আর জি কর ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে রাহুল গান্ধী মুখ খুলতেই তাঁকে মনে করানো হয়েছে রূপ কানোয়ারের কথা। যে তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল রাজীব গান্ধীর জমানায়। কে এই রূপ? শুনে নেওয়া যাক।
আর জি কর ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে একদিকে বিক্ষোভে উত্তাল গোটা দেশ। অন্যদিকে শুরু রাজনৈতিক তরজা। এক-এক আমলের অপরাধ টেনে এনে দোষারোপের পালা। আর সেই পরিস্থিতিতেই রাহুল গান্ধী এ ঘটনায় মুখ খুলতে তাঁকে শুনতে হয়েছে, রাজীব গান্ধীর আমলেও তো মরে যেতে হয়েছিল রূপ কানোয়ারকে। এক মৃত মহিলার নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের প্রসঙ্গে টেনে আনা হয়েছে আরেকজন মৃত মহিলাকে। কিন্তু কে এই রূপ কানোয়ার?
আরও শুনুন:
ধর্ষণে অভিযুক্তরা যদি ভোটে দাঁড়ান, বিচারের দাবি যাবে কোথায়?
রূপ কানোয়ারকেও বেঁচে থাকার নিরাপত্তা জোগাতে পারেনি এই দেশ। তাঁরও মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল পিতৃতন্ত্র, যা মেয়েদের একটা নির্দিষ্ট খোপেই ঢুকিয়ে রাখতে চায়। তাই, সতীদাহ প্রথা আইন করে রদ হয়ে যাওয়ার দেড়শো বছর পেরিয়েও, সতী হতে হয়েছিল রূপ কানোয়ারকে। সেটা ১৯৮৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। তার অনেক আগেই, ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর রাজা রামমোহন রায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে লর্ড বেন্টিঙ্কের নির্দেশে রদ হয়েছিল সতীদাহ প্রথা। কিন্তু রাজস্থানের শিকার জেলার দেওরালা গ্রামে সে নির্দেশ পৌঁছয়নি। রাজপুত নারীর আদর্শে স্ত্রীর জ্যান্ত পুড়ে মরা সেখানে নারীর কাছে গর্বের বিষয়। স্বামীর সঙ্গে সহমরণে গিয়েছিলেন বছর আঠেরোর রূপ কানোয়ার। অনেকের দাবি, রূপ নাকি তাঁর দেবরকে জানিয়েছিলেন, তিনি সহমরণে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেই যেন তাঁর স্বামীর চিতায় আগুন দেওয়া হয়। অন্যদিকে কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি ছিল, অনেক লোকের উপস্থিতিতে জোর করে রূপকে স্বামীর চিতায় তুলে দেওয়া হয়।
আরও শুনুন:
হাসপাতালে কি আদৌ নিরাপদ মহিলা কর্মীরা? আর.জি.কর মনে করাচ্ছে অরুণাকেও
সত্যি বলতে, সতীদাহ প্রথা প্রচলিত থাকার সময়েও তো অনেককেই জোর করে সহমরণে যেতে বাধ্য করা হত। যে নারীরা স্বেচ্ছায় এই ভয়ংকর নিয়তি বেছে নিতেন, তার পিছনেও যে পিতৃতন্ত্রের দীর্ঘদিনের মগজধোলাই ছিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যে কোনও কারণেই হোক না কেন, আঠেরো বছরের মেয়েটিকে যে এ দেশ বেঁচে থাকার নিরাপত্তাটুকু দিতে পারেনি, এ কথাই একমাত্র সত্য। এমনকি আইন ভঙ্গ করে সতীদাহ ঘটানোর দায়ে অভিযুক্তদের শাস্তি দিতেও পারেনি। ৩২ বছর ধরে এ মামলা তারিখ থেকে তারিখে গড়িয়েই গিয়েছে কেবল। আর বিস্মৃতির অতলেই তলিয়ে গিয়েছেন রূপ কানোয়ার। ন্যায়বিচারের দাবিতে নয়, আরেক তরুণীর ভয়ংকর মৃত্যুর ঘটনায় স্রেফ রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেই এবার উঠে এল তাঁর নাম।