নড়ে, চড়ে, কথা বলে। অবিকল মানুষের মতো। যন্ত্রমানব বা রোবট নিয়ে আজও মানুষের কৌতূহলের সীমা-পরিসীমা নেই। তারা সব রূপে লক্ষ্মী, গুণে সরস্বতী, আর কাজে বিশ্বকর্মা। প্রযুক্তির প্যাডেলে পা রেখে দিব্য মানুষের মতোই কোনও কোনও দেশের নাগরিকত্বও পেয়ে গিয়েছে এই সব রোবটেরা। তা যন্ত্রমানব তো শুনেছেন, যন্ত্র-উদ্ভিদ শুনেছেন কি? এই যন্ত্র-উদ্ভিদই এ বার জানাবে গাছপালাদের অন্দর কি বাত। আজ্ঞে হ্যাঁ। সিঙ্গাপুরের এক দল গবেষকের এমনই তাক লাগানো আবিষ্কারের গল্প শুনে নিন।
সোফিয়ার কথা নিশ্চই মনে আছে আপনাদের। যন্ত্রমানবী সোফিয়াকে ২০১৭ সালে নাগরিকত্ব দেয় সৌদি আরব সরকার। ইতিমধ্যে কলকাতাতেও ঘুরে গিয়েছে সে। সাজগোজ থেকে শুরু করে বুদ্ধিমত্তায়, সব কিছুতে মন কেড়েছে সোফিয়া। সিনেমা থেকে শুরু করে গল্পে, উপন্যাস- কল্পবিজ্ঞানের অনেকখানি জুড়ে রয়েছে এই রোবটরা। আয়রনম্যানের ডানহাত জারভিস বা ফ্রাইডেকে নিশ্চই মনে আছে সকলের? পলক ফেলার আগেই ম্যাজিকের মতো সব তথ্য, সুলুক সন্ধান দিয়ে দিতে পারত যারা। যাকে বলা হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স। তা মানুষের বন্ধু হয়ে ওঠা যন্ত্রমানবের কথা তো অনেক শুনেছেন। কিন্তু গাছেদের মনের কথা জানাবে, এমন রোবট- তাদের কথা শুনেছেন কি?
আরও শুনুন: একই গাছে দশ রকম ফল, তাক লাগানো আবিষ্কারে গিনেস রেকর্ড হুসামের
তেমনই এক আশ্চর্য আবিষ্কার করে ফেলেছেন সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটির মেট্রিয়াল সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক দল গবেষক। যাদের মাধ্যমে গাছেদের মনের তল পেতে পারেন তাঁরা। পতঙ্গভুক গাছেদের কথা নিশ্চই শুনেছেন আপনারা। না, সেপ্টোপাসের মতো ভয়াবহ খিদে এদের না-থাকলেও পোকা-মাকড় মাছিদের কিন্তু দিব্যি ধরে জ্যান্ত খেয়ে ফেলে এই সব গাছপালা। গাছেদের মনের হদিশ জানতে বিজ্ঞানীরা সহায় হয়েছেন এমনই এক ধরনের পতঙ্গভুক উদ্ভিদের। ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ নামে এমনই এক ধরনের পতঙ্গভুক গাছকে নিয়ন্ত্রণ করেই এক ধরনের যন্ত্র-উদ্ভিদ তৈরি করতে নেমে পড়েছেন তাঁরা। এই ধরনের পতঙ্গভুক উদ্ভিদের আশ্চর্য সৌন্দর্য দেখে ছুটে যায় রাজ্যের কীট-পতঙ্গরা। আর কে না জানে প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে। পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে এক ধরনের সরু সুবেদী কাঁটার মতো অংশ। পোকা-মাকড়-মাছিরা যার সংস্পর্শে এলেই ঝট করে বন্ধ হয়ে যায় দুটি পাতার চোয়াল। আর পাতায় পাতা ফাঁদেই আটকে যায় পতঙ্গেরা।
আরও শুনুন: নরওয়েতে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বীজের ব্যাংক, যা রসদের ভরসা দেয় গোটা দুনিয়াকে
ওই দলের এক বিজ্ঞানী লুও ইফেই-এর বক্তব্য, গাছেরাও আসলে মানুষেরই মতো। ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম বা ইসিজি রিপোর্টে যেমন ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক তরঙ্গ ধরা পড়ে, তেমনই তরঙ্গ চালাচালি করে গাছেরাও। সেই তরঙ্গকে ধরতে পারলেই গাছেদের শরীর ও মনের হদিস মিলবে অনেকটাই। পতঙ্গভুক উদ্ভিতের পাতার আড়ালে লোকানো ওই সুবেদী কাঁটার মতো অংশকে প্রথমেই আলাদা করে দিয়েছেন বৈজ্ঞানিকেরা। তার বদলে সরু কিছু ইলেকট্রোডস লাগিয়ে দিয়েছেন পাতায়। যার মাধ্যমে খুব সামান্যতম বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গও শুনে ফেলতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। পতঙ্গভুক গাছের থেকে ফাঁদটিকে সরিয়ে সেটির সঙ্গে একটি রোবোটিক আর্মও জুড়ে দিয়েছেন তাঁরা। যাতে সিগন্যাল এলে একটি পাতলা সূক্ষ্ম তারের মাধ্যমে সেই বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ বুঝতে পারেন বিজ্ঞানীরা। এই ধরনের উদ্ভিদ-রোবটের তাঁরা নাম দিয়েছেন সফট রোবট।
বাকি অংশ শুনে নিন।