সেনাদের পোশাকবিধি পরীক্ষা করার ভার নাকি বর্তেছে একটি পেঙ্গুইনের উপর। অবাক হচ্ছেন তো? আরে, এ তো যে-সে পেঙ্গুইন নয়, সে যে রীতিমতো সেনা আধিকারিক। এমনকি স্যার উপাধিও পেয়েছে এই পেঙ্গুইনটি। শুনবেন নাকি এই আশ্চর্য পেঙ্গুইনের গল্প?
গোলগাল নাদুসনুদুস পেঙ্গুইন। দেখলে মনে হয় কালো কোট পরা উকিলবাবু। উড়তে পারে না, হেলেদুলে চলা দেখলেও মজাই লাগে। তবে এই পেঙ্গুইনটিকে দেখে যদি হাসিঠাট্টা করেন, তবে মজা নয়, উলটে বড়সড় শাস্তি পেতে পারেন আপনি। হাসা তো দূর, ইনি হাঁটলে তাঁর সামনে হাঁটার পর্যন্ত অনুমতি নেই কারও। কারণ ইনি কেবল পেঙ্গুইন মাত্র নন, ইনি একটা স্বাধীন দেশের সেনাবাহিনীর সম্মাননীয় আধিকারিক। এমনকি নাইটহুড তথা স্যার উপাধিও জুড়েছে এঁর পালকে।
আরও শুনুন: প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নাকি পঞ্চপাণ্ডব, দিনের অধিকাংশ সময়েই সমুদ্রে অদৃশ্য থাকে এই শিবমন্দির
ভাবছেন গল্পকথা? আজ্ঞে না। এক্কেবারে সত্যি। তাহলে শুনুন, স্যার নিলস ওলাভের গল্প।
নরওয়ের রাজার বিশ্ববিখ্যাত দেহরক্ষী বাহিনী কিংস গার্ড। একবার স্কটল্যান্ডে মিলিটারি কুচকাওয়াজে যোগ দিতে এসে কিংস গার্ড বাহিনীর লেফটেন্যান্ট নিলস ইগলিয়েন গিয়েছিলেন চিড়িয়াখানা দেখতে। আর সেই এডিনবরা চিড়িয়াখানার মুখ্য আকর্ষণ ছিল পেঙ্গুইন কলোনি। আসলে উত্তর গোলার্ধে এই চিড়িয়াখানাটিই প্রথম আন্টার্কটিকার বাসিন্দা পেঙ্গুইনকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছিল, এমনকি তার প্রজননও ঘটিয়েছিল। সেখান থেকেই একটি পেঙ্গুইনকে কিংস গার্ডের তরফে দত্তক নিয়েছিলেন নিলস ইগলিয়েন। তাঁর নাম এবং স্কটল্যান্ডের তখনকার রাজা পঞ্চম ওলাভ-এর নাম জুড়ে পেঙ্গুইনটির নামকরণ করা হয় নিলস ওলাভ। সে হয়ে ওঠে কিংস গার্ডের ম্যাসকট।
আরও শুনুন: মানুষ প্রায় নেই বললেই চলে! এই দ্বীপে বসবাস কয়েক হাজার বিড়ালের
আঠেরো শতকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে প্রথম দেখা গিয়েছিল পশুপাখিকে ম্যাসকট করার প্রথা। সেই পরম্পরা অনুসরণ করেই এহেন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নরওয়ে। তবে ভবিষ্যতে সম্মান আর মর্যাদার নিরিখে অন্য সব ম্যাসকটদের ছাড়িয়ে যায় এই পেঙ্গুইনটি।
১৯৭২ সালে দ্বিতীয়বার তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন কিংস গার্ডের আধিকারিকেরা। সঙ্গে ছিল তার চাকরির নিয়োগপত্র। কিংস আর্মিতে ল্যান্সকর্পোরাল পদে যোগ দেয় নিলস ওলাভ। তার ডানদিকের ডানায় বেঁধে দেওয়া হয় পদমর্যাদার ব্যাজ। তবে নরওয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি তার। এডিনবরা চিড়িয়াখানাতেই থাকত সে, আর সেখানেই নিয়মিত বেতন আসত তার নামে। দশ বছর বাদে কর্পোরাল, এবং আরও পাঁচ বছর বাদে সার্জেন্ট পদে প্রোমোশন হয় পেঙ্গুইন ওলাভের। বিদেশে সেনারা পোশাকবিধি মেনে চলছে কি না, তা নজরে রাখার ভারও বর্তেছিল তার উপরে।
সার্জেন্ট হওয়ার সুখ অবশ্য বেশিদিন ভোগ করতে পারেনি নিলস ওলাভ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই পদে কোনও না কোনও পেঙ্গুইনকে নিয়মমাফিক দত্তক নেয় কিংস গার্ড বাহিনী। তাদের সকলেরই নাম নিলস ওলাভ। ২০০৮ সালে আকাশছোঁয়া সম্মান জানানো হয় নিলস ওলাভকে। তাকে নাইটহুড উপাধি দেন নরওয়ের সম্রাট পঞ্চম হ্যারল্ড। লাল কার্পেটের উপর দিয়ে হেঁটে এসে ঠোঁটে কামড়ে নাইটের তরোয়াল গ্রহণ করে ওলাভ। আর ২০১৬ সালে সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত হয় সে। পেঙ্গুইন বাস্তবে উড়তে নাই পারুক, বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এই পেঙ্গুইনটির স্বপ্নের উড়ানকে অস্বীকার করবে কে!