আর জি কর কাণ্ডের জেরে ধর্ষকের ফাঁসির দাবি উঠেছে। তাও একেবারে প্রশাসনিক স্তর থেকেই। শুধু এ দেশে নয়, সব দেশেই ধর্ষণের প্রেক্ষিতে কঠোর শাস্তির দাবি ওঠে। কোন দেশে কী শাস্তি প্রচলিত এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য?
আর জি করে চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ খুনের ঘটনায় উঠেছে ফাঁসির দাবি। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, অভিযুক্তকে ফাঁসি দিতে হবে। যদিও এই সময়ে দাঁড়িয়ে কোনও রাষ্ট্রে আর ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট বজায় রাখা উচিত কি না, তা নিয়ে তর্ক দীর্ঘদিনের। তবে ধর্ষণের ঘটনায় এর আগেও একাধিকবার ফাঁসির রায় শুনিয়েছে এ দেশের সুপ্রিম কোর্ট। হেতাল পারেখ-এর ধর্ষণ মামলায় ধনঞ্জয়ের ফাঁসি থেকে নির্ভয়া কাণ্ডে চার অভিযুক্তের ফাঁসি, তালিকা ছোট নয়।
আরও শুনুন:
বাড়ছে ধর্ষণের হার, তুলনায় শাস্তি হচ্ছে কি! আর জি কর যে প্রশ্ন তুলল ফের
আসলে, মানুষ যতরকম ঘৃণ্য অপরাধ করতে পারে, ধর্ষণ একেবারে তার সামনের সারিতে থাকে। আর ইদানীং কালের ধর্ষণ কাণ্ডের মধ্যে যৌনতার চেয়েও প্রবল ক্ষমতার স্বর। তাই অপরকে একেবারে গুঁড়িয়ে দিতে চাওয়ার আক্রোশ সেখানে ধরা পড়ছে বারবার। সে কারণেই বারবার উঠে আসছে জোরালো শাস্তির দাবি। শুধু এ দেশেই নয়, বিশ্বের নানা দেশেই এ দাবি একইরকম জোরালো।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানে গণধর্ষণ কিংবা শিশুকে যৌন হেনস্তার শাস্তি মৃত্যু। ষোল বছরের কমবয়সি কোনও নাবালিকাকে ধর্ষণ করলে তার শাস্তিও মৃত্যু। সৌদি আরবে ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তবে সে মৃত্যুও সহজ নয়। অপরাধীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে জনসমক্ষে তার মাথা কেটে ফেলা হয় সে দেশে। আফগানিস্তানে ধর্ষকের সাজা ফাঁসি অথবা গুলিতে মৃত্যু। ইরানে ফাঁসির চল রয়েছে, কখনও বা পাথর ছুড়ে ধর্ষককে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয় আদালত। উত্তর কোরিয়াতে ধর্ষককে দাঁড়াতে হয় ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে।
চিনেও ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যু। কখনও অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী লিঙ্গচ্ছেদের সাজাও শোনানো হয়। জাপানে অবশ্য মৃত্যুদণ্ড নয়, ২০ বছরের কারাবাস বরাদ্দ ধর্ষকের জন্য। ফ্রান্সে সাজার মেয়াদ ১৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত গড়াতে পারে। আমেরিকাতেও সাধারণত কারাবাসের শাস্তিই দেওয়া হয় ধর্ষককে।
আরও শুনুন:
হাসপাতালে কি আদৌ নিরাপদ মহিলা কর্মীরা? আর.জি.কর মনে করাচ্ছে অরুণাকেও
অন্যায়ের শাস্তি হওয়া জরুরি। বিশেষত ধর্ষণের মতো অন্যায়, যেখানে লিঙ্গহিংসা আর ক্ষমতার ভাষ্য একেবারে ওতপ্রোত হয়ে জড়িয়ে আছে। কিন্তু এ কথাও মাথায় রাখা দরকার যে, ধর্ষক কোনও ভিনগ্রহের প্রাণী নয়। সেও আমাদের মধ্যে থেকেই উঠে আসা একজন মানুষ। সুতরাং কোন পরিস্থিতিতে তার মানসিকতা এমন বিকৃত হয়ে উঠেছে, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া জরুরি। ঠিক যেমন জরুরি সমাজে বয়ে চলা ধর্ষণ সংস্কৃতিকেই প্রশ্ন করা। কোনও মেয়েকে শাস্তি দেওয়ার হাতিয়ার হিসেবেই ধর্ষণকে ব্যবহার করতে চায় পুরুষ। একই সমাজের আরেকজন মানুষকে সহনাগরিক না ভেবে তাকে দুরমুশ করে দেওয়ার ইচ্ছে কীভাবে আসে, সেই ভাবনাকে প্রশ্ন করা জরুরি। ভাবনার বদল না করা গেলে, কেবলমাত্র শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে ধর্ষণকে মূল থেকে নষ্ট করা যাবে না। যাতে আরও একজন ধর্ষকের জন্ম না হয়, তা নিশ্চিত করতে গেলে বদলের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে গোটা সমাজটাকেই।