নারীর সুরক্ষার প্রশ্নে দেশজুড়ে তোলপাড়। অথচ সেই নারীকে কেন্দ্র করেই এমন প্রথা চালু রয়েছে দেশের কোনও কোনও অঞ্চলে, যেখানে সে প্রতিনিয়ত বিপন্ন। যেমন এই বউ ভাড়া নেওয়ার প্রথা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
একুশ শতকে দাঁড়িয়ে নারীর কল্যাণ আর উন্নয়নের কথা পঞ্চমুখে বলছে দেশ। বলছে নারীর স্বাবলম্বনের কথা। অথচ এত কিছুর মধ্যেও দগদগে ঘায়ের মতো জেগে আছে নারীনির্যাতনের ক্ষত। নানাভাবে, নানা উপায়ে নারীকে হেনস্তার ইতিবৃত্ত। তেমনই এক নির্যাতনের প্রথা দীর্ঘদিন ধরে রমরমিয়ে চলছে, এ দেশেই।
মেয়েদের নিজস্ব মতকে যে মর্যাদা দিতে হয়, সে কথা এখনও সমাজের একটা বড় অংশ ভেবেই উঠতে পারেন না। আর বিয়ের ক্ষেত্রে সেই অসম্মান স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়। বিয়ের বাজারে মেয়েদের মতামতের দাম অনেকসময়েই প্রায় শূন্য। আর সেই ভাবনাতেই রমরমিয়ে চলছে ‘ধাদিচা’ প্রথা। যে প্রথা আসলে বউ ভাড়া করা কিংবা কেনার খোলা বাজার মাত্র। এ যুগে দাঁড়িয়ে কোনও সভ্য দেশে মানুষ কেনা বেচার কথা ভাবাই যায় না। এমনকি বিয়ের সময় পণ দেওয়া-নেওয়াকেও বহুদিন আগেই বেআইনি বলেই ঘোষণা করেছে এ দেশের সরকার। কিন্তু তারপরেও, আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে জাঁকিয়ে চলছে মধ্যপ্রদেশের এই বউ কেনা প্রথা।
ঠিক কী নিয়ম মানা হয় এই প্রথায়?
সোজা কথায়, এই প্রথার দরুন মধ্যপ্রদেশের শিবপুরী গ্রামের এক বিশেষ বাজারে বউ কিনতে পাওয়া যায়। চাইলে অবশ্য ভাড়াও মেলে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। তবে গণিকাদের মতো কয়েক ঘণ্টা হিসেবে নয়। কয়েক মাস বা বছরের কড়ারে ভাড়া নেওয়া যায়, যাতে সেই মহিলাকে দিয়ে গৃহবধূর মতোই বাড়ির অন্যান্য কাজকর্ম, লোকজনের যত্নআত্তির মতো কাজও করানো যায়। সাধারণত গরিব পরিবারগুলিই এই বাজারে তাদের বাড়ির মেয়েদের বিক্রি করতে আনে। ভাড়া নেওয়ার জন্য অবশ্য নিলাম ডেকে দর কষাকষি চলে। যে মেয়েকে পছন্দ, তার নির্দিষ্ট দাম ঠিক করে নিলাম হাঁকে পুরুষেরা। যাদের ক্ষমতা আরও খানিক বেশি, তারা অবশ্য অনেকসময় বরাবরের মতো কিনেও নেয় মেয়েটিকে। দাম শুরু হয় মোটামুটি পনেরো হাজার থেকে, লাখেও পৌঁছে যায় কখনও কখনও। তবে কুমারী মেয়ের ক্ষেত্রে দাম দিতে হয় বেশি।
যদিও দাবি করা হয়, বিক্রি বা ভাড়ার জন্য দু’পক্ষের মধ্যে যে বন্দোবস্ত হচ্ছে, পছন্দ না হলে তাতে আপত্তি জানাতে পারেন কোনও মেয়ে। তবে যাকে বিক্রি করতেই নিয়ে আসা হয়েছে, ক্রেতাকে নিয়ে আপত্তির অধিকার থাকলেও কি তার অবস্থা খুব একটা পালটাবে? আসলে তো নারীকে পুরুষের সম্পত্তি ভাবার যে চল, সেই ভাবনাকেই জিইয়ে রেখেছে এই প্রথাও। নারীর নির্যাতন-হেনস্তার দীর্ঘ দীর্ঘ তালিকায় তাই এইসব প্রথার কথাও ভুলে গেলে চলবে না।