত্তর বোধহয় কারও কাছেই নেই।