একজন দুজন নয়, মোট ৬৪ জনের জীবন বাঁচিয়েছে সে। নিজের রক্ত দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে তাদের প্রাণ। নিজের এক পা নেই যদিও, কিন্তু অন্যের পাশে দাঁড়ানোর কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি সেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। এমন মহৎ কাজের জন্যই সম্প্রতি সম্মানিত করা হল তাকে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তার কথা।
সত্যিকারের নায়ক তো একেই বলা যায়। অন্য কারও উপকার করতে যে পিছপা হয় না। নিজের পরোয়া না করে যে ঝাঁপিয়ে পড়ে অন্যের জন্য। হ্যাঁ, ঠিক তেমনটাই করেছে সে। নিজের রক্ত দিয়ে সে জীবন বাঁচিয়েছে ৬৪ জনের। আর এই বেনজির কাজের স্বীকৃতি হিসেবেই এবার পুরস্কৃত হল যোহান।
আরও শুনুন: বাঁকা ঘাড়ের কারণে চাকরি মেলেনি সাতবার, দেশের সর্বকনিষ্ঠ সিইও হলেন সেই রাধিকা
না, যোহান মানুষ নয়। জাতিপরিচয়ে সে গ্রেহাউন্ড প্রজাতির একটি কুকুর। ঘোড়দৌড়ের মতোই গ্রেহাউন্ড কুকুরদের যে রেস হয়, তার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল যোহানকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, দুবছর বয়স হওয়ার কিছুদিন আগেই দুর্ঘটনায় একটি পায়ে ভালরকম আঘাত পায় সে। এখানেই শেষ নয়, সেই আহত পায়েই ফের চোট লাগে কদিন পরে। জখম পাটিকে সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা ছিল না চিকিৎসকদের কাছে। ফলে শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে যায় যোহানের দৌড়।
আরও শুনুন: মানুষ নয়, পৃথিবীর প্রথম গোয়েন্দা একটি কুকুর… খোঁজ মেলে তার ঋগ্বেদে
কিন্তু যোহানের জীবন এরপর আকস্মিকভাবেই নতুন বাঁক নেয়, যখন এই তিন পা-ওয়ালা কুকুরটিকে দত্তক নিতে রাজি হন এক মহিলা, আমান্ডা ওয়েলস। আর স্কটল্যান্ডের এই মহিলার কাছে এসেই নতুন কিছু করার পথ পায় সে। একটি পা না থাকলেও তার শরীর রীতিমতো সুস্থ, এবং আক্ষরিক অর্থেই একটি বড় হৃদয় তথা হৃৎপিণ্ড রয়েছে তার। এই দুই কারণে রক্তদান করার যোগ্য বলে বিবেচিত হয় কুকুরটি। ইংল্যান্ডে পোষ্যদের জন্য যে ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে, সেখানে এখনও পর্যন্ত ১৬ বার রক্তদান করেছে এই কুকুরটি। এক-একবার রক্তদানে যত ইউনিট রক্ত নেওয়া হয়, তা চারটি কুকুরকে দেওয়া যেতে পারে। সেদিন থেকে দেখলে বলা যায়, এখনও পর্যন্ত ৬৪টি সারমেয় প্রাণ ফিরে পেয়েছে এই যোহানের দৌলতেই। আর এই মহৎ কাজের স্বীকৃতি হিসেবেই সম্প্রতি যোহান এবং তার তত্ত্বাবধায়ক আমান্ডাকে সম্মানিত করা হয়েছে। মানুষ এবং কুকুর, উভয়েরই মহত্ত্বকে স্বীকৃতি জানাতে যে ব্র্যাম্বল ক্র্যাডক সম্মান দেওয়া হয়, সেই বিশেষ সম্মানটিই অর্জন করেছে যোহান।
আরও শুনুন: স্রেফ একটি কুকুরের কারণেই দুই দেশের মধ্যে হল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, জানেন এই ঘটনা?
নায়কের সিক্স প্যাক, অ্যাবস নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক কথা হয়ে থাকে। তথাকথিত ‘হিরো’ কিংবা নায়ক হয়ে ওঠার মাপকাঠি ধরা হয় এই জাতীয় শারীরিক সক্ষমতাকে। কুকুরদের পেশাদার দৌড়ে যোহানের অংশ নেওয়ার কাজটি নিশ্চয়ই তেমনই একটি কাজ। কিন্তু শারীরিকভাবে দুর্বল হয়েও কেউ যে হৃদয়বৃত্তির জোরে নায়ক হয়ে উঠতে পারে, সে কথাই যেন আরও একবার প্রমাণ করে দিল তিন পায়ের এই কুকুরটি।