যা কিছু অসঙ্গত, তাকে প্রশ্ন করাই সংবাদমাধ্যমের কাজ। কিন্তু সে প্রশ্ন অনেকসময়েই শাসকের পছন্দসই হয় না। আর সে কারণেই, মাঝে মাঝেই বিপাকে পড়তে হয় সাংবাদিককে। সাম্প্রতিক কালে যেমন এহেন অভিযোগ ওঠে, তেমনই নেহেরুর আমলেও এ ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন এক সাংবাদিক। শুনে নেওয়া যাক।
সংবাদমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কতখানি রয়েছে, সে নিরিখে কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত? সাম্প্রতিকতম পরিসংখ্যান বলছে, ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৬১। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের পক্ষে এহেন র্যাঙ্কিং যে রীতিমতো লজ্জার, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা এই র্যাঙ্কিং আসলে এই প্রশ্নই তোলে যে, সংবাদমাধ্যমের কি তবে সরকারের কাজ নিয়ে কথা বলার জায়গাই থাকছে না? কিন্তু কথা হল, যে কোনও শাসকের আমলেই এই বিষয়টি নিয়ে কমবেশি বিরোধ তৈরি হয়, হয়েছেও। বিজেপির শাসনকালে যেমন এ নিয়ে কথা হচ্ছে, কংগ্রেস আমলেও কিন্তু এই ইস্যুতে কম জলঘোলা হয়নি। সে কথাই মনে করিয়ে দেয় রমেশ থাপার বনাম স্টেট অফ মাদ্রাজ মামলা।
আরও শুনুন:
কৃষকদের ‘সোশাল মুখ’ বন্ধ, তাতে কি আটকানো যাবে যন্ত্রণার খতিয়ান?
জওহরলাল নেহরুর নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে খোলা সমালোচনা করেছিলেন নামী সাংবাদিক রমেশ থাপার। রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিয়ে শানিত আলোচনার জন্যেই পরিচিত ছিলেন বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী এই সাংবাদিক। কিন্তু ক্রসরোডস নামে একটি ইংরেজি পত্রিকায় নেহরুর চাঁচাছোলা সমালোচনা করার ফল ভুগতে হয়েছিল তাঁকেও। ১৯৪৯ সালের ম্যাড্রাস মেনটেন্যান্স অফ পাবলিক অ্যাক্ট অনুযায়ী সে রাজ্যে এই পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও এত সহজে নিষেধ মেনে নিতে রাজি ছিলেন না এই সাংবাদিক। তিনি সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দায়ের করেন। দেশের সংবিধানের ১৯ সংখ্যক ধারাতে যে বাকস্বাধীনতাকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে, সেই বক্তব্যকে হাতিয়ার করেই পালটা লড়াইয়ের পথে হেঁটেছিলেন রমেশ। এদিকে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষার সাফাই দিয়ে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সওয়াল চালিয়ে যায় মাদ্রাজ সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত শীর্ষ আদালতের রায় যায় সাংবাদিকের পক্ষেই। মাদ্রাজ সরকারের ওই আইনকে স্রেফ অসাংবিধানিক বলে নাকচ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এখনও পর্যন্ত, বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি বলেই গণ্য করা হয় এই মামলাটিকে।
আরও শুনুন:
হেনস্তা থেকে চাকরি খোয়ানো – অতিমারীতে ঠিক কেমন অবস্থা সংবাদমাধ্যমের?
সত্যি বলতে, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ প্রশাসন কায়েম করার জন্যই বাকস্বাধীনতা রক্ষা করা জরুরি। আর সেই স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান চিহ্ন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। সাম্প্রতিক কালে টেলিকমিউনিকেশনস বিল যেভাবে সংবাদমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমের সব বার্তাকে কার্যত ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ সরকারি নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের অধীনে এনেছে, তাতে ফের উসকে উঠেছে সেই স্বাধীনতার প্রশ্নটিই। আর সেখানেই ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে রমেশ থাপারের ওই পুরনো মামলাও।