মানুষের মল থেকে নাকি তৈরি হবে বিদ্যুৎ? যা দেখলেই চোখে হাত চাপা দিতে ইচ্ছে হয়, তা নিয়েই গবেষণা? কী বলছেন বিজ্ঞানীরা? শুনে নিন।
অ্যাঃ! গবেষণা করার কি আর জিনিস মিলবে না যে শেষমেশ এই বস্তু নিয়েও টানাটানি! আরে ঘেন্নাপিত্তি তো সকলেরই আছে। মানুষের মল নিয়ে ল্যাবরেটরির টেবিলে কাজকর্ম হতে পারে, এমন কথা কেউ কখনও শুনেছে? কি, এমনটাই ভাবছেন তো? ভাবছেন এসব নির্ঘাত বানানো গল্প। আজ্ঞে না মশাই। ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি।
আরও শুনুন: বিমান থেকে মানুষের মল এসে পড়ল মাথায়, নিজের বাগানেই নাস্তানাবুদ হলেন এক ব্যক্তি
মানুষের মল যে সারের কাজে লাগে, সে কথা সকলেই জানে। কিন্তু সেই একই বর্জ্য পদার্থ যে শক্তির উৎস হয়েও দাঁড়াতে পারে, এ কথা গোড়াতে অনেকেরই বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু শেষমেশ পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেল, মানুষ, মুরগি এবং টার্কির মল হয়ে দাঁড়াতে পারে ফুয়েলের উৎস। এমন দাবি করেছেন ইজরায়েলের বেন-গুরিয়ন ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক বিজ্ঞানী। মাঠে একটি শৌচাগারও তৈরি করে ফেলেছেন তাঁরা, বিস্তারিত পরীক্ষা চালাবার জন্য।
তাঁদের গবেষণা আসলে শুরু হয়েছিল পোলট্রি থেকে পাওয়া বর্জ্য পদার্থ, অর্থাৎ মুরগির মল দিয়েই। তাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ও নাইট্রোজেন থাকে, যা শক্তি উৎপাদনের জন্য দুটি জরুরি উপাদান। পরে তাঁরা মানুষের মলকেও তাঁদের গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করেন। অটোক্লেভে উত্তপ্ত করে এর জীবাণু দূর করে ফেলা হয়, এবং তারপর শুকনো অবস্থায় এনে গুঁড়ো করে ফেলা হয়। পাউডারের মতো করে ফেলে এই মলকে জলে মিশিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সব শেষে নটি ৫০ মিলিলিটার মাপের ল্যাব রিঅ্যাকটরে তা পুরে দেওয়া হয়েছিল। এই রিঅ্যাকটরগুলি উচ্চ চাপ ও তাপে কাজ করতে সক্ষম। ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বিভিন্ন তাপমাত্রা স্থির করে দেখা হয়েছিল শেষমেশ ওই মলের কী পরিণতি হয়। জল থাকলেও অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটানো হয়, বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে HTC বা হাইড্রোথার্মাল কার্বোনাইজেশন বলে। এর ফলে জল ও পুড়ে যাওয়া জৈব অণু মিলে তৈরি হয় বাদামি রঙের এক পদার্থ, বিজ্ঞানীরা যাকে বলেন হাইড্রোচার।
আরও শুনুন: গাছেদের মনের খবর জানাবে যন্ত্র-উদ্ভিদ, জানেন বিজ্ঞানীদের এই আশ্চর্য আবিষ্কারের কথা?
জানা যাচ্ছে, এই হাইড্রোচারকে কয়লার মতো ব্যবহার করা যেতে পারে। কয়লা পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন করে যেসব বিদ্যুৎ প্রকল্প চলে, সেইসব বাণিজ্যিক ফার্নেসেও এটি ব্যবহার করা চলবে বলে জানিয়েছে একটি রিপোর্ট। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে জানিয়েছেন, শিল্পে যে পরিমাণ কয়লা ব্যবহার করা হয়, তার অন্তত ১০ শতাংশকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে পোলট্রির বর্জ্য। মানুষের বর্জ্য মুরগি, টার্কি ইত্যাদি পাখির বর্জ্যের তুলনায় আরও বেশি কার্যকরী। কারণ বিভিন্নরকম খাবার খাওয়ার ফলে মানুষের বর্জ্য পদার্থে বেশি পরিমাণে তেল থাকে, যা একে আরও দাহ্য করে তোলে। বিজ্ঞানীদের দাবি যথাযথ হলে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর চাপ অনেকটাই কমিয়ে দেবে এই বিকল্প জ্বালানি।