কোনও শিল্পপতির প্রয়াণে দেশজোড়া বিষাদের ছায়া, এমনটা এ দেশ কবে দেখেছে জানে না। রতন টাটা কিন্তু সেই ভালোবাসা কুড়িয়ে নিলেন তাঁর যাবার কালে। বুঝিয়ে দিলেন, কেবল ব্যবসার হিসেবনিকেশে রতন টাটার সমস্ত স্কোরশিট ধরা যাবে না। কেন ব্যবসার বাইরেও তিনি মনে রাখার মতো মানুষ? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
শিল্পজগত বলছে, নক্ষত্রপতন। আবার একেবারে আমজনতার মধ্যে থেকেও উঠে আসছে দীর্ঘশ্বাস। একই মানুষের জন্য। তিনি রতন টাটা। টাটা গোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারিগর। কিন্তু কেবল ব্যবসার হিসেবে তাঁকে ধরা যায় না। সারাজীবন ধরেই, টাটা গোষ্ঠীর লাভ-লোকসানের যাবতীয় হিসেবের বাইরে, মানুষ হিসেবে নিজের একক পরিচয়টিও গড়ে চলেছিলেন রতন টাটা। কেমন সে পরিচয়? নানা শ্রেণির মানুষ থেকে অবোলা পশুরা সে কথা জানে।
রতন টাটার সারমেয় প্রেম কারও অজানা নয়। মুম্বইয়ের মহালক্ষ্মীতে পশুদের জন্য একটি হাসপাতাল খোলেন তিনি। নিরাশ্রয়, না-খেতে পাওয়া পশুদের জন্য প্রাণ কাঁদত তাঁর। তাঁর একলা জীবনে পোষ্যরাই ছিল সবচেয়ে কাছের সঙ্গী। ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট বাকিংহাম প্যালেসে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ২০১৮ সালে। সেখানেই তাঁকে ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়ার জন্য ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আমন্ত্রণ জানান বর্তমানের রাজা, তৎকালীন প্রিন্স চার্লস। কিন্তু পোষ্যরা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় বাকিংহাম প্যালেসের আমন্ত্রণে সাড়া দিতে পারেননি রতন টাটা। ভারতীয় শিল্পপতির না আসার কারণ জানতে পেরে তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন প্রিন্স।
জীবজন্তুদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তাঁর বন্ধুত্ব হয়েছিল শান্তনু নাইডুর সঙ্গে। শান্তনু পথকুকুরদের গাড়ি চাপা পড়া থেকে রক্ষা করার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সেই উদ্যোগে মুগ্ধ হয়ে শান্তনুকে তাঁর হয়ে কাজ করার আমন্ত্রণ জানান রতন টাটা। শেষ কয়েক বছর রতন টাটার ছায়াসঙ্গী হিসাবেই ছিলেন শান্তনু। রতন টাটার সহযোগিতায় শান্তনু গড়ে তোলেন ‘গুড ফেলা’, বয়স্কদের বন্ধু হওয়ার এক অন্যরকম উদ্যোগ।
কখনও বয়স্ক মানুষদের বিষাদে বন্ধু হওয়ার ভাবনা তো কখনও পশুদের যত্ন করে রাখতে চাওয়া, এসব কারণেই তিনি অন্যরকম। সমস্ত সাধারণের মধ্যে থেকে জেগে ওঠা রতন। সেই দ্যুতি নিয়েই সকলের মনের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নিয়েছেন রতন টাটা।