কোনও মূল্যবান উপকরণ নয়, নয় পবিত্র উপাদানও। আর তা দিয়েই নাকি গড়ে উঠল রামমন্দির। হ্যাঁ, স্রেফ ঝড়তিপড়তি লোহালক্কড় দিয়েই বানানো হয়েছে রামমন্দির, আর তাতে হাত লাগিয়েছেন মুসলিম কারিগরেরাও। তবে রামজন্মভূমিতে নয়, দেশের আরেক প্রান্তে তৈরি হয়েছে সেই মন্দির, যা দেখতে অবিকল অযোধ্যার রামমন্দিরের মতোই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
রামজন্মভূমিতে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার দিকে নজর গোটা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের। লোকসভা নির্বাচনের আগেই খুলে দেওয়া হবে মন্দিরের দরজা। আর সেই লক্ষ্য মাথায় রেখেই মন্দির নির্মাণের কাজে তৎপরতা ছিল প্রথম থেকেই। যদিও তাতে মন্দিরের সৌন্দর্যের সঙ্গে কোনোরকম আপস করা হয়নি। রামমন্দির নির্মাণের উপকরণ আনা হয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে, এমনকি সীতার জন্মভূমি বলে কথিত নেপাল থেকেও এসেছে বিশেষ শিলা। কিন্তু রামমন্দির প্রতিষ্ঠার দিকে তাকিয়ে যখন অপেক্ষায় গোটা দেশ, তার আগেই নাকি নির্মাণ শেষ আরেক রামমন্দিরের। আরও আশ্চর্যের কথা হল, সেই মন্দির গড়ে তুলতে এমন কোনও নামী দামি জিনিসপত্র ছিলই না। স্রেফ বর্জ্য লোহালক্কড়কে কাজে লাগিয়েই গোটা মন্দিরটি তৈরি করে ফেলেছেন কারিগরেরা। মন্দিরটি লম্বায় ৪০ ফুট, চওড়ায় ২৭ ফুট, আর ২৪ ফুট উঁচু। আর তা গড়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে ২১ কেজি বর্জ্য পদার্থ। ইলেকট্রিক পোল, গাড়ি, এমন বিভিন্ন কিছুর ভাঙাচোরা অংশ ব্যবহার করেই মাত্র তিন মাসে ওই মন্দিরের নির্মাণ শেষ করে ফেলেছেন কারিগরেরা। এই কারিগরদের মধ্যে হিন্দুরা যেমন ছিলেন, তেমন ছিলেন মুসলিমরাও। যে সময় কাজ শুরু হয়, তখনও মূল রামমন্দিরের কাজ অনেকটাই বাকি ছিল। ফলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে, আন্তর্জালের সাহায্য নিয়েই এই কাজ শেষ করতে হয়েছে। অথচ এই মন্দিরটি যে হুবহু অযোধ্যার রামমন্দিরেরই নকল, সে কথা একবাক্যেই মেনে নিচ্ছেন সকলে।
আরও শুনুন: মন্দির গড়তে কেন টাকা দেবে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার? প্রশ্ন তুলেছিলেন নেহরু
না, রামজন্মভূমি বলে কথিত অযোধ্যায় অবশ্য এই মন্দির গড়ে ওঠেনি। উত্তরপ্রদেশে নয়, মধ্যপ্রদেশে এই দ্বিতীয় রামমন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে কেবল ধর্মপ্রচারের কথা ভেবেই যে এমনটা করা হয়েছে, তাও কিন্তু নয়। এই রামমন্দির নির্মাণের নেপথ্যে রয়েছে পরিবেশরক্ষার ভাবনাও। আসলে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বা বর্জ্য পদার্থের ব্যবহারের সূত্রেই বর্জ্য লোহালক্কড়কে এভাবে কাজে লাগিয়েছে ইন্দোর শহরের প্রশাসন। বলে রাখা ভালো, জাতীয় স্তরে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে যে সমীক্ষা চালানো হয়, সেখানে টানা ছয় বছর প্রথম সারিতেই থেকেছে মধ্যপ্রদেশের এই শহরটি। আর এবার বর্জ্য লোহা দিয়েই এহেন ইনস্টলেশন করার কথা ভেবেছে ইন্দোর। ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের তিন মূল নীতি- রিডিউস, রিইউজ এবং রিসাইকল, অর্থাৎ বর্জ্যের পরিমাণ কমানো, বর্জ্যকে ফের ব্যবহার করা অথবা পুনর্নবীকরণ করা। আর এই তিন নীতি মেনেই এই মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে, এমনটাই জানিয়েছেন শহরের মেয়র। তাই রামমন্দিরের এই প্রতিলিপি একদিকে রামের মাহাত্ম্য প্রচার করবে, অন্যদিকে ইন্দোরের পরিচ্ছন্নতার কথাও তুলে ধরবে বলেই আশা তাঁর।