নম্বরের বদলে কীভাবে পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করা যেতে পারে, তা নিয়ে অনেক শিক্ষাবিদই মাথা ঘামিয়েছেন। এবার সেই প্রেক্ষিতেই এক অভিনব উদ্যোগের কথা জানাল কিছু স্কুল। নম্বরের বদলে পড়ুয়াদের পরীক্ষার খাতায় ইমোজি দেওয়া হবে, এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুলগুলি।
“অ্যানুয়ালের রেজাল্ট হাতে বাড়ি ফিরল ছেলে
মা বলল, কোন পেপারে কত নম্বর পেলে?”
নম্বর নিয়ে এই প্রশ্ন যে সেই কবে থেকেই! কে কত নম্বর পেল, তা নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তো চলেই। অভিভাবকেরাও বাদ যান না। পরীক্ষার ফল বেরোলেই সকলের নম্বর জানা নিয়ে চলতে থাকে রেষারেষির চোরা স্রোত। এমনকি স্কুলের কথাই যদি বলি, শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও অনেকসময়ই নম্বর দিয়ে একরকম বিচার চলে বইকি। নম্বরের ভিত্তিতেই কোন পড়ুয়া ভালো বা মন্দ, তা নির্দিষ্ট হয়ে গেলে তার অন্য পারা না-পারার দিকে আলো পড়ে কম। আর এই নম্বরভিত্তিক প্রতিযোগিতা পড়ুয়াকেও খুব সুস্থ কোনও পরিবেশ দিতে পারে না।
এই কথাগুলো নতুন নয়। নম্বরের বদলে কীভাবে পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করা যেতে পারে, তা নিয়ে অনেক শিক্ষাবিদই মাথা ঘামিয়েছেন। এবার সেই প্রেক্ষিতেই এক অভিনব উদ্যোগের কথা জানাল কোচির স্কুলগুলি। নম্বরের বদলে পড়ুয়াদের পরীক্ষার খাতায় ইমোজি দেওয়া হবে, এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুলগুলি। শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষা নয়, পড়ুয়াদের পড়ার বাইরের অন্যান্য কাজকর্ম, অন্য কাজে তাদের দক্ষতা- সব মিলিয়েই তাদের মূল্যায়ন করার কথা ভাবা হয়েছে। তবে কোনও কিছুতেই উৎকর্ষের মাপকাঠি হবে না নম্বর। চিরচেনা নম্বর সিস্টেমের বদলে ইমোজির রকমফেরেই বোঝা যাবে কাজটি কেমন হল। কোচির একাধিক সিবিএসই স্কুলে প্রি-কেজি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে এই নয়া ব্যবস্থা চালু হয়েছে ইতিমধ্যেই। ছোটদের কাছে পড়াশোনা বিষয়টা যাতে মজার থাকে, নম্বরের চোখরাঙানিতে যাতে পড়ার আগ্রহ কমে না যায়, সেদিকেই নজর কর্তৃপক্ষের।
‘তোত্তো-চান’ নামের সেই ছোট্ট মেয়েটির কথা হয়তো আমরা অনেকেই জানি, ক্লাসে মন না দেওয়ার জন্য যাকে একের পর এক স্কুল তাড়িয়ে দিয়েছিল। কেননা কেউ বুঝতেই চায়নি একটি শিশু কীভাবে চড়ুইপাখির সঙ্গে কথা বলে, বা নিজের একটা ডেস্ক পেয়ে খুশি হয়ে ওঠে। অথচ সেই তোত্তো চানই পরে এমন একটা স্কুলের খোঁজ পেয়েছিল, যেখানে পড়াশোনাটা ছিল ভারী আনন্দের একটা বিষয়। সেখানে শেখাটা নীরস কর্তব্য ছিল না, ছিল আগ্রহে ভরা। নম্বর আর নিয়মের কড়াকড়ির বাইরে গিয়ে সে স্কুলে পড়াশোনাকে ভালবাসতে শিখেছিল শিশুরা। জাপানের সেই ছোট্ট মেয়েটির ঘটনা আমাদের বুঝিয়ে দেয়, নিয়মের গোঁড়ামি থেকে মুক্তি পেলেই পড়াশোনা শিশুমনকে দিতে পারে ঝলমলে আকাশের খোঁজ। ‘তোতাকাহিনী’ থেকে ‘অচলায়তন’, রবীন্দ্রনাথের নানা লেখাও তো শিক্ষার সেই খোলা মাঠের সন্ধান দিয়েছে। বাস্তবেও তেমনই এক আলোর খোঁজ এনে দিল স্কুলগুলির এহেন উদ্যোগ।