শুধু সাধনাই শান্তির একমাত্র পথ নয়। কৃষিকাজ করেও সেই সুখ মেলে। বুঝিয়ে দিলেন সেই যুগল। গ্যাজুয়েট থেকে বড় চাকরি। সবকিছু ছেড়ে দিয়ে মধ্যপ্রদেশের গ্রামেই বসবাস। সেখানেই চাষাবাস করে দিন চলে তাদের। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কুম্ভে ভাইরাল ‘আইআইটি বাবা’। কেউ কেউ বলছেন, তিনি নাকি থ্রি-ইডিয়টসের ফারহান! যে কিনা ইঞ্জিনিয়ারের ডিগ্রিতে নিজেকে বন্দি না করে, নিজের ভালো লাগার বিষয়কেই পেশা করতে পেরেছিল। অনেকেই তা পেরে ওঠেন না। নানা সামাজিক চাপের মুখে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে বলি দিতে হয়। সিনেমার চরিত্র তাই যেন অনেকের গোপন বাসনাকে অনত পর্দায় মুক্তি দিয়েছিল। ‘আইআইটি বাবা’ ওরফে অভয় সিং-এর মধ্যেও যেন সেই ছায়া। যিনি প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় শীর্ষে পৌঁছেও, শেষ পর্যন্ত নিজের পছন্দের ক্ষেত্রে পৌঁছতে পেরেছেন। আধ্যাত্মিকতার পথে তাঁর পথচলা আসলে অনেককে মনে করিয়ে দিয়েছে যে, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার ধরাবাঁধা রাস্তার বাইরেও নিজেকে আবিষ্কার বা পুনরাবিষ্কারের পরিসর আছে। অভয় সিং যেমন এই পথে শান্তি পেয়েছেন, ঠিক তেমনই কৃষিতে তৃপ্তি খুঁজেছেন সাক্ষী ভাটিয়া, অর্পিত মাহেশ্বরী। দু’জনেরই পড়াশোনা আইআইটি-তে। উচ্চপদে চাকরিও করেছেন। শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছেন প্রকৃতির সখ্য।
:আরও শুনুন:
চাকরি ছেড়ে সন্ন্যাস! শুধু কুম্ভে নয়, দেশজুড়ে রয়েছেন আরও IIT গ্র্যাজুয়েট সাধু
‘আইআইটি বাবা’ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁর ভালো লাগত দর্শন-চর্চা। সক্রেটিস, প্লেটো পড়তেন। পরে ডিজাইনিং নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনাও করেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জীবনের অর্থ খুঁজতে খুঁজতে চলে আসেন আধ্যাত্মিকতার পথে। দেখা যাচ্ছে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার যে চেনা ছক তা তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। আর তাই শিক্ষার বিবিধ ক্ষেত্রে তাঁর আনাগোনা। প্রায় একই রকম ভাবে, সাক্ষী ও অর্পিতও নিজেদেরকে এই গণ্ডিতে আবদ্ধ করে রাখেননি। তাঁদের জীবনের গল্পও যেন অন্য এক অনুসন্ধানের কথাই বলছে। দু’জনেই আইআইটি থেকে পড়াশোনা শেষে চাকরি পেয়েছিলেন। মার্কিন মুলুকে চাকরিও করেছেন। কিন্তু এই বস্তুগত সাফল্য তাঁদের তৃপ্তি দিতে পারেনি। অন্য কিছু একটার খোঁজ করছিলেন। তাই ফিরে আসেন দেশে। মধ্যপ্রদেশের ছোট্ট একটা গ্রামে বসবাস শুরু করেন। গড়ে তোলেন একটি কৃষিক্ষেত্র। এমনকী নিজেদের জন্য তাঁরা একটি মাটির বাড়ি তৈরি করে বাস করতে শুরু করেন। আর তাতে তাঁদের উপলব্ধি হল, ‘জয়েন্টে র্যাঙ্ক করার থেকেও মাটির বাড়ি তৈরি করা শক্ত কাজ’। জীবনে প্রাচুর্য, বৈভব, বিলাস সবকিছুই দেখেছেন তাঁরা। আর বুঝেছেন যে, অতি সাধারণ জীবনযাপনের মধ্যে যে তৃপ্তি, তা অন্য কোথাও নেই। সবথেকে বড় কথা, প্রকৃতির নিবিড় সাহচর্যে থাকা। তাই ফিরে গিয়েছেন কৃষিভিত্তিক জীবনে।
তাঁদের এই জীবনযাপন যেন অনেকটা আশ্রমিক জীবনের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। প্রকৃতির সখ্য আর জ্ঞানের অন্বেষণের মধ্যে যেখানে বিরোধ ছিল না কোনওকালেই। নাগরিক আধুনিকতায় হয়তো সেই ধারণায় কোপ পড়েছে। আর তার দরুন মানুষ প্রভূত অর্জন, উপার্জনের পরেও যেন তৃপ্তি পাচ্ছেন না। তাই অন্য জীবনের খোঁজে প্রত্যাখ্যান করছেন ডিগ্রিভিত্তিক উন্নতিকে। এই দম্পতি যেমন কৃষিতেই জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছেন। সেটিকেই তাঁদের বর্তমান পেশা করে নিতে পেরেছেন। আবার আধ্যাত্মিক পথকেই নিজের গন্তব্য ভেবেছেন অভয় সিং তথা ভাইরাল আইআইটি বাবা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জীবনে উন্নতির একটা রাস্তাকেই চিনিয়ে থাকে। তবে তার বাইরেও যে অন্য জীবন থাকতে পারে, এই গল্পগুলো যেন তারই প্রমাণ। তবে, নিজের ইচ্ছেমতো রাস্তা কি সকলে বেছে নিতে পারেন? বহু ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয় না। সিনেমা যা-ই দেখাক না কেন, চাইলেও অনেকে ফারহান হতে পারে না। আর তাই চেনা ছকে ব্যতিক্রম চোখে পড়লে তা চর্চায় উঠে আসে। ভাইরাল আইআইটি বাবা কিংবা এই যুগলের গল্প যেন সেই তিক্ত বাস্তবই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।