সর্দিকাশিতে নাক বন্ধ। মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা। ঠোঁট ফেটে একাকার। কিন্তু শুধু নাক বা ঠোঁট নয়, আরও একটা অংশ দিয়েও কিন্তু শ্বাস নেওয়ার বিকল্প খোলা রয়েছে প্রাণীদের কাছে। কী সেটা শুনলে অবাক হবেন নিশ্চিত! তবে সম্প্রতি এমনই তথ্য ধরা পড়েছে বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণায়। যেখানে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে নাকি পায়ু দিয়েও শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারে প্রাণীরা। এমন বিদঘুটে কথা শুনেছেন কখনও! আর কী বলছেন এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা, আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
প্রাণী জগতে এ ব্যাপারটি নতুন কিছু নয়। বহু জলচর প্রাণীই ফুলকার বদলে অন্ত্র দিয়ে শ্বাস নিতে পারে। পারে বহু পোকামাকড়ও। ক্যাটফিশ কিংবা মাকড়সার মতো বহু প্রাণীরই রয়েছে এই বিশেষ ক্ষমতা। ব্যাঙ যেমন শ্বাস নিতে পারে তার ত্বকের সাহায্যে। কচ্ছপ আবার শ্বাস নিতে পারে তার পায়ু দিয়েই। আর সেই ব্যাপারটি থেকেই অনুপ্রাণীত হয়ে সম্প্রতি গবেষণা শুরু করেছিলেন জাপানের একদল বিজ্ঞানী।
আরও শুনুন: ভুল অস্ত্রোপচারে বাদ পড়ল খুদের শুক্রনালী, ক্ষতিপূরণের দাবি আত্মীয়দের
কচ্ছপের বিপাক প্রক্রিয়া নাকি চলে অত্যন্ত ধীর গতিতে। সেই ব্যাপারে পড়াশোনা করতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, তার অন্যতম কারণ তাদের শ্বাস নেওয়ার এই অদ্ভুত ক্ষমতা। পরীক্ষার পরে জানা যায়, কচ্ছপের অন্ত্রে শ্লেষ্মা বা মিউকাসের যে আস্তরণ, তা ভীষণই পাতলা। ফলে অক্সিজেন সরবরাহ করা সোজা ওই জায়গায়। আর সেই কারণেই পায়ুর মাধ্যমে কিছুটা হলেও শ্বাসকার্য চালাতে পারে কচ্ছপ। যা তাদের শীতকালে টিকে থাকতে সাহায্য করে বেশ খানিকটা।
আর এই ব্যাপারটিই ইঁদুর ও শূকরের উপর পরীক্ষা করেন বিজ্ঞানীরা। তবে প্রথম পর্যায়ে আরও বেশ কিছু প্রাণীর উপরে পরীক্ষা করা হয়। মোট তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল প্রাণীগুলিকে। প্রথম ভাগে এমন প্রাণী রাখা হয়, যাদের অন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। দ্বিতীয় পরীক্ষায় রাখা হয় এমন প্রাণীদের, যাদের অন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাসকার্য চালানোর ক্ষমতা রয়েছে। দুটি পরীক্ষাতেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার পথ।
দেখা যায়, প্রথম পরীক্ষায় প্রাণীগুলির মৃত্যু হয় ১১ মিনিটের মাথায়, কিন্তু দ্বিতীয় ভাগে প্রায় ১৮ মিনিট পর্যন্ত বেঁচে ছিল তারা। অর্থাৎ অন্ত্রের সাহায্যে অক্সিজেন নিতে পারার কারণেই বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পেরেছে তারা। চূড়ান্ত পরীক্ষাটি করা হয় ইঁদুর এবং শূকরের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণীর উপরে। নাকের পথ বন্ধ করে তাদের প্রত্যেকেরই পায়ুপথ দিয়ে অক্সিজেন পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন বিজ্ঞানীরা। তার সঙ্গে করা হল আরেকটি কাজ। তাদের প্রত্যেকের অন্ত্রের মিউকাস স্তরটিকে পাতলা করে দেওয়া হল।
দেখা গেল, তাদের প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রাণীই এক ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে রইল। ক্লিনিকাল অ্যান্ড ট্রান্সলেশনাল রিসোর্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনসাইটস নামে একটি জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে এই গবেষণা।
আরও কপি- ছোটবেলার কথা মনে আছে! জানেন, কেন জন্মের প্রথম বছর দুয়েকের কথা মনেই থাকে না?
বেশ কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা সফল হলেও মানুষের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকছেই। তবে সত্যিই যদি কোনওদিনও তা সম্ভব হয়, তা চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রভূত কাজে আসবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীমহল। অনেকসময়ই ফুসফুস বা হৃদযন্ত্রের সমস্যায় স্বাভাবিক শ্বাসপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। অন্ত্রের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সেক্ষেত্রে এই উপায়ে অক্সিজেন সরবরাহ সম্ভব বলেই মনে করছেন তাঁরা। তবে আদৌ মানুষের ক্ষেত্রে তা সফল হবে কিনা, তা এখনই জোর গলায় বলতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এই গবেষণা সফল হলে, চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলতে পারে বলেই আশা বিজ্ঞানীদের।