পথে চলতে গেলে দিতে হবে পথকর। আর মানুষের থেকে সেই রাজস্ব আদায়েরই ভার নিয়েছে একটি হাতি। কোথায় ঘটেছে এহেন ঘটনা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
পথে যাবেন, আর টোল ট্যাক্স দেবেন না, তাও কি হয়! গাড়িচালকেরা এই বিষয়ের সঙ্গে সবাই পরিচিত। তবে সেই ট্যাক্স নিতে যদি কোনও মানুষের হাতের বদলে হাতির শুঁড় এগিয়ে আসে, তবে বিষয়টা কেমন দাঁড়ায়?
না না, আজগুবি নয়, একেবারেই সত্যি ঘটনা। কর আদায়কারীর মতোই ব্যবহার করে এই হাতিটি। বছর চল্লিশের বেশি বয়স তার। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে প্রতিটি গাড়ির থেকেই সে টোল ট্যাক্স আদায় করে থাকে। শ্রীলঙ্কার বাট্টালা-কাটারাগামা রোডে কর আদায়ের দায়িত্ব সে নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছে। আর রাজা নামের এই হাতিটিকে কর সংগ্রাহক বলেই চেনেন যাত্রীরা।
ব্যাপারটা ঠিক কী? টোল ট্যাক্সের যে বাক্স দেখে আমরা অভ্যস্ত, সেখানে কোনও মানুষ ভিতরে বসে থাকেন। তিনিই টোলের নির্ধারিত অঙ্ক জানিয়ে দেন, গাড়িচালকের থেকে টাকা নিয়ে বদলে রসিদও দেন। হাতিও কি এমন করে ট্যাক্স নেওয়ার কাজকর্ম করে থাকে?
না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয় অবশ্য। হাতিটি ট্যাক্স আদায় করে বটে, তবে তার মতো করেই। মানুষের যাতে লোভ, সেই টাকাপয়সায় তার আগ্রহ নেই। বরং তার দুনিয়ায় যা প্রয়োজন, সেই খাবারই সে আদায় করে নেয় কর বলে। ওই রাস্তার দুপাশ দিয়ে যত গাড়ি আসে, তাদের সবার দিকেই সে শুঁড় বাড়িয়ে দেয়। তারপর ধৈর্য ধরেই অপেক্ষা করে। জোর খাটিয়ে, বা রাগ দেখিয়ে পাওনা আদায়ের পক্ষে নেই সে। ফলে যাত্রীরাও খুশি হয়েই খাবার এগিয়ে দেন তার দিকে। রাজার কর আদায়ের জেরে ওই এলাকায় ছোট ছোট ফলের দোকানও গজিয়ে উঠেছে, যাতে তাকে খাবার কিনে দিতে পারেন যাত্রীরা।
শ্রীলঙ্কার পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের মধ্যে যাতায়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এই বাট্টালা-কাটারাগামা রোড। পথের দুপাশেই জঙ্গল, আর সেখানে নানা বন্য জন্তুর বাস। এই প্রকৃতির অনাঘ্রাত সৌন্দর্য দেখতে এখানে পর্যটকদের যাতায়াত লেগেই থাকে। আর সেই ভিড় কাজে লাগিয়েই দিব্যি আয়-উপায়ের রাস্তা খুঁজে নিয়েছে ওই হাতিটি। সেও যেমন মানুষকে আঘাত করে না বা বিরক্ত করে না, তেমনই মানুষও তাকে চলার পথে খাবার দিয়ে যায়- এই বোঝাপড়া এ কথাও বুঝিয়ে দেয় যে, প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যে এমন আশ্চর্য সহাবস্থানও সম্ভব।