যে ব্রিটিশরাজ দীর্ঘদিন আমাদের দেশের সিংহাসন অধিকার করে রেখেছিল, এতদিন পেরিয়েও তাদের নিজেদের দেশে কিন্তু রাজপ্রথার অবসান হয়নি। যুক্তরাজ্যের রানি হিসেবে বর্তমানে রাজত্ব করছেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কঠোর নিয়ম আর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকেন রানি। কিন্তু তাঁর শৈশবও কি কেটেছিল একইভাবে? শুনে নেওয়া যাক।
রাজপরিবারের সন্তান বললেই চোখে ভেসে আসে যেন রূপকথার ছবি। সোনার খাটে গা, রুপোর খাটে পা। আর যদি সেই রাজপরিবারের ঠিকানা হয় ইংল্যান্ডে? খোদ ব্রিটেনের রাজপরিবার, নিয়মের একচুল এদিক ওদিক করার নিয়ম নেই যেখানে? যেখানে প্রতিটি মানুষের দিন কাটে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনীতে? পাশাপাশি বিলাস বৈভবের প্রচুর আয়োজন যেখানে ছড়িয়ে থাকে? কেমন হয় সেই পরিবারের কোনও শিশুর শৈশব? বিশেষ করে এমন কেউ, যিনি ভবিষ্যতে হতে পারেন সিংহাসনের উত্তরাধিকারী?
আরও শুনুন: বাঙালি খানসামার সঙ্গে মহারানির ‘বিশেষ’ সম্পর্ক, তোলপাড় পড়েছিল বিশ্বে
ঠিক সেই কথাগুলিই জানা গিয়েছে ইংল্যান্ডের বর্তমান রানি, দ্বিতীয় এলিজাবেথের সম্পর্কে। ব্রিটিশ রাজপরিবার বিষয়ক একটি বইয়ের সূত্রেই সামনে এসেছে এলিজাবেথের ছোটবেলার হালহকিকত। ঠিক কেমনভাবে কেটেছিল রানির শৈশব? জানিয়েছেন ওই বইয়ের দুই লেখিকা, র্যাচেল বোয়ি এবং রবের্তা ফিওরিতো।
১৯৩৬ সালে নিজের ভাই সিংহাসনের দাবি ত্যাগ করার পর ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসেন অষ্টম এডওয়ার্ড। কাজে কাজেই তাঁর বড় মেয়ে এলিজাবেথ হয়ে পড়েন সিংহাসনের পরবর্তী দাবিদার। অভিষেকের পর সপরিবারে রাজপ্রাসাদে বাস করতে শুরু করেন এডওয়ার্ড। কিন্তু এই ঘটনার আগে পর্যন্ত রানি এবং তাঁর বোন মার্গারেটের ঠিকানা ছিল এমন একটি প্রাসাদ, যার কেবল নম্বর ছিল, কিন্তু কোনও নাম ছিল না।
লন্ডন শহরের মধ্যভাগে ১৪৫, পিকাডিলি নম্বরের একটি পাঁচতলা টাউনহাউসে থাকতেন দুই রাজকন্যা। অবশ্য তাঁদের মা-বাবা, তৎকালীন ইয়র্কের ডিউক ও ডাচেসও থাকতেন একই প্রাসাদে। এই প্রাসাদটি আকারে বড় এবং বিলাসবহুল হলেও এখানে নিরাপত্তার বাঁধুনি ছিল যথেষ্ট কম। এখন রানিকে ঘিরে যে নিরাপত্তার দেওয়াল উঠেছে, সেই প্রেক্ষিতে এমন ছোটবেলার কথা যেন কল্পনাও করা চলে না। তবে এও কি আসলে নিরাপত্তারই আরেক কৌশল? কারও দৃষ্টি আকর্ষণ না করে সবার সামনেই একরকম লুকিয়ে থাকা? সে প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য অবশ্য পাওয়া যায়নি রাজপরিবারের তরফ থেকে।
আরও শুনুন: বন্দুক হাতে জমিদারি সামলাতেন ঠাকুরবাড়ির এক মেয়ে, চেনেন তাঁকে?
এখন রানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে কেউ যে সহজে অনুমতি পাবেন না সে কথা তো বলাই বাহুল্য। এমনকি সেই সাক্ষাৎ করতে গেলেও নিরাপত্তার একাধিক বেষ্টনী পেরিয়ে যেতে হবে তাঁকে। অথচ এলিজাবেথের সেই ছোটবেলার বাড়িতে দরজার পাশে একটি ডোরবেল পর্যন্ত ছিল, যাতে কোনও অতিথি এলে জানান দিতে পারেন। তবে আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ এই প্রাসাদে বিলাসের আয়োজন যে কম ছিল না, সে কথা জানিয়েছেন রানির জীবনীগ্রন্থের লেখিকা জেন ডিসমোর। তিনি বলেছেন এই বাড়িটি বিশ শতকের পরের দিকের মতো ফ্যাশনেবল ছিল না, বরং ঘরোয়া পারিবারিক বাড়ির মতো ছিল অনেকটা। দুই বোনের জন্য আলাদা সুসজ্জিত নার্সারি ছিল। নিচের তলায় স্টাডি এবং ডাইনিং রুম ছাড়া আরও তিরিশজন অতিথিকে আপ্যায়ন করার মতো ব্যবস্থা ছিল। বলরুম, লাইব্রেরি ছাড়াও আরও ২৪টি বেডরুম ছিল এই প্রাসাদে। দেখে অনুমান করা চলে, নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি ছাড়া পারিবারিক আবহেই কেটেছিল এলিজাবেথের ছোটবেলা।