টানা ৩০ দিন ঘুমিয়ে কাটান এক ব্যক্তি। ঘুমের মধ্যেই স্নান করেন। খাবারও খান সেইভাবেই। পরিবারের সকলেই তাঁকে নিয়ে বেজায় চিন্তায় থাকেন। কিন্তু কেন এমন অবস্থা ওই ব্যক্তির? আসুন শুনে নিই।
ঠিক যেন কুম্ভকর্ণ। ফারাক শুধু ঘুমের দিনসংখ্যা। তিনি ঘুমাতেন ৬ মাস। আর এই ব্যক্তি ঘুমোন ৩০০ দিন। সারা বছর মাত্র কয়েকটা দিন জেগে কাটান তিনি। এমনটা যে স্বাভাবিক নয়, বলাই বাহুল্য। বিশেষ এক রোগের প্রভাবেই এমন অবস্থা এই ব্যক্তির।
আরও শুনুন: ঘরে-বাইরে কাজের চাপেই দিন কাবার, ঘুমের সময় কমেছে ভারতীয় বিবাহিতাদের
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগের নাম অ্যাক্সিস হাইপারসোমনিয়া। দিনে প্রায় ২০ ঘন্টাই বিছানায় কাটতে পারে আক্রান্তদের। পাশাপাশি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া খিদে, স্বাভাবিক ব্যবহারে পরিবর্তন ইত্যাদি উপসর্গও দেখা যায় এই রোগের কারণে। এমনকি এই রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে রোগীর। সবথেকে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল, প্রাথমিক ভাবে এই রোগ শনাক্ত করার কোনও উপায় এখনও আবিষ্কার হয়নি। ফলে অনেকেই প্রথমদিকে বুঝতে পারেন না তাঁদের শরীরে এই রোগ বাসা বেঁধেছে। রাজস্থানের পুরখারামও প্রথমদিকে বুঝতে পারেননি তিনি এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথমদিকে টানা ঘুম না হলেও দিনের প্রায় ১৫ ঘন্টা ঘুমিয়েই কাটাত তাঁর। উপার্জন বলতে নিজের মুদিখানার দোকান। সেটাও ঘুমের জেরে ঠিকমতো চালাতে পারতেন না তিনি। বিশেষত কখন যে ঘুমিয়ে পড়বেন তার কোনও ঠিক নেই। তাই বাধ্য হয়েই মাসে মাত্র কয়েকদিন দোকান খুলতেন তিনি। তবে দীর্ঘদিন হয়ে গেল সেটুকুও করতে পারেন না পুরখারাম। সব মিলিয়ে এক বছরে ৩০০ দিনই ঘুমিয়ে কাটে তাঁর।
আরও শুনুন: ২০২২-এও বদলায়নি অবস্থা, প্রায় সব ক্ষেত্রেই হাত বাঁধা মেয়েদের, বলছে মানবাধিকার কমিশন
তবে তাঁর এই অবস্থার জেরে বেজায় সমস্যায় পড়েছেন পরিবারের লোকজন। ঘুমের মধ্যেই তাঁকে স্নান করাতে হয়, খাইয়েও দিতে হয়। নাহলে বেঁচে থাকাই সম্ভব হত না তাঁর। তবে সবচেয়ে সমস্যা হয় তা জাগানোর সময়। ঠিক যেমন কুম্ভকর্ণকে জাগাতে রাক্ষসপুরীর কালঘাম ছুটে যেত, তেমনই অবস্থা হয় পুরখারামকে জাগানোর সময়। হাজার চেষ্টা করেও তাঁকে জাগিয়ে তোলা অসম্ভব হয়ে ওঠে। তারপরেও সমস্যার শেষ নেই। মাথা ব্যাথা থেকে আরম্ভ করে হাজারও শারীরিক সমস্যায় ভোগেন তিনি। তবু আশার আলো ছাড়েননি তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এখনও তাঁর মা, স্ত্রী সহ অন্যান্যরা মনে করেন সুস্থ হয়ে উঠবেন পুরখারাম। অন্যদের মতো তিনিও একদিন স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন বলেই মনে করছেন তাঁরা।