প্রেমপত্র লিখতেও আজকাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিতে হচ্ছে, এ কি আকাল নয়! কেজো জীবনের ব্যস্ততা, কেরিয়ারের সাপ-লুডো পেরিয়ে একটা দিন যদি প্রেমের জন্যই বরাদ্দ থাকে, তবে অসুবিধা কোথায়! অনেকেই একে আদিখ্যেতা বলেন। কিন্তু তা আসলে উদযাপন না করতে পারার হিংসা নয় তো? খতিয়ে দেখলেন চৈতালী বক্সী।
‘কার তাতে কী আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি!’ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেনটাইন্স ডে বা প্রেমদিবসের উদযাপনকে ‘আদিখ্যেতা’ বলে থাকেন অনেকেই। কোনও জিনিসের বাড়াবাড়ি কাম্য নয়, তবে এই অভিযোগের উত্তরে দু-কথা বলাই যায়। মানুষের হাতে সময়, মনে ইচ্ছা আর শরীরে স্ফূর্তি কমেছে। এটা জানার জন্য, আজ আর আলাদা করে তথ্য বা সমীক্ষার দরকার হয় না। তাও তর্কের খাতিরে বলি, সম্প্রতি ‘মর্ডার্ন লাভ রিসার্চ’ নামে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে শুধু ভারতেই প্রায় ৬২% মানুষ প্রেমপত্র লেখার জন্য AI অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেন। এটা যে শুধু সময়ের অভাবে তা কিন্তু নয়। বেশিরিভাগই প্রেমপত্র লেখার মত এনার্জি পান না, মোদ্দা কথা ইচ্ছের অভাব। কালীদাসের দেশে প্রেমপত্র লিখতে কৃত্রিম বুদ্ধির সাহায্য নিতে হচ্ছে, এটা কি আকাল নয়! তাই যদি একটা দিন প্রেম সংক্রান্ত অনুভুতিগুলিকে খানিক ডানা মেলার জন্য জায়গা করে দেওয়া যায়, অসুবিধা কোথায়!
আরও শুনুন: ঘৃণা পেরিয়ে ভালবাসা, সিনেমা থেকে রাজনীতিতে কি বদলের নতুন হাওয়া?
১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘ন্যাকামো’ বা ‘আদিখ্যেতা’ বলে দেগে দেওয়াটা কি খুব দরকারি!
সকালে উঠে কোনও একদিন, পাড়ার মোড়ে ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ শুনতে পেলে খুব খারাপ লাগবে! বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেককেই বলতে বা লিখতে দেখা যায় যে, প্রেমের জন্য বিশেষ কোনও দিন হয় না, রোজই প্রেমের দিন। সে নয় মানা গেল। কিন্তু এ-ও তো সত্যি যে, প্রতিদিন একই ভালবাসা নিয়ে প্রেমিকের চোখে চাইতে পারে না কেউ; ট্রাফিক জ্যাম, ইএমআই, মান্থলি টার্গেট ইত্যাদি তাড়া করে বেড়ায়। তার মধ্যে এমন দিনও আছে যেদিন প্রিয় মানুষটার মুখও দেখতে হয়তো ইচ্ছা করে না। এসবের মাঝেই প্রেমদিবসকে একটা অজুহাত ভেবে নিতে অসুবিধা কোথায়! টিচার্স ডে, মাদার্স ডে যেমন রোজ হয় না তেমনই হয় না জন্মদিনের সেলিব্রেশনও!
আরও শুনুন: Audio Blog: চিরন্তন প্রেমের কাহিনি… উপকথার প্রেমের গল্প ছাপা হল নোটেও
তর্কের খাতিরে যদি কেউ বলেন, কারোর প্রেম বা প্রেমিকা আছে, তাই বলে এত লোক দেখানো আদিখ্যেতার কি আছে? তাহলে পালটা বলা যায়, একজন ‘লোকদেখানো’ প্রেমিক বা প্রেমিকা নেই বলেই কি হিংসে ঠিকরে ওঠে! সবটাই তো আসলে উদযাপন! ভাল থাকার উপায় খোঁজা আর সেটা নিয়েই আনন্দ করা। শুধু ভ্যালেনটাইন্স ডে নয়, যে কোনও উদযাপনের সারকথা তো এটাই।