আজকের দিনেও রেডিয়াম ডায়ালের ঘড়ি ব্যবহার করি আমরা অনেকেই। অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করে ঘড়ির কাঁটা আর সংখ্যা। কিন্তু জানেন কি, ঘড়ির ডায়ালে এই রেডিয়াম ব্যবহার করার দরুন গত শতকেই প্রাণ গিয়েছিল একাধিক মেয়ের? শুনে নিন সেই মর্মান্তিক কাহিনি।
বিশ শতকের শুরুর দিকে বিজ্ঞানের যে আবিষ্কারগুলি পৃথিবীকে অনেকখানি বদলে দিয়েছিল, তার একটা হল রেডিয়াম। ১৮৯৮ সালে এই তেজস্ক্রিয় মৌলটির হদিশ দেন বিজ্ঞানী দম্পতি মেরি কুরি ও পিয়ের কুরি। তারপর থেকে বড়লোকদের কাছে রেডিয়াম হয়ে ওঠে যেন এক আশ্চর্য ওষুধ, যা ব্যবহার করলে ‘অপুত্রের পুত্র হয়, নির্ধনের ধন’। এই উন্মাদনাকে কাজে লাগিয়ে রেডিয়ামকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যবসা রীতিমতো ফুলেফেঁপে ওঠে। আর সেই ব্যবসাগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ঘড়ির ব্যবসা।
আরও শুনুন: এক রাতেই মৃত্যু অন্তত ১ লক্ষ মানুষের, এই বিমান হামলা হার মানায় হিরোশিমাকেও
কী ঘড়ি? পকেটঘড়ি, হাতঘড়ি, এ ছাড়া বিমান আর জাহাজে ব্যবহার করার জন্য কম্পাস-ঘড়ি। অর্থাৎ ছোট আকারের ঘড়ি, যার ডায়ালে লেখা সংখ্যা বা অন্যান্য কারুকাজ সবই সূক্ষ্ম। সেই ঘড়িগুলিকেই আরও সুদৃশ্য করে তোলার জন্য এই কারুকাজ করা হত রেডিয়াম দিয়ে। আর কম্পাস-ঘড়ির ক্ষেত্রে নিছক শৌখিনতা নয়, প্রয়োজনটা ব্যবহারিক। ১৯১৪ সালেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। সুতরাং বিমান বা জাহাজের কর্মীরা অন্ধকারেও অনায়াসে কম্পাস দেখতে পেলে তার চেয়ে ভাল কিছু হয় না। যেহেতু ছোট ডায়াল, তার নম্বরে রেডিয়াম বোলানো যন্ত্রের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। এইরকম সূক্ষ্ম কাজ করার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী মেয়েদের সরু আঙুল। সুতরাং এই কাজে নিয়োগ করা হত কেবল মেয়েদেরই। তাদের হাতে থাকত উটের লোমের সরু তুলি আর বাটিতে রাখা আঠা আর রেডিয়াম মেশানো জিঙ্ক সালফাইড গুঁড়ো। একেকটি কাঠের ট্রে-তে চব্বিশ থেকে আটচল্লিশটি ডায়াল, দক্ষ শিল্পীরা দিনে আট-দশটি ট্রে নামিয়ে ফেলতেন সহজেই। এদিকে বারবার ব্যবহারে তুলির মাথা ছড়িয়ে যায়, তাকে ফের সরু করার চলতি উপায় লিপ-পয়েন্টিং, অর্থাৎ প্রত্যেকবার রেডিয়াম রং করে তুলির মাথা মুখে দিয়ে সরু করে নেওয়া। কারখানার চলতি লব্জ, “Lip, dip and paint”। ব্যবসার এমন রমরমা, টেবিল থেকে মাথা তোলার ফুরসত নেই, রং-মাখা হাতেই কোনোরকমে টিফিন সারতে হয়। আর এইভাবেই ক্রমশ একটু একটু করে শরীরে ছড়িয়ে যেতে থাকে রেডিয়াম।
শুনে নিন বাকি অংশ।