আপেলের স্বাদ বা পুষ্টিগুণের কথা তো সকলেই জানেন। তবে এই আপেলই যে হয়ে উঠতে পারে বিকল্প প্লাস্টিকের উৎস, ভেবেছেন কখনও? তবে তেমনই অভিনব প্লাস্টিক আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন একদল বাঙালি বিজ্ঞানী। শুধু প্যাকিংয়ের কাজেই নয়, চাইলে নাকি খেতেও পারেন সেই জৈব প্লাস্টিক। কী বলছেন গবেষকেরা? শুনে নিন।
এই আপেলের হাতছানিতেই একদিন স্বর্গচ্যূত হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম মানব। আবার সেই আপেলই একদিন খুলে দিয়েছিল বিজ্ঞানের পথ। বাগানে বসে গাছ থেকে আপেলের পতন দেখতে দেখতেই তো নিউটন আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন যুগান্তকারী সব সূত্রের। ফলে এই আপেলের অবদান যে যুগে যুগে অনস্বীকার্য তা বলাই বাহুল্য। স্বাদে হোক বা পুষ্টিতে আপেলের জুড়িদার কিন্তু খুঁজে পাওয়া কঠিন। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে পরিবেশ দূষণের মতো সমস্যা নিয়ে যখন জেরবার গোটা বিশ্ব, প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে উদ্বেগে ভ্রু কুঞ্চিত করছেন তাবড় পরিবেশবিদেরা, তখন সমাধানসূত্র বাতলাচ্ছে সেই আপেলই। কী ভাবে? সেই গল্পই শোনাতে চলেছি আপনাদের।
কথায় বলে ‘An apple a day, keeps the doctor away’। রোগব্যাধি তো বটেই, তা সেই আপেলই যে হয়ে উঠতে পারে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে বড়সড় হাতিয়ার, তা ভেবেছিলেন কখনও? তবে এমনই অভিনব ভাবনা ভেবে ফেলেছেন চেক প্রজাতন্ত্রের থমাস বাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বাঙালি গবেষক। তাঁরা বানিয়ে ফেলেছেন এক ধরণের জৈব প্লাস্টিক, তাও আবার আপেল দিয়ে। মানে ধরুন, বাজার থেকে আপনি এক কেজি আপেল কিনে বাড়ি ফিরলেন। সেই আপেল বয়ে আনলেন আপেল থেকে তৈরি করা প্লাস্টিকেই! কেমন হত বলুন তো ব্যাপারখানা।
আরও শুনুন: মানুষের মতো কথা বলতে পারে ব্যাঙের ছাতাও! গবেষণায় উঠে এল আশ্চর্য তথ্য
শিমলা বা কাশ্মীরের মতোই চেক প্রজাতন্ত্রেও প্রচুর পরিমাণে আপেল উৎপন্ন হয় প্রতি বছরই। সেই গালা প্রজাতির আপেলের বেশ কিছুটা অংশ বাজারজাত হলেও বড় একটা অংশ পচে নষ্ট হয়। সেই অপচয় রুখতেই এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন থমাস বাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষক দলটি। অতিরিক্ত ওই আপেল দিয়েই বানিয়ে ফেলেছেন বায়োডিগ্রেডেবল একধরণের প্লাস্টিক, যা আবার নাকি খাওয়ারও উপযোগী।
কীভাবে তৈরি হচ্ছে ওই প্লাস্টিক?গবেষণার নেতৃত্বে থাকা বাঙালি গবেষক ড. স্মারক বন্দোপাধ্যায় জানালেন, আপেলের অংশগুলিকে ব্যাকটেরিয়াল সেলুলোজে রূপান্তরিত করার জন্য ব্যাবহার করা হয় অ্যাসিটোব্যাক্টার জাইলিনাম নামক এক জীবাণুর। পাশাপাশি আপেলের পিএইচ স্তরকে আম্লিক করা হয় কৃত্তিম উপায়ে। এখানেই শেষ নয়। যেহেতু ব্যাকটেরিয়াল সেলুলোজের নিজস্ব থার্মোপ্লাস্টিসিটি বা সিলিং প্রপার্টি নেই, তাই তাকে আরও কিছু পচনশীল পদার্থের সাথে মিশ্রিত করা হয়। এই পলিমারিক মিশ্রণে লবঙ্গ তেল ও দারুচিনি তেল ছাড়াও ব্যাবহার করা হয় লাল বাঁধাকপির রস। সেখান থেকেই তৈরি হয় একধরনের বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক।
আরও শুনুন: শুধু পরিবেশেই নয়, রক্তেও বিষ ঢালছে মাইক্রোপ্লাস্টিক! হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি
না, শুধুমাত্র প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবেই নয়, এই বায়োডিগ্রেডবল প্লাস্টিকের ফিল্মগুলি নাকি দীর্ঘদিন পর্যন্ত খাবারকে ভাল রাখতেও সাহায্য করবে। এমনকি খাবারটি ঠিক আছে কিনা তা-ও বুঝতে সাহায্য করবে এই প্লাস্টিক। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ব্লু-বেরি বা টমেটোকে দিন পনেরো পর্যন্ত টাটকা রাখতে পেরেছে এই জৈব প্লাস্টিক। চিজ বা ড্রাই ফ্রুটসের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে এই প্লাস্টিকের ফিল্ম।
এডিবেল বা খাওয়ার উপযোগী জৈব প্লাস্টিক নতুন নয়। তবে আপেল থেকে তৈরি এই ধরনের প্লাস্টিক পৃথিবীতে প্রথম বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের। আর এই গবেষণা সফল হলে প্যাকেজিং ইন্ড্রাস্ট্রিতে আমূল বদল আসতে পারে বলেও মনে করছেন তাঁরা। তাছাড়া বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের মূলে রয়েছে পরিবেশ দূষণ। বাড়ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন, গলতে শুরু করেছে মেরুপ্রদেশের বরফ। আর এ সবের পিছনে বড় হাত রয়েছে প্লাস্টিকের। এ নিয়ে হাজার প্রচার, হাজার সতর্কতা সত্ত্বেও রাশ টানা যাচ্ছে না প্লাস্টিকের ব্যবহারে। এই পরিস্থিতিতে প্লাস্টিকের বিকল্প খুঁজতে উঠেপড়ে লেগেছেন বিজ্ঞানীরা। আর সেই খোঁজে বড় মাইলস্টোন হতে পারে চেক প্রজাতন্ত্রে আবিষ্কৃত আপেলজাত এই জৈব প্লাস্টিক।