তাজমহল মানেই তো শাহজাহান-মমতাজের অমর প্রেম। তাজমহল মানেই ধবধবে সাদা শ্বেতপাথরের দারুণ সুন্দর এক স্থাপত্য, যা বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটিও বটে। কিন্তু কেমন হত, যদি কৃষ্ণপাথরের তৈরি একখানা তাজমহল থাকত। তাও আবার দুধসাদা তাজমহলের ঠিক উল্টোদিকেই। মাঝখানে বয়ে যেত যমুনা নদী। কেমন হত ব্যাপারখানা। এমনই একখানা পরিকল্পনা ছিল নাকি খোদ শাহজাহানের। আর কী ভেবেছিলেন শাহজাহান? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
প্রিয় পত্নী মমতাজের স্মৃতির উদ্দেশে তাজমহল বানিয়েছিলেন মোগল সম্রাট শাহজাহান। আগ্রার সেই তাজমহল আজও ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় দ্রষ্টব্য স্থান। কথিত আছে, শ্বেতপাথরের তৈরি ওই তাজমহল বানানোর পরে নাকি রাজমিস্ত্রিদের হাত কেটে নিয়েছিলেন মোগল সম্রাট শাহজাহান। যাতে আর কোথাও দ্বিতীয় কোনও তাজমহল তৈরি না হতে পারে। আবার এ-ও শোনা যায়, নিজেই নাকি একটি দ্বিতীয় তাজমহল বানাতে চেয়েছিলেন শাহজাহান। না, যে সে রেপ্লিকা নয়। বরং কৃষ্ণপাথরের তৈরি একটি তাজমহল বানাতে চেয়েছিলেন তিনি। আর তা হবে যমুনার অন্য পারে।
আরও শুনুন: শত্রুদের চোখে ধুলো দিতে লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল আস্ত তাজমহল, কীভাবে জানেন?
যমুনার এক পারে থাকবে শ্বেতশুভ্র তাজমহল, যা সম্রাট বানিয়েছিলেন তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশে। অন্য পারে থাকবে কৃষ্ণকায় ওই দ্বিতীয় তাজমহলটি। যা তৈরি হবে কালো মার্বেল পাথর দিয়ে। তাজমহল অর্থাৎ যেটি মুমতাজ মহল, সেটি শাহজাহান বানাতে শুরু করেন ১৬৩১ সালে। শেষ হয় ১৬৫৩ সালে। মৃত্যুর পর সেখানেই শুয়ে রয়েছেন শাহজাহানের প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ বেগম। আর দ্বিতীয় তাজমহলটি আসলে শাহজাহান বানাতে চেয়েছিলেন নিজের সমাধিক্ষেত্র হিসেবেই। সেই কৃষ্ণ তাজমহলের কাজ যখন শুরু হবে হবে, সেই সময়ই পুত্র ঔরঙ্গজেবের কোপে পড়লেন শাহজাহান। ছেলের হাতে বন্দি হলেন আগ্রা ফোর্টে। কৃষ্ণ-তাজমহলের স্বপ্ন তাই স্বপ্নই রয়ে গেল তাঁর। জীবনের শেষ কয়েকটা বছর অন্ধকারের পিছনেই কেটেছিল তাঁর। ১৬৬৬-তে শাহজাহানের মৃত্যুর পর তাঁকে মমতাজের সমাধির পাশেই সমাধিস্থ করা হয়।
কিন্তু জানেন, আদতে তেমন ইচ্ছা মোটেই ছিল না সম্রাটের। বরং নিজের সমাধির জন্যই নাকি ওই কালো পাথরের তাজমহলটি তৈরি করতে চেয়েছিলেন শাহজাহান। ধবধবে সাদা তাজমহলটিতে শায়িত থাকবেন প্রিয়তমা স্ত্রী, আর তার ঠিক উল্টোদিকে কৃষ্ণকায় তাজমহলে থেকে যাবেন তিনি, এমনই ছিল সম্রাটের ইচ্ছা। আর মাঝখান দিয়ে প্রেমের স্মারক হয়ে বয়ে যাবে যমুনা নদী।
আরও শুনুন: কেবল শাহজাহান নন, প্রিয়জনের স্মৃতিসৌধ গড়েছিলেন ভারতের এই রানিরাও
তবে সত্যিই এমন কিছু ভেবেছিলেন কিনা শাহজাহান, তা তেমন প্রামাণ্য ভাবে জানা যায়নি। শুধু এক ফরাসি পরিব্রাজকের ভ্রমণকথায় উল্লেখ ছিল এই প্রসঙ্গ। ১৬৪০ থেকে ১৬৫৫ সালের মধ্যে ভারতে আসেন জিন ব্যাপটাইস টাভেরনিয়ার নামে ওই পর্যটক। তাঁর বইতে তিনি লিখেছেন, সে সময় নাকি ওই কৃষ্ণ-তাজমহল বানানোর কাজে হাত দিয়েছেন শাহজাহান। স্থানীয় কয়েকজনের মতে, শ্বেত তাজমহল থেকে কৃষ্ণ তাজমহলকে যুক্ত করার জন্য যমুনা নদীর উপর দিয়ে একটি সেতু তৈরি করারও পরিকল্পনা ছিল এই মোগল সম্রাটের। সেটি নাকি তৈরি হত আবার খাটি রূপো দিয়ে।
বেশ কয়েক জন পূরাতাত্বিকের মতে, মমতাজের সমাধির দিকে ভাল করে দেখলেই বোঝা যায়, সেটি পরিকল্পনা করে তৈরি। কিন্তু মৃত্যুর পরে যেখানে শায়িত রয়েছেন শাহজাহান, সেই জায়গাটি অতটা সাজানো বা পরিকল্পনা মাফিক নয়। সত্যিই শাহজাহান কৃষ্ণ তাজমহল বানাতে চেয়েছিলেন কিনা টাভেরনিয়ারের বই বাদ দিলে অন্য কোথা থেকে সে কথা জানা যায়নি। এমনকি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে খননের কাজও করা হয়েছে। তবে মাটির তলায় কৃষ্ণ তাজমহলের কোনও ভিত পর্যন্ত মেলেনি। তবে মেহেতাব বাগের কাছে বেশ কিছু কালো পাথর পাওয়া যায়। তবে গবেষকদের ধারণা, ওগুলো আসলে সাদা পাথরই, যা বহু বছর ধরে থাকার ফলে যা আসল রং হারিয়েছে।
আরও শুনুন: তাজমহল তো বটেই, ৫৪৫ জন সদস্য-সহ পার্লামেন্টটিকেও বেচে দিয়েছিলেন তিনি! জানেন কে এই ব্যক্তি?
শাহজাহান আদৌ অমন কালো পাথরের তাজমহল বানাতে চেয়েছিলেন কিনা, তা তো তর্কের বিষয়। তবে সত্যিই যদি এমন একটা কৃষ্ণ তাজমহল থাকত, তাহলে বোধহয় মন্দ হত না বলুন। যমুনা নদীর দুই পারে মোগল সম্রাটের প্রেমের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকত শ্বেত আর কৃষ্ণ তাজমহল, আর দুটি তাজমহলকে জুড়ে থাকত রূপোর অমন একটা সেতু। সুন্দর তাজমহলের সৌন্দর্য আরও কয়েক গুণ বেড়ে যেত বোধহয়।