পরিবার বলে, ২৫ বছর হওয়ার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হবে! আবার বন্ধুদের পরামর্শ, আগে প্রাণ খুলে বেঁচে নেওয়া উচিত। তারপর বিয়ে নিয়ে ভাবা যাবে। সোশ্যাল মিডিয়া আবার জানায় বিয়ে ভাঙার গল্প। এমন পরিস্থিতি জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ধন্দ বাড়ায় বইকী! তবে এত দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। গীতাতেই আছে যাবতীয় ধন্দ থেকে মুক্তির উপায়।
কথায় বলে, জন্ম-মৃত্যু আর বিয়ে, আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। এ বিষয়টি কারও হাতে থাকে না। তবে জীবনের নানা সমস্যার সমাধান রয়েছে গীতায় (Bhagavad Gita)। তাই বিয়ে কোন বয়সে করবেন কিংবা আদৌ করবেন কি-না, এ নিয়ে দোলাচলে থাকলে গীতার (Bhagavad Gita) শরণাপন্ন হতেই পারেন। সেখানে অবশ্য প্রথমেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, বয়সের উপর নির্ভর করে কখনওই জীবনের এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার যুক্তি নেই। ২০ বছরে সাতপাকে বাঁধা পড়লে সুখী হবেন আর তিরিশে হবেন না, হলফ করে কে তা বলতে পারে! বরং ভগবত গীতা (Bhagavad Gita) কথা বলে যোগ, গুণ ও ধর্ম নিয়ে। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে প্রশ্ন করেননি যে, তাঁর যুদ্ধর জন্য সঠিক বয়স হয়েছে কি হয়নি। বরং জানতে চেয়েছিলেন, ধর্মের লড়াইয়ে তিনি প্রস্তুত কি-না।
গীতা (Bhagavad Gita) নিজেকে প্রশ্ন করতে শেখায়। আপনি কি নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম? অন্যের প্রতি দায়িত্বজ্ঞানবোধ রয়েছে? সমাজের চাপে নয়, মন থেকে কারও সঙ্গে কমিটমেন্টে যেতে তৈরি? প্রশ্নগুলোর উত্তর ইতিবাচক হলে বয়স কোনও ফ্যাক্টরই নয়। কারণ প্রতিটি মানুষের বোধদয় একই বয়সে হয় না। আবার গীতার (Bhagavad Gita) ষষ্ঠ অধ্যায় বলছে, যোগের কথা। বিয়েই যে প্রত্যেকের গন্তব্য হতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। সন্ন্যাসী জীবনও আকৃষ্ট করতে পারে আপনাকে। এক্ষেত্রেও পরিবার বা সমাজকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না। গীতা (Bhagavad Gita) প্রশ্ন করে, জীবনে পূর্ণতা পেতে আপনার কি কোনও সঙ্গী দরকার? উত্তর খুঁজুন নিজেই। খুঁজে পেলে অবশ্যই জানাবেন।
এ তো গেল বিয়ের পিঁড়িতে বসা নিয়ে ধন্দের সমাধান। গীতা (Bhagavad Gita) কিন্তু সঠিক জীবনসঙ্গীও খুঁজে দেওয়ার পাথেয়! এখানে উল্লেখ রয়েছে তিনটি গুণের। সত্ত্ব, রজঃ, এবং তমঃ। এই তিন গুণই নাকি প্রকৃতির মৌলিক উপাদান। তমোগুণ বলতে বোঝায়, জড়তা, নিষ্ক্রিয়তা, উদাসীনতা। এমন গুণের বশবর্তী হয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলে তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। এ ধরনের সম্পর্কে মানুষ গোঁয়ার্তুমি করে। দুজনে মিলে সংসারকে সুখের করে তোলার প্রচেষ্টা তাদের মধ্যে দেখা যায় না। অন্যদিকে, রজঃগুণ হল আবেগ ও চঞ্চলতার প্রতীক। এই গুণসম্পন্ন কেউ হয়তো বাড়ির অমতে হঠকারীতার বশে পছন্দের মানুষকে বিয়ে করে ফেলেছেন। কিন্তু সংসারে স্থিরতা আনতে এঁরা একেবারেই উপযুক্ত নন। কারণ এঁরা অল্পতেই কষ্ট পান। উল্টোদিকের মানুষটার সামান্য খারাপ আচরণে ভেঙে পড়েন। এক্ষেত্রে বৈবাহিক সম্পর্ক শুরুতে দারুণ বলে মনে হলেও, খুব বেশিদিন ভালোভাবে টিকিয়ে রাখা কঠিন।
আর সত্ত্বগুণ হল শান্তি ও ভারসাম্যের প্রতীক। সত্ত্বগুণ-সম্পন্ন মানুষেরা বাকিদের তুলনায় অনেক বেশি ধীর-স্থির। দাম্পত্য জীবনে পরস্পরকে সম্মান করে, অ্যাডজাস্ট করে। তাই গীতা (Bhagavad Gita) বলে, সবদিক বুঝে শুনেই বিয়ের বাঁধনে জড়ালেই সংসার সুখের হবে উভয়ের গুণে।