কাঁদি কাঁদি কলা পেলে বাঁদরেরা খুশি হতে পারে। কিন্তু স্রেফ কলা দিয়ে মানুষের খাদ্যসমস্যা কি দূর করা সম্ভব! অথচ এমনতর দাবিই করছে এক গবেষণা। পৃথিবীর খাদ্যসংকটের সমাধান করতে পারে নাকি এই ফসলটিই। শুনে নেওয়া যাক, ঠিক কী বলছেন বিজ্ঞানীরা।
কলা দিয়েই কেল্লা ফতে! এতেই নাকি সমাধান মিলবে খাদ্যসমস্যার। হ্যাঁ, এমন দাবিই করেছেন একদল বিজ্ঞানী। তবে আমাদের রোজকার চেনা ফলটি নয়, অন্যরকম একটি কলা দিয়েই নাকি হবে সেই মুশকিল আসান। অন্যরকম বলতে, এই ফলটি দেখতে অবিকল কলার মতো। কিন্তু খেতে গেলেই চিত্তির! দেখা যাবে, বস্তুটি কলার জাতভাই হলেও হতে পারে, কিন্তু কলা নয় কোনওমতেই। খাওয়া যায় ঠিকই, তবে কলার মতো দেখতে অংশটি নয়। খাওয়া হয় এই গাছের অন্য অংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পৃথিবীর খাদ্যসংকট দিন দিন যে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, সেখানে এই ফসলই নাকি হয়ে উঠতে পারে ‘সুপারফুড’।
আরও শুনুন: রাজনীতির শুধু রং নয়, গন্ধও ছিল এককালে! পারফিউমের এমন ব্যবহার কোথায় হত জানেন?
এই ‘নকল কলা’-র আসল নাম ‘এনসেট’। ইথিওপিয়ার বাইরে এই ফসলের খোঁজ কেউই সেভাবে রাখে না। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের এই দেশটির মানুষের প্রধান খাদ্য এই কলাজাতীয় ফসল। এ থেকে পরিজ এবং রুটির মতো একপ্রকার খাবার তৈরি করা হয়। সস্তায় পুষ্টিকর, কিন্তু সস্তা বলেই বাজারের কাছে তার কদর নেই। আসলে বাজারের যা নিয়ম দাঁড়িয়েছে, তাতে পাতে ওঠার আগে জাতে ওঠা জরুরি। আর সেখানেই যে ডাহা ফেল করেছে এই নকল কলা। তাই ইথিওপিয়ার বাইরে আর কোথাও এই ফসলের চাষও হয় না। অথচ বুনো জাতের এনসেট আফ্রিকার অনেক জায়গাতেই জন্মায়। সারাবছর ধরেই ফসল ফলায় এই গাছ, আবার একে রোপণ করাও যায় বছরে যে কোনও সময়ে। এমনকি খুব বেশি যত্নও দাবি করে না এই গাছ। খরার মধ্যেও নিজেকে দিব্যি টিকিয়ে রাখতে পারে। তাছাড়া এ গাছ বহুবর্ষজীবী। এজন্যই বিজ্ঞানীরা একে বলছেন ‘ক্ষুধাজয়ী গাছ’। এদিকে, মানুষের খাদ্যসমস্যা মেটানোর জন্য বহুবর্ষজীবী এবং সারা বছর জুড়ে ফসল ফলানো গাছের চেয়ে উপকারী আর কিছু হতেই পারে না। আর সেই কারণেই এনসেটের দিকে নজর বিজ্ঞানীদের।
আরও শুনুন: মশলা নয়, বদলে মাটিই স্বাদ আনছে খাবারে! কী গুণ রয়েছে এই মাটিতে?
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই ফসল দিয়েই ১০ কোটির বেশি মানুষের খাদ্যের সংস্থান করা সম্ভব। ইথিওপিয়া ছাড়াও কেনিয়া, উগান্ডা এবং রুয়ান্ডা-সহ আফ্রিকার অন্যান্য দেশ, যেখানে খাদ্যের অভাব মাত্রাছাড়া, তৃতীয় বিশ্বের সেই দেশগুলির মুশকিল আসান হতে পারে এনসেট। লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনের গবেষক ড. জেমস বোরেলের মতে, অন্য ফসল হয় না এমন সময়ে বাফার শস্য হিসাবে এনসেট চাষ করা যায়। তাতে বাড়বে খাদ্য নিরাপত্তা।
বিশ্বজুড়ে পরিবেশ দূষণ এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং যেভাবে জলবায়ুর হাওয়াবদল ঘটিয়ে ফেলছে, তাতে কেবল প্রচলিত ফসলগুলির উপরেই নির্ভর করতে আর ভরসা পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। আর সেই কারণেই খোঁজ শুরু হয়েছে নতুন ধরনের ফসলের। ‘নকল কলা’ সেই সারিতে বসতে পারবে কি না, প্রশ্ন এখন সেটাই।