যুদ্ধেরও দরকার নেই, স্রেফ বেশি ভাত খেলেই নাকি আরও খানিক সংকটের মুখে পড়বে পৃথিবী। ইডলি কিংবা রাজমার চাহিদা বাড়লে তো কথাই নেই, বিপদ বাড়বে বই কমবে না। এমনটাই জানাচ্ছে এক রিপোর্ট। ব্যাপারটা ঠিক কী? শুনেই নেওয়া যাক।
পরিবেশ দূষণ থেকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং, নানারকম কারণে পৃথিবী যে ভালো নেই, সে কথা আর কে না জানে! কিন্তু খাবারদাবারের দৌলতেও যে তার অসুখ বাড়তে পারে, সে কথা কে জানত! না না, আজগুবি নয়, সত্যি কথাই। রীতিমতো গবেষণা করে এমনটা দাবি করেছেন একদল বিজ্ঞানী। দক্ষিণ ভারতে যে ইডলি প্রায় স্টেপল ফুড, সেই ইডলি তো বটেই, এমনকি বাংলা-সহ গোটা ভারত জুড়ে যে ভাত খাওয়ার রমরমা, সেই ভাতের কারণেই নাকি বড় সংকটের মুখে পড়তে পারে পৃথিবী। কীভাবে? তাহলে খুলেই বলা যাক।
-: আর শুনুন :-
বসন্ত কি কেবল পলাশের, সজনে ফুলেরও নয়!
আসলে প্রতিটি খাবার মানেই তো এক বা একাধিক খাদ্যশস্য। সেই সব শস্য উৎপাদন করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি লাগে, সার দরকার হয়, চাষের কাজে ব্যবহার হয় জল। আবার সার বা কীটনাশকের দরুন দূষণ বাড়ে। উপরন্তু চাষের জমি বন্যপ্রাণীদের বাসের পরিসর কমায়, আবার পশুপাখিদের নানাভাবেই সমস্যায় ফেলে। কখনও খাবার বা জলের সূত্রে তাদের শরীরে রাসায়নিক ঢোকে, কখনও ফসল বাঁচাতে তাদের উপর হামলা করে মানুষ। আর এই সবকিছু মিলিয়েই প্রভাব পড়ে জীববৈচিত্র্যে। তাই প্রতিটি খাবারের বায়োডাইভার্সিটি ফুটপ্রিন্ট থাকে, কার্বন ফুটপ্রিন্টের মতোই। এই বায়োডাইভার্সিটি ফুটপ্রিন্টের নিরিখে মেপে নেওয়া যায়, একেকটি খাবার পৃথিবীর পরিবেশগত ভারসাম্যে কতটা প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে নানারকম দূষণের দৌলতে বাস্তুতন্ত্র যে বড়সড় সংকটে, এ তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাও স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রকে বিঘ্নিত করছে। সেই পরিস্থিতিতে জীববৈচিত্র্য যদি আরও খানিক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে, অর্থাৎ কোনও কোনও প্রজাতি যদি বিপন্ন হয়, তবে সেই বাস্তুতন্ত্রেই আঘাত লাগবে। আর ঘটছে ঠিক তেমনটাই। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মানুষ যা যা খায়, তার মধ্যে বেশ কিছু জনপ্রিয় খাবার আদতে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিই করছে। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক লুই রোমান ক্যারাসকো জানাচ্ছেন, জীববৈচিত্র্যের ফুটপ্রিন্ট আমাদের ধারণা দেয় যে আমরা সেই খাবারটি খেয়ে কত প্রজাতিকে বিলুপ্তির কাছাকাছি ঠেলে দিচ্ছি।
-: আর শুনুন :-
‘অভিশপ্ত’ খাবার! নারীদিবসের জন্য উদ্ভাবন বিশেষ রেসিপির, রাঁধতে গিয়ে জখম হন একাধিক রাঁধুনি
সারা বিশ্বের ১৫১টি জনপ্রিয় খাবারের উপর গবেষণা চালিয়ে সেই ক্ষতিকারক খাবারের তালিকা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। আর এই তালিকার প্রথম ২৫টি খাবারের মধ্যেই রয়েছে এ দেশের জনপ্রিয় খাবার, ইডলি, রাজমা, চানা মশলা, মুরগির ঝালফ্রেজির মতো পদ। ইডলি বানানোর অন্যতম উপকরণ চাল, আবার দেশ ও দেশের বাইরে ভাত খাওয়ার চলও নেহাত কম নয়। ফলে দেখা যাচ্ছে, শুধু চাল উৎপাদন করতেই যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ লেগে যাচ্ছে, তার দরুন বড় ক্ষয়ের মুখেই পড়ছে জীববৈচিত্র্য। ভারতে ধান এবং শুঁটিজাতীয় খাবার যেসব জমিতে চাষ করা হয়, তার অনেকগুলিই আগে জীববৈচিত্র্যের বড় কেন্দ্র ছিল বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে চাষআবাদের দরুন সেখানে জীববৈচিত্র্য রীতিমতো বিপন্ন। বোঝাই যাচ্ছে, নিজেদের স্বাদ, রুচি, পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা যেসব খাবার বেছে নিই, তা অনেকসময়ই অন্যদের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। আর তেমনটা হলে পৃথিবীর সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্রেই যে প্রভাব পড়ে, তাতে কিন্তু আদতে সংকট বাড়ছে আমাদেরই।