শিশু জন্মানোর পরে তাঁর নাম দেওয়ার কাজটা কিন্তু মোটেই যে সে কাজ নয়। কারণ স্কুল থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, গোটা জীবনে সব জায়গাতেই সেই ছেলে বা মেয়েটির সঙ্গী হবে ওই নাম। ফলে নামকরণের সময় একটু বেশিই ভাবনাচিন্তা করতে হয় বাবা-মায়েদের। তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ব্যক্তিগত ছোঁয়াও। ফলে বেশিরভাগ সময়েই এই কাজটি করতে হিমশিম খেতে হয় অভিভাবকদের। তা সেই কাজটা করার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ কাউকে পেলে কেমন হত বলুন তো! না, তবে এমনি এমনি নয়। তার জন্য পকেট থেকে খসবে ভালই টাকাপয়সা। সদ্যোজাতের নাম রাখাটাই যে তাঁদের কাজ। এমন আশ্চর্য পেশার কথা শুনেছেন কি কখনও?
আগেকার দিনে ছেলেমেয়েদের যেমন তেমন একটা নাম রেখে দিতেন বাবা-মায়েরা। তেমন ভাবনা-চিন্তার অবসর ছিল না। কখনও বার অনুসারে তো কখনও তিথি, কখনও আবার দেবদেবীর নাম অনুযায়ী যুৎসই একটা নাম রেখে দিলেই হল। তবে সময় বদলেছে। সন্তানের নাম রাখার ব্যাপারে ভীষণ রকম স্পর্শকাতর আজকালকার বাবা-মায়েরা। সব কিছুর মতোই সেরা নামটাই তাঁরা খুঁজে নিতে চান নিজের সন্তানের জন্য।
তা সে কাজে নিজেরা সবসময় সফল হতে না পারলেও কুছ পরোয়া নেই। হাতের কাছেই রয়েছেন নাম বিশেষজ্ঞ। না, নিউমেরিলজিস্ট নয় একেবারেই। বরং এঁরা সদ্যোজাতের নাম রাখেন রীতিমতো পেশাদারিত্বের সঙ্গে। তার জন্য নেবেন পারিশ্রমিকও। আর সেই পারিশ্রমিকের অঙ্কটাও কিন্তু রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতোই।
আরও শুনুন: সমুদ্রের জলে যখন-তখন আয়েসি সাঁতার! বিলাসবহুল এই সৈকতে রাজার হালে থাকে বরাহবাহিনী
নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা টেলর এ. হামফ্রে। ৩৩ বছরের ওই তরুণীর পেশাই সদ্যজাতদের নাম রাখা। নতুন বাবা-মায়েদেরকে তাঁদের সন্তানের জন্য সেরা নামটাই খুঁজে দেন টেলর।
তাঁর ন্যূনতম মজুরিই শুরু হয় ১.১৪ লক্ষ টাকা থেকে। তার পর প্যাকেজ অনুযায়ী সেই দাম আরও চড়তে থাকে। কোনও কোনও বাবা মায়ের থেকে তো সাড়ে সাত লক্ষ টাকাও হেঁকে বসেছে টেলরের সংস্থা। ভাবছেন তো, এই প্যাকেজ ব্যাপারটা আবার কী? টেলর জানিয়েছেন, নতুন বাবা-মায়েদের জন্য বেশ কয়েকটি নামকরণের প্য়াকেজ রয়েছে তাঁর। সেখান থেকে নিজেদের সাধ ও সাধ্য মতো প্যাকেজটি বেছে নিতে পারেন তাঁরা। সব চেয়ে কম দামী প্যাকেজটির ক্ষেত্রে ফোনে নতুন বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে টেলরের সংস্থা। পরিবার, বংশতালিকা, এসবের বিষয়ে সবিস্তার জেনে নামের একটি সম্ভাব্য তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের কাছে। সেখান থেকে পছন্দসই নামটি বেছে নিতে পারেন বাবা-মায়েরা। এর উপরের প্যাকেজে বাবা-মায়ের ব্যবসা বা কাজের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হয়। সেই মতো বানিয়ে ফেলা হয় সম্ভাব্য নামের তালিকা।
আরও শুনুন: লম্বা লেজ কিশোরের, পরিবারের বিশ্বাস পুনর্জন্ম হয়েছে স্বয়ং বজরংবলীর
কোথা থেকে মাথায় এসেছিল এমন অভিনব ব্যবসার ভাবনা? সেটা সম্ভবত ২০১৫ সালের কথা। বহুদিন ধরেই নাম নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার নেশা টেলরের। সোশ্যাল মিডিয়ায় সদ্যোজাতদের জন্য পছন্দসই নামের তালিকা প্রকাশ করতেন টেলর। নেহাৎ শখেই। টেলর দেখলেন, অনেক মায়েরাই আসতেন টেলরের সাহায্য চাইতে। ছেলেমেয়ের নাম রাখতে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করতে চাইছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেই তাঁদের ছেলে-মেয়ের জন্য যোগ্য নাম খুঁজে দিতে সাহায্য করতেন টেলর। এ ভাবেই চলছিল। তবে ২০১৮ সাল নাগাদ হঠাৎই মাথায় আসে, এমন একটা ব্যবসা আরম্ভ করলে কেমন হয়! যেমনি ভাবা তেমনি কাজ।
ইতিমধ্যেই ব্যবসা রীতিমতো জমে উঠেছে টেলরের। বহু বাবা-মায়েরাই তাঁর কাছে আসছেন ছেলেমেয়ের যুৎসই নাম খুঁজে নিতে। গত বছর কম করে হলেও শতাধিক শিশুর নামকরণে সাহায্য করেছেন টেলর। হবেই বা না কেন! নাম বলে কথা। তা শেকসপিয়র যতই বলুন না কেন, ‘নামে কীই বা আসে যায়।’ নামে যে অনেক কিছুই আসে যায়, তা তো বুঝিয়ে দিচ্ছে টেলরের সংস্থার এমন বাড়বাড়ন্তই।