রাতারাতি মাস্কের ব্যবহার শিরোধার্য হয়ে উঠেছে আমাদের জীবনে। অনেকেই একবার ব্যবহার করে ফেলে দিচ্ছেন মাস্ক। এই ডিসপোজেবল মাস্ক গিয়ে জমছে সমুদ্রের তলায়। আর সে কারণেই বিপন্ন হতে পারে সামুদ্রিক প্রাণ। এমনটাই আশঙ্কা পরিবেশবিদদের।
এই সেদিনও আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনের ধরন ছিল আলাদা। বাইরে বেরোলে মাস্ক তখন অবধারিত ছিল না। কিন্তু করোনা এসে বদলে দিয়েছে সবকিছুই। আর তাই স্বাস্থ্যের খাতিরেই এখন মাস্ক ছাড়া বেরোনো মোটেও উচিত নয়। এ নিয়ে তো কোনও সমস্যা নেই। মানুষ এখন মাস্ক ব্যবহারে রীতিমতো অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। কিন্তু সমস্যাটা তৈরি হচ্ছে মাস্ক ব্যবহারের পরে। ডিসপোজেবল মাস্ক একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া উচিত। সারা বিশ্বে অধিকাংশ মানুষই তাই করছেন। কিন্তু করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে আর এক বিপত্তি। এই মাস্কের অধিকাংশই গিয়ে জমা হচ্ছে সমুদ্রের তলায়। যা দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত পরিবেশবিদরা।
আরও শুনুন: করোনার মারণক্ষমতা কমলে কতটা স্বস্তি পাবে সাধারণ মানুষ? চিকিৎসক বলছেন…
পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এরকম একটি সংস্থা ‘ওসান এশিয়া’, তারাই এই বিপদের কথা নজরে আনে ২০২০ সালে। সংস্থার অনুমান ছিল, প্রায় ১.৫৬ বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি ডিসপোজেবল মাস্ক গিয়ে জমা হতে পারে সমুদ্রের বুকে। আসলে মাস্ক ব্যবহারের পর তা নষ্ট করে ফেলা বা যাকে বলা হয় ‘গারবেজ ম্যানেজমেন্ট’, তার সঠিক নির্দেশিকা বহু জায়গাতেই নেই। ফলে যেখানে সেখানে গিয়ে পড়ছে এই ধরনের মাস্ক। আর শেষ পর্যন্ত তাদের ঠাঁই হচ্ছে সমুদ্রের গভীরে। এই ধরনের মাস্ক ক্রমে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উৎস হয়ে ওঠে। যা ধ্বংস হতে অন্তত ৪৫০ বছর তো লেগেই যাবে। বোঝাই যাচ্ছে, কী পরিমাণ দূষণের ইঙ্গিত দিচ্ছে এই জমা হওয়া মাস্ক। প্লাস্টিক দূষণের কারণে এমনিতেই সামুদ্রিক প্রাণ জর্জরিত। তার উপর এই মাস্কের ফলে যে দূষণ তৈরি হচ্ছে তা যে জলের অধিবাসীদের জীবন বিপন্ন করে তুলবে এমনটাই আশঙ্কা পরিবেশবিদদের। মাস্কে যেহেতু মানুষের কানে আটকানোর জন্য ফাঁস থাকে, এই ফাঁস গলায় আটকে মারা যেতে পারে অনেক সামুদ্রিক প্রাণী, এমন আশঙ্কাও করা হয়েছে। দেখতে দেখতে করোনাকে সঙ্গী করে আরও একটা বছর প্রায় শেষ হতে চলল। খুব স্বাভাবিক ভাবেই এখন এই মাস্কের সংখ্যা আরও বেড়েছে। অর্থাৎ সমুদ্রের তলায় প্রায় মাস্কের পাহাড় জমেছে বললে ভুল বলা হবে না। প্লাস্টিক দূষণের মতোই আর এক ভয়াবহ দূষণের ভার বইতে হবে পৃথিবীকে।
আরও শুনুন: লিঙ্গসাম্যের বার্তা দিয়ে বিজ্ঞাপন তো বদলায়, সমাজের মন কি পালটায়?
এই দূষণ রোধে মানুষেরও অবশ্যই কিছু ভূমিকা আছে। যথা, যত্রতত্র মাস্ক না ফেলা। নির্দিষ্ট জায়গায় মাস্ক বা এই ধরনের ব্যবহৃত সামগ্রী ফেললে, এইরকম আবর্জনা ধ্বংস করার বন্দোবস্ত কমবেশি সব জায়গাতেই আছে। কিন্তু চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেললে, ক্রমাগত তা পরিবেশ দূষণ বাড়িয়েই চলবে। দ্বিতীয়ত, যদি সম্ভব হয় তো এমন মাস্ক পরা উচিত যা বারবার ব্যবহার করা যায়। চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞদের অনুমতি নিয়ে কাপড়ের মাস্ক পরা যেতে পারে। তবে, সবার আগে জরুরি সচেতনতা। আমাদের ছুড়ে ফেলা মাস্কে যে একটি প্রাণ বিপন্ন হচ্ছে, এই বোধ জাগলে তবেই বোধহয় এই ভয়াবহ দূষণকে খানিকটা হলেও ঠেকানো যাবে।